|
|
|
|
বিহারে নয়া কারবার |
ঘণ্টা-দিনের হিসেবে ভাড়া বন্দুকের, হতবাক পুলিশ |
স্বপন সরকার • পটনা |
বাড়ি ভাড়া, গাড়ি ভাড়ার মতো বিহারে অস্ত্র ভাড়ার ব্যবসারও এখন রমরমা। এতদিন এই তথ্য পুলিশের অজানাই ছিল। সম্প্রতি ধৃত এক অপরাধীকে জেরা করতে গিয়ে এই তথ্য জানতে পেরে চোখ কপালে উঠেছে পুলিশের।
বিহারের রাজধানী পটনায় ঘণ্টার হিসেবে বা সারা দিনের জন্য ভাড়া দেওয়া হয় অস্ত্র। অপরাধ করে তা ফেরত দিলেই হলো। অস্ত্রের ভাড়া ঠিক হয় কোন মডেল, কত সময়ের জন্য ভাড়া নেওয়া হচ্ছে তার উপর। এই কারবার নাকি রমরমিয়ে চলছে বিহারে। পটনা পুলিশের নজর এড়িয়ে, তাদেরই নাকের ডগায় এতদিন রমরমিয়ে চলা এই কারবারের কথা জানতে পেরে খোদ ডিজিপিও বিব্রত। যদিও পুলিশ এখনও হদিশ পায়নি অস্ত্র কারবার চক্রের মূল পাণ্ডার। ডিজিপি অভয়ানন্দ বলেন, “এই কারবারের ব্যাপারে তদন্ত চলছে। মূল অপরাধীদের ধরার চেষ্টা চলছে। তবে এমন ব্যবসার কথা শুনে আমরা কিছুটা বিব্রত।”
সম্প্রতি নগেন্দ্র সিংহ নামে এক অপরাধী ধরা পড়েছে পুলিশের জালে। পটনার মনির থানায় তাকে জেরা করে পুলিশ সন্ধান পেয়েছে অস্ত্র কারবারের এই জগতের। পুলিশের দাবি, নগেন্দ্র জানিয়েছে দিকেশ সিংহ নামে এক ব্যক্তিই এই কারবারের মূল হোতা। তার সন্ধানে গিয়ে পুলিশকে হতাশ হতে হয়েছে। তবে দিকেশের দোতলা বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে পুলিশ বেশ কিছু অস্ত্র-সহ নানা বোরের ১২০টি গুলি পেয়েছে। নগেন্দ্র পুলিশকে এই কারবারের যে তথ্য দিয়েছে তাতে জানা গিয়েছে, সব রকম আগ্নেয়াস্ত্রই এখানে ভাড়া পাওয়া যায়।
কেমন সেই ভাড়া? বা কী ভাবে হয় এই ব্যবসার লেনদেন? পটনার গ্রামীণ এলাকার সাত্তর গ্রামের বাসিন্দা, নগেন্দ্র পুলিশকে জানিয়েছে, অস্ত্র ভাড়া নেওয়ার জন্য কিছু শর্ত থাকে। যে আগ্নেয়াস্ত্রটি ভাড়ায় নেওয়া হবে প্রথমে তার জন্য একটি মোটা অঙ্কের টাকা কারবারীর কাছে গচ্ছিত রাখতে হবে। তবেই পাওয়া যাবে নির্দিষ্ট অস্ত্রটি। যেমন, কেউ যদি কার্বাইন জাতীয় অস্ত্র নিতে চায় তাকে গচ্ছিত রাখতে হবে ২৫ হাজার টাকা। কেউ যদি দেশি পিস্তল নেয় তাকে রাখতে হবে এক থেকে দেড় হাজার টাকা। তবে শর্ত হল একদিনের বেশি এই অস্ত্র ভাড়া দেওয়া হয় না। কারণ, পুলিশের কাছে ধরা পড়ার সম্ভাবনা। যদি অস্ত্রের কোনও ক্ষতি হয় তা হলে ক্ষতির পরিমাণ অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ গচ্ছিত টাকা থেকে কেটে নেওয়া হয়। এর সঙ্গে রয়েছে ভাড়া। ঘন্টাওয়াড়ি ও দিনভর ভাড়ার হার দু’রকম। দেশি পিস্তল ২-৩ ঘণ্টার জন্য ভাড়া নিলে পড়বে ২০০ টাকা। সারাদিনের জন্য ৫০০ টাকা। সারা দিনের জন্য দেশি ৯ এমএম পিস্তলের ভাড়া ১ থেকে ২ হাজারের মধ্যে। একই ভাবে দেশি রাইফেলের ভাড়া সারা দিনের জন্য ৫০০ থেকে ১০০০ টাকার মধ্যে।
এই অস্ত্র কারবারের ঘটনার তদন্তের জন্য রাজ্য পুলিশ একটি বিশেষ তদন্তকারী দল তৈরি করেছে। দলের প্রধান তথা দানাপুরের এসডিপিও এস কে সরোজের কথায়, ১৩ নভেম্বর নগেন্দ্রকে গ্রেফতারের পরে এই তথ্য সামনে আসে। তার কাছ থেকে একটি দেশি পিস্তল উদ্ধার করা হয়। খুনের চেষ্টায় গ্রেফতার হওয়া এই অপরাধী জেরায় পুলিশকে দিকেশের কথা বলে। এরপরেই পুলিশ দিকেশের বাড়িতে অভিযান চালায়। এসডিপিও বলেন, “তল্লাসি চালিয়ে দিকেশের বাড়ি থেকে অস্ত্র ছাড়াও, বিভিন্ন ধরণের বন্দুক পরিষ্কার করার সরঞ্জামও পাওয়া গিয়েছে। এতেই বোঝা গিয়েছে, এই সব অস্ত্র নিয়মিত ব্যবহার করা হয়।” পুলিশ জানতে পেরেছে ফেকু সিংহ নামে অন্য এক ব্যক্তি দামি আগ্নেয়াস্ত্রর কারবার চালাচ্ছে। |
|
|
|
|
|