|
|
|
|
ব্যর্থ শ্যালিকার বিয়ে ভাঙার চেষ্টা, হাজতে জামাইবাবু |
নিজস্ব সংবাদদাতা • শিলচর |
ভোর হতে না হতেই বাড়ি সরগরম। বরযাত্রীর তালিকায় শেষ বার চোখ বুলিয়ে নিচ্ছিলেন দীপক বারই। সবাইকে ঠিকঠাক বলা হয়েছে কি না, তা নিয়ে চিন্তার শেষ নেই পাত্র দীপকের। দীপক আর তাঁর বাবা শশীবাবুর মোবাইল বাজছে ঘনঘন। এমন সময় শশীবাবুর মোবাইলেই এল পাত্রী অপর্ণার বাবা বিশ্বনাথ বারইয়ের ফোন। কাঁদতে কাঁদতে বিশ্বনাথবাবু বলছেন, অপর্ণার ক্যানসার ধরা পড়েছে। সদ্য রিপোর্ট এসেছে মুম্বই থেকে। অতএব, বিয়ে পিছিয়ে দেওয়া হোক।
কাছাড় জেলার ধলাই থানার পুটিখালে দীপকের বাড়িতে মুহূর্তে যেন বাজ পড়ল। এক মাস আগে থেকে ঠিক হয়ে আছে, ১০ ডিসেম্বর তাঁর সঙ্গে অপর্ণার বিয়ে। বিমা কোম্পানির পদস্থ কর্মী দীপকের সঙ্গে অপর্ণার ইতিমধ্যে বেশ কয়েক বার ফোনে কথা হয়েছে। কোনও শারীরিক সমস্যার কথা তো ওঠেনি। তা হলে কখন ধরা পড়ল ক্যানসারের লক্ষণ, কখনই বা মুম্বই পর্যন্ত ব্যাপারটা গড়িয়ে গেল? তাঁরা কিছু জানলেন না!
তড়িঘড়ি শিলচরের ঘনিয়ালায় অপর্ণাদের বাড়িতে পৌঁছলেন শশীবাবু। সঙ্গে ছোট ছেলে অমিত এবং প্রতিবেশী ক’জন। বিশ্বনাথবাবু বললেন, কী ভাবে হঠাৎ ধরা পড়ল ক্যানসার। বললেন, দু’দিনের মধ্যে মেয়েকে মুম্বই নিয়ে যাবেন আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য। |
|
অপর্ণার জামাইবাবু অরুণকুমার চৌরাশিয়া (বাঁ দিকে) ও স্বামী দীপক বারই। —নিজস্ব চিত্র |
শশীবাবু অগত্যা অপর্ণাদের বাড়ি থেকেই ফোন করলেন দীপককে। সব শুনে দীপক বললেন, “আমার কপালে যা আছে, তা-ই হবে। ক্যানসার হলেও ওকেই বিয়ে করব। আজই। আমি ওর চিকিৎসার ব্যবস্থা করব।”
মধুরেণ সমাপয়েৎ এখানেই হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু হল না যে!
বাড়ির ভিতর থেকে উদয় হলেন অরুণকুমার চৌরাশিয়া অপর্ণার ভগ্নিপতি। গয়ায় বেশ ক’দিন তাঁর বাড়িতে ছিলেন অপর্ণা। বিচারপতির রায়ের ঢঙে জামাইবাবু জানালেন, এ বিয়ে হবে না। ক্যানসারে আক্রান্ত শ্যালিকার বিয়ে দিতে কোনও মতেই রাজি নন, সাফ কথা তাঁর।
সন্দেহ হয় শশীবাবু-অমিতদের। এ কেমন কথা! ক্যানসার জেনেও পাত্র বিয়ে করতে রাজি, তবু পাত্রীপক্ষের আপত্তি! তাঁরা চেপে ধরেন রিপোর্ট দেখবেন বলে। চৌরাশিয়াও দেখাবেন না। ততক্ষণে সহকর্মীদের নিয়ে পৌঁছে গিয়েছেন দীপক নিজেও। তাঁদের দেখে চৌরাশিয়া আরও রেগে আগুন। তিনি সকলকে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে বলতেই পাত্রপক্ষের ধৈর্যের বাঁধ ভাঙে। শুরু হয় বচসা, ক্রমে চৌরাশিয়ার সঙ্গে ধস্তাধস্তিও। শেষ পর্যন্ত চৌরাশিয়াকে থানায় টেনে নিয়ে যান দীপকের বন্ধুরা।
এতক্ষণে রহস্যের পর্দা ওঠে। যাঁর এক ফোনে সকালের বিয়ে ভেঙে যাচ্ছিল, সেই বিশ্বনাথবাবুই শশীবাবুকে করজোড়ে বলেন, “মাফ করবেন, ক্যানসারের কথা গল্প মাত্র। বড় জামাই অরুণ চৌরাশিয়ার চাপেই তা বলতে হয়েছে। এত সবের পরেও আপনারা রাজি থাকলে অপর্ণাকে নিয়ে যান। আমরা রাজি।”
সকালের থমকে যাওয়া উৎসব কোন জাদুমন্ত্রে প্রাণ ফিরে পায়। ইতিমধ্যে পুলিশ গ্রেফতার করেছে চৌরাশিয়াকে। থানা থেকেই সদলবল ফের পাত্রীর বাড়ি গেলেন দীপক। বিয়েটা সারা হল বরমবাবার মন্দিরে। তার পর বাড়ি।
অপর্ণা জানিয়েছেন, বিয়ের কথা পাকা করার আগে জামাইবাবুর সম্মতি নেওয়া হয়নি, এতেই তাঁর রাগ। তাঁর দিদিরা ৩০ নভেম্বর চলে এলেও জামাইবাবু আসেন বিয়ের আগের দিন। সব জেনে বলেন, বিয়ে হবে না। গয়ায় নিয়ে গিয়ে তিনি শ্যালিকার বিয়ে দেবেন। শেষ পর্যন্ত তিনিই রচনা করেন ক্যানসার সংক্রান্ত এই চিত্রনাট্য। তবে নিজের দুর্বল পরিচালনার মাসুল দিয়ে জামাইবাবুকে রাতটা কাটাতে হয়েছে পুলিশের লকআপে, দীপক-অপর্ণা যখন বাসরঘরে! |
|
|
|
|
|