বাগান সদস্যের মৃত্যু
তড়িঘড়ি মোহনবাগানকে শাস্তি দিতে চাইছে না ফেডারেশন
ডার্বি ম্যাচ থেকে দল তুলে নেওয়ার জন্য নিয়মানুযায়ী আড়াই বছরের নির্বাসন অনিবার্য। কিন্তু ব্যক্তিগত সখ্যকে কাজে লাগিয়ে ফুটবলমাঠের ভয়ঙ্করতম শাস্তি থেকে মুক্তি পাওয়ার চেষ্টা শুরু করে দিলেন মোহন কর্তারা। এবং যুবভারতীর কলঙ্কিত ম্যাচের তিন দিন পরে ফেডারেশন প্রেসিডেন্ট প্রফুল্ল পটেল বুধবার যা বলেছেন, তাতে আপাতত স্বস্তি পেতে পারেন শতাব্দী প্রাচীন ক্লাবের সদস্য-সমর্থকরা। যাদের একাংশ মঙ্গলবারও সকাল থেকে সন্ধ্যা উৎকণ্ঠা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলেন ক্লাব তাঁবুতে।
ক্লাব নির্বাসনে চলে যেতে পারে এই আশঙ্কায় এ দিন ভোরে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন এক প্রবীণ মোহনবাগান সদস্য প্রদীপ বসু। অন্তত তাঁর ছেলে রণদীপ বসুর দাবি সে রকমই। ক্লাব তাঁবুর একটি চেয়ারে নিয়মিত বসতেন প্রদীপ ওরফে পিন্টু। সোমবার বিকেলেও আসেন। এক সময় বাগান ফুটবল টিমের সহকারী ম্যানেজারও ছিলেন বছর বাষট্টির এই ক্লাব-অন্তপ্রাণ মানুষ। রণদীপ বললেন, “বাবা রবিবারের পর থেকেই প্রচণ্ড চিন্তিত ছিলেন নির্বাসনের কথা ভেবে। গতকাল সারা দিন বলছিলেন সে কথা। ক্লাব নিয়ে পাগল ছিলেন।”
প্রদীপবাবুর মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা পর দিল্লির সংসদে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রফুল্ল পটেল অবশ্য বলে দিলেন, “রবিবারের ঘটনা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। তবে কলকাতায় অনেক আন্তর্জাতিক ম্যাচ হয়। তাই তাড়াহুড়ো করে আমরা সিদ্ধান্ত নেব না। আগে ম্যাচের সব রিপোর্ট খতিয়ে দেখা হবে। তার পর সিদ্ধান্ত।” করিম বেঞ্চারিফার দলের নির্বাসনে যাওয়া যাঁর সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করছে, সেই প্রফুল্লের কথার ইঙ্গিতে পরিষ্কার, ধীরে চলো নীতি নিচ্ছে ফেডারেশন। শতাব্দীপ্রচীন ক্লাবের নির্বাসনের মতো স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে দ্বিধায় তারা।

মঙ্গলবার রাতে শিল্পমন্ত্রক অফিসে সে দিন যুবভারতীতে উপস্থিত ফেডারেশনের রেফারি কমিটির প্রধান গৌতম কর এবং আই লিগের সিইও সুনন্দ ধরের সঙ্গে আলোচনার পরেও তড়িঘড়ি সিদ্ধান্ত নিতে বারণ করেছেন প্রফুল্ল। শোনা যাচ্ছে, ১৫ ডিসেম্বর যুবভারতীতে মোহনবাগান-পৈলান অ্যারোজ আই লিগ ম্যাচ স্থগিত রাখা হতে পারে জটিলতা এড়াতে। দিল্লিতে এ দিন সংসদের কাজে গিয়েছিলেন মোহন সহ-সচিব সৃঞ্জয় বসু। সেখান থেকে ফিরে রাতে তিনি প্রফুল্লের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানান। বললেন, “ফেডারেশন প্রেসিডেন্ট ও সচিবের উপর আমাদের পূর্ণ আস্থা আছে। উনি সব খতিয়ে দেখুন। আমরা সে দিনের ঘটনার পেপার কাটিং, ছবি পাঠিয়ে জানিয়েছি, সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আমাদের কথা শুনুন। কী পরিস্থিতিতে টিম তুলে নিতে হয়েছে সেটা দেখুন।” ফেডারেশন প্রেসিডেন্টও বলেছেন, “সে দিন পুলিশের ভুমিকা কী ছিল, খেলার পরিস্থিতি ছিল কি না সেটা দেখা দরকার। আমরা সব কাগজপত্র দেখছি।” শোনা যাচ্ছে, ডার্বি ম্যাচের গণ্ডগোলের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে কমিটি গড়তে পারে ফেডারেশন।
শাস্তির ব্যাপারে যাতে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে না পারে ফেডারেশন, সে জন্য এ দিন সকালেই আইনজীবীদের চিঠি-সহ কুড়িটি পেপার কাটিং, রহিম নবির রিপোর্ট, ম্যাচ কমিশনারের কাছে জমা দেওয়া রিপোর্টের ফটোকপি পাঠিয়ে দেন ক্লাব সচিব অঞ্জন মিত্র। চিঠিতে তিনি লিখেছেন, “দোষী সাব্যস্ত করার আগে আমাদের কথা শোনা হোক।” এ দিন নিজের যুক্তির স্বপক্ষে ২০০১-এর আইএফএ শিল্ড ফাইনালে ব্রাজিলের পালমেইরাস-ইস্টবেঙ্গলের ভেস্তে যাওয়া ম্যাচের প্রসঙ্গ টেনে এনে মোহন-সচিব বলেন, “গণ্ডগোলে পালমেইরাস দল তুলে নেওয়ার পর চ্যাম্পিয়ন করা হয় ইস্টবেঙ্গলকে।” তাঁর কথায় পরিষ্কার, ফেডারেশনের সিদ্ধান্ত পছন্দ না হলে ক্লাবের নির্বাসন আটকাতে আদালতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি। আদালতের রাস্তা খোলা রাখার পাশাপাশি অঞ্জনের ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য, “আমাদের কাছে যা কাগজপত্র আছে তাতে সে দিন যে খেলার মতো পরিস্থিতি ছিল না, সেটা পরিষ্কার। পুলিশের রিপোর্টও তো শুনছি তাই বলছে। ফেডারেশন নিশ্চয়ই আমাদের দাবি মেনে সঠিক সিদ্ধান্ত নেবে।”
আইনে শাস্তির নিদান থাকলেও দৌত্যের মাধ্যমে বাঁচতে চাইছে মোহনবাগান। ফেডারেশনও সিদ্ধান্ত ঝুলিয়ে রাখার ইঙ্গিত দিচ্ছে। এটা বুঝে এ দিন ফেডারেশনকে চিঠি পাঠিয়েছে ইস্টবেঙ্গল। লেখা হয়েছে, ডার্বি ম্যাচ নিয়ে ফেডারেশন কী সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, দ্রুত জানানো হোক। কিন্তু পরিস্থিতি যে দিকে গড়াচ্ছে, তাতে মোহনবাগান নিয়ে সিদ্ধান্ত খুব তাড়াতাড়ি হবে বলে মনে হচ্ছে না।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.