রঘু ডাকাতেরা এখন গল্পে থমকে।
কিন্তু ডাকাতি করতে আসার হুমকি দেওয়া চিঠি? হ্যাঁ, এখনও আসছে। তবে তাদের ডাকাত বলতে রাজি নয় পুলিশ। দাবি, এ নেহাতই কোনও ছিঁচকে চোরের কারবার।
কল্যাণী শিল্পাঞ্চলের ছিঁচকে চোরেরা এখন চুরির পরে চিঠি দিয়ে উর্দুতে তাদের মন্তব্যও লিখে যাচ্ছে। তবে তাতে ঠিক কী লেখা আছে তা অবশ্য উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই চিঠি পাঠোদ্ধার তাই ভাষা বিশারদ ডাকার কথা ভাবছে পুলিশ কর্তারা।
কল্যাণীর বি-১৪/৭১ বাড়ির মালিক রেখা কর পুলিশের কাছে অভিযোগ জানান, গত ৩ ডিসেম্বর তাঁর বাড়িতে চুরি হয়। বাড়ির দরজায় একটি ইটের টুকরোয় লাল কালিতে লেখা দু-পাতার চিঠিটি মুড়িয়ে রেখে যায় কাউকে উদ্দেশ্য করে। পুলিশ তখন আমল দেয়নি বিষয়টায়। রেখাদেবী বা তাঁর মেয়ে অমিতা চিঠির মধ্যে কিছু ফুলের পাপড়িও দেওয়া ছিল বলে জানান। তদন্তকারী অফিসারেরা অবশ্য এর কোনও কিনারা করতে পারেননি।
রেখাদেবীর অভিযোগ, ‘‘৪ ডিসেম্বর, মঙ্গলবার অভিযোগ জানালেও পুলিশ প্রায় তিন দিন ঘুরিয়ে শুক্রবার ডায়েরি নেয়। কিন্তু তারপর থেকে যতবারই চিঠির বিষয়টি জানতে থানায় যাচ্ছি, চুরির কিনারা হল কি না জানতে চাইছি, আমাদের ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।”
রেখাদেবীর মতো নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন কল্যাণীর হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ বিজনবিহারী রথও। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের কর্মী সুদীপ্ত ঘোষ। ওই দু-জনের বাড়িতে চুরির কিনারা না হয় হোক, কিন্তু ওই বিজাতীয় ভাষায় সেখা চিঠি এসেছে ওই দু-জনেরও কাছে। ছেঁড়া কাগজে ওই চিঠি দিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে বি-৪/২২৩-এ জগতবন্ধু মণ্ডলের বাড়িতেও। পুলিশ জানাতে পারেনি ছেঁড়াখোঁড়া ওই কাগজটিতে কী লেখা ছিল। তবে বাড়ির সামনে টুকরো চিঠির রহস্য ভেদ করা যায়নি। চিঠির কিনারা করতে না পেরে পুলিশ এখন পিছু হটছে বলে কল্যাণীর ওই পরিবারগুলির দাবি। পুলিশ অবশ্য চুরির সঙ্গে চিঠির সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নেই বলে দাবি করেছে।
এমনিতেই কল্যাণীতে চুরি হয় বেশি। ফাঁকা জায়গা, অসংখ্য রাস্তা আর এলাকার লোকজনের পারস্পরিক যোগাযোগ কম থাকার জন্য পুলিশ নজরদারি যতটা আঁটোসাঁটো হওয়া দরকার তা নেই। তার উপর রুগ্ন শিল্পাঞ্চলে বন্ধ কারখানাগুলো থেকে চোরাই জিনিসপত্র পাচারের ক্ষেত্রে পুলিশের একাংশের বিরুদ্ধেই কমিশন নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। গত এক সপ্তাহেই তিনটি চুরির ঘটনা ঘটেছে। নদিয়ার এক পুলিশ কর্তার কথায়, ‘‘রাজনৈতিক মদত থাকলে চুরি-ছিনতাই রোখা যায়! যে এলাকার লোকজন চুরি-ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত বলে আমাদের সন্দেহ সেখানে পুলিশি অভিযান হলেই সাসক দলের পক্ষ থেকে বাধা দেওয়া হচ্ছে। নিজেদের ভোট ব্যাঙ্ক বাঁচাতে ওই এলাকার বাসসিন্দাদের এখন রক্ষা করছে রাজনীতির দাদারা। পুলিশ কী করবে বলুন তো!”
কল্যাণীর এসডিপিও চন্দ্রশেখর বর্ধন বলেন, ‘‘তদন্তের স্বার্থে আমরা ওই চিঠি দেখাতে পারব না। নজর রাখা হচ্ছে প্রতিটি চুরির ঘটনার উপরেই নজরদারিও বাড়ানো হয়েছে।’’ |