মাসখানেক চুপ থাকার পর মোহিন্দর অমরনাথ আবার বোমা ফাটালেন! আবার মুকুট খুলতে বললেন অধিনায়ক ধোনিকে! নাগপুর টেস্ট শুরু হওয়ার আটচল্লিশ ঘণ্টা আগে পুণে-মুম্বই হাইওয়ে থেকে ফোনে আনন্দবাজারকে মোহিন্দর বললেন, “এখনই বরখাস্ত করা উচিত ধোনিকে। টিমে ও জায়গাই পায় না। নতুন অধিনায়ক হোক গম্ভীর।”
জাতীয় নির্বাচক পদ থেকে তাঁকে সরিয়ে দেওয়ার পর বেশ কিছু দিন চুপ ছিলেন মোহিন্দর। ধরে নেওয়া হচ্ছিল, এখুনি হয়তো বিতর্কে তিনি জড়াতে চান না। কিন্তু সোমবার রাতে পুণের এক ক্রিকেট অনুষ্ঠানে প্রথম তাঁকে আক্রমণাত্মক মেজাজে দেখা যায়। তার রেশ দেখা গেল আঠারো ঘণ্টা বাদেও রয়েছে। মোহিন্দর মঙ্গলবার সকালের ফোন-সাক্ষাৎকারে বলছিলেন, “যে দেশের অধিনায়কত্ব করবে, তাকে বাহিনীর সামনে দাঁড়িয়ে নেতৃত্ব দিতে হবে। সেই যোগ্যতা এক বছর ধরেই ধোনি হারিয়েছে।”
|
|
অমরনাথ চান: ধোনিকে তাড়াও, গম্ভীরকে আনো।
বেঙ্গসরকর চান: ধোনিকে রাখো, গম্ভীরকে এনো না।
দু’জনেই চান: ফ্লেচারকে তাড়াও। |
|
কিন্তু যে এক বছরের কথা বলছেন, সেই সময়ের মধ্যে মোহিন্দর তিনিও তো ছিলেন নির্বাচক। তখন সরাননি কেন? মোহিন্দর জবাব দেন, “আমি এখন ফ্রি মানুষ। যা ইচ্ছে বলতে পারি। কিন্তু ওই সময়টা নিয়ে কিছু জিজ্ঞেস করবেন না। যে সময়টা চুক্তি বদ্ধ ছিলাম, তার ভেতরকার কথা বলব না।” বলা হল, সবাই জানেন নিউজিল্যান্ড সিরিজের আগে আপনার নেতৃত্বে চার নির্বাচক ধোনিকে সরাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু চেন্নাইয়ের সেই বৈঠকে নাকি বোর্ডের আইনের বই হাতে নিয়ে সটান এসে হাজির হন বোর্ড প্রধান শ্রীনিবাসন। পরিষ্কার বলে দেন, ধোনিকে সরানো হলে সেই সিদ্ধান্তে তিনি সই করবেন না। আর তিনি সই না করলে সিদ্ধান্তটাই বেকার হয়ে যাবে।
সমবেত বিদ্রোহের নেতৃত্ব দেওয়া মোহিন্দরকে এ জন্যই আর নির্বাচক পদে রাখা হয়নি। এই কথাটা কি সত্যি?
“বোর্ড প্রধান নিয়ে যে সব বললেন, আমি সেটা নিয়ে কিছু বলতে চাই না। তবে এটুকু বলি, আমার জীবনে সিম্পল নীতি মেনে চলেছি। যা বুঝেছি সত্যি, সেটা সরাসরি বলেছি। তাতে আমার কী ক্ষতি হতে পারে পরোয়া করিনি,” বললেন অমরনাথ। কিন্তু এ নিয়ে জীবনে কত বার তাঁর চাকরি গেল? মোহিন্দর হাসেন, “কেয়া করে, মেরা জিন্দেগি অ্যায়সা হ্যায়।”
আর ভারতীয় কোচ ডানকান ফ্লেচারকে নিয়ে কী করা উচিত? মোহিন্দর বললেন, “কী আবার করা উচিত? এখুনি তাড়ানো উচিত। ফ্লেচার করেছেটা কী? আর আমাদের কোচদের এখুনি ফেয়ার অ্যান্ড লাভলি মাখা উচিত, যাতে গায়ের রংটা ফর্সা হয়। যাতে ওরা কোচের চাকরিটা পায়।”
পুণে-র অনুষ্ঠানে মোহিন্দরের সঙ্গে হাজির ছিলেন তাঁর সহ খেলোয়াড় দিলীপ বেঙ্গসরকর। বেঙ্গসরকরের আরও একটা পরিচয়, তিনিই ধোনিকে প্রথম ভারত অধিনায়ক বাছেন। ভারতীয় ক্রিকেটের যে টালমাটাল সময়ে গত নির্বাচক কমিটির সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য মুখ মোহিন্দর এবং পূর্বাঞ্চলের রাজা বেঙ্কট ধোনির ‘গদি ধরে মারো টান’ আওয়াজ তুলছেন, তখন বেঙ্গসরকর অন্য পথে। তিনি জানতেন না মোহিন্দরের সঙ্গে সুর মিলিয়ে এ দিন জাতীয় টিভি চ্যানেলে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রাজাও যে বলেছেন, “টেস্টে ধোনি বাদ যাক। ঋদ্ধিমান আসুক।” রাজার পছন্দের অধিনায়ক বিরাট কোহলি। |
|
‘ফ্লেচার করেছেটা কী? আর আমাদের কোচদের এখুনি ফেয়ার অ্যান্ড লাভলি মাখা উচিত,
যাতে গায়ের রংটা ফর্সা হয়। যাতে ওরা কোচের চাকরিটা পায়।’ |
|
রাতে মুম্বই থেকে বেঙ্গসরকর বলছিলেন, “জিমি দেখলাম স্টেপ আউটের মুডে আছে। কিন্তু আমি ক্রিকেটীয় যুক্তিতে বিশ্বাসী। আর সে যুক্তি বলে, এখনও ধোনিকে সরানোর সময় হয়নি। আমায় বলুন তো, ধোনিকে সরালে ক্যাপ্টেন হওয়ার মতো আছেটা কে? আগের নির্বাচক কমিটি তো কোনও ভাইস ক্যাপ্টেনকে তৈরিই করেনি। চার জনকে নানা সময় ঘুরিয়েছে।” বেঙ্গসরকর মনে করেন, যাঁরা হতে পারেন তাঁরা কেউ ফর্মে নেই। গম্ভীর যেমন তাঁর পছন্দের বিকল্প নন।
বেঙ্গসরকরের মতে আগের নির্বাচক কমিটির দূরদর্শিতার অভাব ভারতীয় ক্রিকেটকে দু’বছর পিছনে নিয়ে গিয়েছে। তবে ফ্লেচার-প্রসঙ্গে তিনি প্রাক্তন টিমমেটের সঙ্গে একমত। বলছিলেন, “আমি দেখে আশ্চর্য হয়ে গেলাম ফ্লেচার এসে হাজির হল প্রথম টেস্টের আগে। ক্যাম্প থেকে। অথচ ইংল্যান্ড এসেছে তারও দু’সপ্তাহ আগে। কোচ হিসেবে ওর তো উচিত ছিল সফরের প্রথম ম্যাচ থেকে ইংল্যান্ডকে মাঠে বসে দেখা। ওকে এখনই তাড়ানো হোক।” |