নতুন বৌমাকে বুকে আগলে রেখেছেন শাশুড়ি
দ্য স্বামী হারিয়েছেন তিনি। দুর্নিবার সেই শোকের সঙ্গেই রয়েছে নববধূকে কুসংস্কারের ছোবল থেকে রক্ষার দুরূহ কর্তব্যও। সেই অগ্নিপরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে নজির গড়লেন সদ্য বিধবা নিরক্ষর প্রৌঢ়া মল্লিকা হালদার।
মুর্শিদাবাদের লালগোলার কৃষ্ণপুরের মল্লিকাদেবীর বড় ছেলে পরিমল হালদারের বিয়ে ছিল রবিবার রাতে। নদিয়ার হাঁসখালির বগুলা রামনগরের সুলেখার সঙ্গে বিয়ের পরে সেই রাতেই লালগোলা ফিরছিলেন নব দম্পতি ও বরযাত্রীরা। তখনই ভোরে ধুবুলিয়ার কাছে ঘাটেশ্বরে বরযাত্রীদের একটি গাড়ির সঙ্গে একটি লরির ধাক্কা লাগে। তাতেই মারা যান মল্লিকাদেবীর স্বামী পলানচন্দ্র হালদার-সহ ৮ জন। সোমবার সকালে সারা গ্রাম ভেঙে পড়ে তাঁদের বাড়ি। ওই সময়েই কৃষ্ণপুরে পৌঁছয় নবদম্পতির গাড়ি। মল্লিকাদেবী কিন্তু তখন সব থেকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলেন তাঁর পরিবারের নববধূকেই। সেই তরুণী যাতে অসহায় বোধ না করেন, কোনও দুর্ভাবনায় না পড়েন তাই তাঁকে তিনি বুকে জড়িয়ে সেই ভিড়ের মধ্যেই হেঁকে বলেছিলেন, “নতুন বৌকে বুলুর বাড়ি নিয়ে যাও। ভিড় কমলে বাড়ি ফিরবে।”
বুলু মল্লিকাদেবীর বোন। তিনি নিজে তো বটেই, হালদার পরিবারের ঘনিষ্ঠ আত্মীয় স্বজনেরাও সেই সময় সুলেখাকে চারপাশ থেকে ঘিরে রাখেন। বিবাহসূত্রে সদ্য যে পরিবারের সঙ্গে তাঁর আত্মীয়তা হয়েছে, তার এই শোক তাঁর আনন্দ ম্লান করে দিয়েছে ঠিকই, কিন্তু তা যেন তার অতিরিক্ত কিছু না করে, সে দিকে ছিল শাশুড়ির নজর। তাঁর দেওর হারাধন হালদারও নববধূর যত্নের দিকে নজর রাখতে শুরু করেন। সুলেখার দেওর সুজয় হালদার বলেন, “ওই দিন বিকেলে বৌদিকে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়েছিল। শেষ বারের মতো বাবাকে দেখেছেন তিনি। তারপর থেকে বৌদি বাড়িতেই আছেন। আর কোথাও নিয়েযেতে হয়নি। মা, দুই দিদি ও আমরা সবাই সতর্ক রয়েছি। আমরা কখনও বৌদিকে একা রাখছি না।”
নববধূকে ঘিরে রয়েছেন শ্বশুরবাড়ির লোকজন। —নিজস্ব চিত্র।
মল্লিকাদেবীর সোজা কথা, “দুর্ঘটনা তো দুর্ঘটনাই। আমার বৌমার বদলে আমার মেয়ের কপালে যদি এমন ঘটনা ঘটত, তখন?” তাঁর কথায়, “আমার বৌমা যাতে সমস্যায় না পড়ে, সে দিকে তো আমাকেই নজর রাখতে হবে।” তাঁর কথায়, “ওর শ্বশুর বেঁচে থাকলে তিনিও তাই করতেন। বৌমা এখন পরিবারের সদস্য। তাই দুঃখ সে ভাগ করে নেবে ঠিকই, তবে তার জন্য তাকে কেউ দুঃখ দেবে, এটা আমাদের পরিবার কেউ সহ্য করবে না।” সুলেখা দেবীর স্বামী পরিমলবাবু বলেন, “এত দুঃখের মধ্যেও আমার মা বোন ভাই-এর জন্য আমার গর্ব হচ্ছে। এ রকম পরিস্থিতিতে নতুন বৌ যাতে বিড়ম্বনায় না পড়ে, সে দিকে তারা পুরো খেয়াল রাখছে।” পেশাদার বাচিক শিল্পী পীতাম্বর সারেঙ্গির বাড়ি পরিমলবাবুর দু’টি বাড়ি পরে। পীতাম্বর ও স্থানীয় আর এক যুবক সারজামান শেখ বলেন, “বাংলাদেশের পাড় লাগোয়া সীমান্ত শহর লালগোলা চোরাচালান ও কূসংস্কারের কারণে রাজ্য জুড়েই কূখ্যাত। নিরক্ষরতা, দারিদ্র আর কুসংস্কারময় এ রকম একটি প্রত্যম্ত এলাকার সদ্য স্বামীহারা প্রৌঢ়া তাঁর সদ্য পরিণীতা পুত্রবধূরকে যে ভাবে আগলে রেখেছেন, তা এক কথায় অভূতর্পূব। নিরক্ষর মল্লিকাদেবীর ওই ভূমিকায় আমরা লালগোলার লোকজন জন্য সত্যিই গর্বিত।” গর্ব করার মতো আরও সম্পদে সমৃদ্ধ মল্লিকাদেবী। উচ্চ-মাধ্যমিকের ছাত্রী সুলেখাদেবীকে টেস্ট পরীক্ষা দেওয়ার পরে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয়েছে। এ বার উচ্চ-মাধ্যমিক। সুলেখা বলেন, “আমার শাশুড়ি ও স্বামী-সহ শ্বশুর বাড়ির সবাই আমকে মন দিয়ে পড়তে বলেছেন। তাঁরা সবাই বলেছেন, সব কিছু ভুলে গিয়ে আমি এমন ভাবে পড়ি যাতে পরীক্ষায় ভাল রেজাল্ট হয়!” তাঁদের পরীক্ষায় সসম্মানে শাশুড়ি-ননদরা উত্তীর্ণ। এ বার পরীক্ষা পাশের পালা বৌমার!



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.