পুরসভা স্কুল চালাবে কেন, তা নিয়ে বিতর্ক এখনও মেটেনি। তবু পাড়ায় পাড়ায় গড়ে ওঠা কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলির সঙ্গে পাল্লা দিতে মাঠে নামছে কলকাতা পুরসভা।
আগামী বছরের শুরু থেকেই পুরসভার স্কুলগুলিতে চালু হতে চলেছে মন্টেসরি শিক্ষা ব্যবস্থা। সেখানে ‘মন্টেসরি কিট’ সহযোগেই চলবে শিশুদের পাঠদান। প্রয়োজনে ব্ল্যাকবোর্ডের জায়গা নিতে পারে ডিজিটাল বোর্ড। সে ক্ষেত্রে পাল্টে যাবে ছোট্ট ঘরের মেঝেতে কোনও মতে সতরঞ্চি পাতা, দেওয়ালে ব্ল্যাকবোর্ড আর সাকুল্যে কিছু ছবি টাঙানো পুর-স্কুলের চেনা ছবি। নতুন ব্যবস্থায় শিশুরাও লেখাপড়ায় উৎসাহ পাবে বলে মনে করেন পুর-কর্তৃপক্ষ।
কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ (শিক্ষা) তথা তৃণমূল বিধায়ক শশী পাঁজা জানান, এত দিন পুরসভার স্কুলগুলিতে পাঁচ বছর বয়স থেকে শিশুদের ভর্তি করা হত। নতুন পাঠ্যক্রমে তিন বছর বয়স থেকেই মন্টেসরিতে ভর্তি করা যাবে। শশীদেবী বলেন, “মূলত শিশুদের শিক্ষার ভিতটা শক্ত করতেই এই পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গত বছরই পুরসভার স্কুলগুলিতে মন্টেসরি শিক্ষা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।”
কলকাতা পুরসভার অধীনে ২৭০টি স্কুল রয়েছে। তবে এই শিক্ষা ব্যবস্থা আপাতত শুরু হচ্ছে ১০টি স্কুলে। তার মধ্যে হিন্দি, ইংরেজি, বাংলা, উর্দু সব ধরনের মাধ্যমের স্কুলই রয়েছে। মন্টেসরিতে শিক্ষা দেওয়ার জন্য বিভিন্ন স্কুলের ১৯ জন শিক্ষক-শিক্ষিকাকে বিশেষ প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছে। |
প্রতিটি স্কুলের জন্য দু’জন করে মন্টেসরি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক কিংবা শিক্ষিকাকে নিয়োগ করা হবে। মন্টেসরি শিক্ষার সরঞ্জামও ইতিমধ্যেই বিভিন্ন স্কুলে আসতে শুরু করেছে। স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা সেগুলি দিয়ে একটু আধটু করে ছাত্রছাত্রীদের ক্লাস নেওয়াও শুরু করে দিয়েছেন।
উত্তর কলকাতার মসজিদবাড়ি স্ট্রিটে ডালপট্টি কর্পোরেশন স্কুলে গিয়ে দেখা গেল, সেখানে বিভিন্ন ধরনের ‘মোটিফ’ ব্যবহার করে শিশুদের ক্লাস নিচ্ছেন প্রধান শিক্ষক রামানন্দ রাই। তাঁর কথায়, “আগে শুধু ছবি দেখিয়ে শিশুদের পড়ানো হত। তাতে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই শিশুদের পড়ায় মন বসত না। কিন্তু এখন ওরা খেলার মধ্য দিয়েই পাঠ্যক্রমের সঙ্গে ধীরে ধীরে পরিচিত হচ্ছে। ফলে শিশুরা পড়াশোনাটা উপভোগ করছে।”
তবে পুরসভা মন্টেসরি শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করতে চাইলেও শুধুমাত্র পরিকাঠামোর অভাবেই সব স্কুলকে এখনই এই ব্যবস্থার আওতায় আনা সম্ভব হচ্ছে না। কারণ, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পুরসভার নিজস্ব কোনও স্কুলবাড়ি নেই। পুরসভার কমিউনিটি সেন্টার কিংবা ভাড়া নেওয়া কোনও বাড়িতে স্কুল চলে। ফলে সেখানে ক্লাসঘর নিয়ে সমস্যা দেখা দেওয়ারও আশঙ্কা থাকছে।
ডালপট্টির স্কুলটিই চলে পুরসভার এক কমিউনিটি সেন্টারের একতলায়। তিনটি ঘর সেখানে। প্রধান শিক্ষক রামানন্দবাবুর কথায়, “সমস্যা তো হবেই। একটি ঘর মন্টেসরির জন্য ছেড়ে দিলে অন্য ক্লাসগুলির জায়গার অভাব হবে। পুরসভার কাছে কমিউনিটি সেন্টারের দোতলায় ক্লাস চালানোর জায়গা চাওয়া হয়েছে।” |