প্রবন্ধ ২...
ঘুরে না দাঁড়ালে পৃথিবী অবশ্যই ধ্বংস হবে
১ ডিসেম্বর পৃথিবী ধ্বংস হবে কি না, আরও ক’দিন তা নিয়ে জল্পনা চলবে। তার পর, তারিখটা পেরিয়ে যাবে। কিন্তু নটে গাছটি মুড়োবে না। কারণ, এমন আশঙ্কার যথেষ্ট কারণ আছে যে, এই গ্রহটি নিশ্চিত ধ্বংসের দিকে এগিয়ে চলেছে, যে সর্বনাশের কথা কোনও অতীতের ভবিষ্যৎদ্রষ্টার কেতাবে লেখা নেই, লেখা আছে ঘটমান বর্তমানের চোখে আঙুল দিয়ে দেখানো অগণিত সংকেতে। তাদের মধ্যে থেকে তিনটিকে বেছে নেওয়া যাক।
এ বছরের ৮ থেকে ১২ জুলাই, এই সময়পর্বে গ্রিনল্যান্ডের বরফপৃষ্ঠের ৯৭ শতাংশ গলে গিয়েছিল।
সেপ্টেম্বর মাসে জানা গেল, আর্কটিক সমুদ্রের বরফ রেকর্ড পরিমাণে কমে গিয়েছে, এতটাই যে চার বছরের মধ্যে একেবারেই তা গলে যেতে পারে।
নভেম্বর মাসের গোড়ায় খোদ আমেরিকায় আছড়ে পড়ল হ্যারিকেন স্যান্ডি যে ঝড় ও জলোচ্ছ্বাস নিউইয়র্ক নিউ জার্সি কখনও দেখেনি। পরিণাম সর্বজনবিদিত।
এমন নানান সংকেত যত বার পাওয়া গিয়েছে, তত বারই তার পশ্চাদ্বর্তী বিপদটির কথা শুনেছি আমরা। তার নাম বিশ্ব উষ্ণায়ন। কত বড় সেই বিপদ, তাকে নিবারণের জন্য গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণের মাত্রা কমিয়ে আনা কত জরুরি, তা আমরা এখন জানি। অথচ বিপদ নিবারণের সত্যিকারের উদ্যোগ কতটুকু হচ্ছে? ২৬ নভেম্বর থেকে ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৩ দিন ধরে পশ্চিম এশিয়ার কাতার নামক দেশটির রাজধানী দোহায় জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে বার্ষিক সম্মেলন হয়ে গেল। আরও এক বার দেখা গেল, ১৯৪টি দেশের প্রতিনিধিরা উষ্ণায়ন ঠেকাতে কোনও কার্যকর সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারলেন না। এমন কোনও নিশ্চয়তা পাওয়া গেল না যে, পৃথিবীর কার্বন নিঃসরণ কমবে, এমনকী নিয়ন্ত্রিত হবে।
এই ব্যর্থতার একটা বড় কারণ, গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ কমানোর জন্য ধনী দেশগুলি যথেষ্ট দায়িত্ব নিতে রাজি নয়। অনেকেরই মতে, এ ব্যাপারে বিশেষ করে অসহযোগী হল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তারা কিয়োটো প্রোটোকল অনুমোদন করেনি, অর্থাৎ নিজেদের গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণের মাত্রা বেঁধে দেওয়ার কোনও দায়বদ্ধতা স্বীকার করেনি। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে দরিদ্র দেশগুলির যে সমস্যা হচ্ছে এবং হবে, তার মোকাবিলায় তাদের কতটা আর্থিক সাহায্য করবে, সে ব্যাপারেও ওয়াশিংটনের কাছে কোনও নির্দিষ্ট প্রতিশ্রুতি পাওয়া যায়নি। দোহাতেও দেখা গেল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ধরি মাছ না ছুঁই পানি অবস্থান নিল। এটা দুর্ভাগ্যজনক।
এটা আরও বেশি দুর্ভাগ্যজনক এই কারণে যে, প্রেসিডেন্ট ওবামা তাঁর রাজনৈতিক প্রচারে প্রতিদ্বন্দ্বী মিট রোমনির তুলনায় অনেক বেশি পরিবেশবান্ধব অবস্থান নিয়েছিলেন। তার রাজনৈতিক পরিপ্রেক্ষিতটিও খেয়াল রাখা দরকার। গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণের পিছনে বড় ভূমিকা রয়েছে তেল, গ্যাস ও কয়লার মতো জীবাশ্ম-জ্বালানি পোড়ানোর। ফলে এই শিল্পগুলি চায় না, জলবায়ু পরিবর্তন রোধ করার জন্য জ্বালানি ব্যবহারের উপর কোনও নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হোক। ঘটনা হল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তেল, গ্যাস ও কয়লা শিল্পের সঙ্গে রিপাবলিকানদের আঁতাঁত ডেমোক্র্যাটদের চেয়ে অনেক বেশি। স্বভাবতই মার্কিন জ্বালানিশিল্প রোমনির হয়ে প্রচারে তেড়েফুঁড়ে নেমে পড়েছিল। তেল, গ্যাস ও কয়লা শিল্পের কর্তারা নির্বাচনে ওবামাকে হারাতে বদ্ধপরিকর ছিলেন।
তা সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত ওবামা জয়ী হয়েছেন। তার পিছনে নানা কারণ আছে। কিন্তু এই জয়ের ফলে অন্তত মার্কিন রাজনীতিতে জ্বালানি লবির চাপ কিছুটা কমবে। পাশাপাশি, দেশের মানুষের মধ্যেও পরিবেশ রক্ষার জন্য জ্বালানি ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের একটা চেতনা তৈরি হয়েছে। ৭০ ভাগ মার্কিন নাগরিক মনে করেন, নবীকরণযোগ্য শক্তি উৎপাদনে সরকারের সাহায্য করা দরকার। বায়ু ও সৌরশক্তি এরই মধ্যে সে দেশে মূল স্রোতের অঙ্গ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। জলবিদ্যুৎ-সহ নবীকরণযোগ্য শক্তি থেকে এখন শতকরা ১৪.৩ ভাগ বিদ্যুৎ পাওয়া যায়। এ বছরের শেষে বায়ু বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ হয়ে চলেছে ৬০ হাজার মেগাওয়াট। সুতরাং জীবাশ্ম-জ্বালানির ব্যবহার কমিয়ে ‘ক্লিন এনার্জি’, বিশেষত সৌর বা জলবিদ্যুতের মতো শক্তির ব্যবহার কী ভাবে বাড়ানো যায়, সে জন্য প্রয়োজনীয় সুসংহত নীতি গ্রহণ করার সুযোগ রয়েছে ওবামার সামনে।
মার্কিন কংগ্রেসে এখনও রিপাবলিকান প্রাধান্য। তাই ওবামার পক্ষে কাজটা সহজ নয়। কিন্তু এখনও যদি গ্রিনহাউস গ্যাস কমাতে আমেরিকা গরজ না করে, নানা দেশকে নিয়ে নতুন উদ্যোগ গড়ে না তোলে, এ সুযোগ আর ফিরে আসবে না। পৃথিবীর কাছে আমেরিকার গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে হলে নিঃসরণ কমানোর কাজটিতে ঝাঁপিয়ে পড়তেই হবে। বছরে একটা করে জলবায়ু সম্মেলন করে লাভ নেই, যদি না বড় দেশগুলি কাজের কাজটা করে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.