এ বারই প্রথম বিধানসভায় পুরোদস্তুর বিরোধী হিসাবে বাম ও কংগ্রেস মিলে শতাধিক বিধায়ককে সামলাতে হচ্ছে। আর তাতেই গোড়া থেকে হোঁচট। মাত্র পাঁচ দিনের অধিবেশনের তৃতীয় দিনে একেবারে মারামারি! তৃণমূলের রণকৌশল এবং পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার দক্ষতা নিয়ে শাসক দলের অন্দরেই প্রশ্ন উঠে গেল।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিধানসভায় আসেন কদাচিৎ। এলে নিজের বক্তৃতা করে ফিরে যান। মুখ্যমন্ত্রীর অনুপস্থিতিতে শাসক দলের তরফে ফ্লোর ম্যানেজার পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ই। তিনি মঙ্গলবারের নজিরবিহীন ঘটনার জন্য বিরোধী বামেদের ‘তাণ্ডব’কে দায়ী করেছেন। কিন্তু দুই বর্ষীয়ান মন্ত্রী পার্থবাবু ও সুব্রত মুখোপাধ্যায় জোড়া ফলার উপস্থিতিতেও তৃণমূলকে কেন চরম বিড়ম্বনায় পড়তে হল, ঘরোয়া আলাপচারিতায় প্রশ্ন তুলছেন তৃণমূল বিধায়কদের একাংশ।
শাসক দলের এক বিধায়কের কথায়, “বামেরা আর্থিক সংস্থার টাকা তোলা নিয়ে প্রস্তাব এনেছিল। এই রকম আইনশৃঙ্খলা বা ত্রিফলা আলোর মতো বিষয় নিয়ে বিরোধীরা যে হইচই বাধাবে, সে তো জানা কথা! কংগ্রেস যে সুর মেলাবে, তা-ও জানা। তা সত্ত্বেও বিরোধীদের প্ররোচনায় পা দিয়ে আমরা মারামারি করতে যাব কেন?” সহকর্মীদের কাণ্ডকারখানা দেখে দলেরই এক মহিলা বিধায়কের আক্ষেপ, “আমাদেরই তো মুখ দেখানোর জায়গা থাকছে না! বিরোধীরা কটূক্তি করলেও মহিলা বিধায়ককে ঘিরে ধরে মারতে হবে?” |
ঘটনা হল, এ দিন বিধানসভা উত্তপ্ত হওয়া মাত্রই মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আগাগোড়া যোগাযোগ রেখে গিয়েছেন পার্থবাবু। তৃণমূল সূত্রের বক্তব্য, মুখ্যমন্ত্রী বিধানসভা শান্ত রাখার বার্তাই দিয়েছিলেন। যার প্রেক্ষিতে কংগ্রেসের এক বিধায়কের মন্তব্য, “মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের কী সুন্দর রূপায়ণ দেখা গেল!” মন্ত্রী-বিধায়কদের একাংশের এ দিনের আচরণের জেরে তৃণমূলের গায়ে ‘গণতন্ত্র-বিরোধী’ এবং ‘ধ্বংসাত্মক’ দলের তকমাও ফের সেঁটে বসল! বামেরা ফের বলতে শুরু করেছেন, ২০০৬ সালের ৩০ নভেম্বর বিরোধী পক্ষে থেকে যে দলের বিধায়কেরা বিধানসভার লবিতে ভাঙচুর করেছিলেন, তাঁরাই ট্রেজারি বেঞ্চে দিয়ে বিরোধী বিধায়কদের সঙ্গে মারামারি করতে গেলেন! অর্থাৎ ট্র্যাডিশন সমানে চলছে!
যাবতীয় বিরুদ্ধ প্রচারের জবাব দেওয়ার চেষ্টা করেছেন পরিষদীয় মন্ত্রী। কিন্তু তাঁর বক্তব্যে বিশেষ ‘ড্যামেজ কন্ট্রোল’ হয়েছে কি না, তৃণমূল শিবিরেই প্রশ্ন! বিরোধীদের ‘তাণ্ডবে’র সময় সরকার পক্ষের বিধায়কদের আচরণ সংযত ছিল বলে মনে করেন কি না, এই প্রশ্নের জবাবে পার্থবাবু বলেছেন “সংযত না-থাকলে আমাদের আর ওদের যা সংখ্যা, তাতে অন্য রকম ব্যাপার হত! সংযত ও সহনশীল হওয়াটা অপর পক্ষের আচরণের উপরে নির্ভর করে!” একই সঙ্গে পার্থবাবুর দাবি, “আমরা গোটা কক্ষকেই সংযত রাখার চেষ্টা করেছিলাম। যাঁরা আগে মন্ত্রী (বাম জমানায়) ছিলেন, তাঁরা চুপচাপ বসে মজা দেখছিলেন!”
পরিষদীয় মন্ত্রীর এই ‘সংযত-মন্তব্যে’ প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের ছ’বছর আগে করা ‘আমরা ২৩৫, ওরা ৩০’ কটাক্ষের ছায়া দেখছেন কেউ কেউ।
|
হাসপাতালে ভর্তি হতে হুড়োহুড়ি
নিজস্ব সংবাদদাতা |
এক পক্ষ বলছে, বুকে ব্যথা, যে-কোনও মুহূর্তে জ্ঞান হারিয়ে ফেলবেন। অন্য পক্ষ বলছে, মাথায় চোট লেগেছে, সব কেমন যেন তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে। তৃণমূল ও সিপিএম, দু’পক্ষের বিধায়কদের এমন দাবিতে মঙ্গলবার দুপুরে তোলপাড় হয় এসএসকেএম হাসপাতালে। দু’পক্ষেরই দাবি, তাদের বিধায়কদের ভর্তি করতে হবে। কর্তৃপক্ষ জানান, দু’দলের শীর্ষস্থানীয় নেতানেত্রীরা হাসপাতালে ফোন করে তাঁদের দলের বিধায়কদের ভর্তি করার জন্য অনুরোধ করেন। শেষ পর্যন্ত ভর্তি হন এক জনই, তৃণমূল বিধায়ক মাহমুদা বেগম। বিধানসভায় সিপিএম বিধায়ক গৌরাঙ্গ চট্টোপাধ্যায়, দেবলীনা হেমব্রম, তৃণমূল বিধায়ক মাহমুদা বেগম এবং পুলক রায় আহত হয়েছেন বলে অভিযোগ ওঠে। দেবলীনা বাদে বাকিদের এসএসকেএমে নিয়ে যাওয়া হয়। সিপিএমের তরফ থেকে বলা হয়, গৌরাঙ্গবাবুর মাথায় গুরুতর আঘাত লেগেছে। হাসপাতালে সিটি স্ক্যান হয়। চিকিৎসকেরা জানান, রিপোর্টে অস্বাভাবিকতা পাওয়া যায়নি। তাই তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। পুলকবাবু জানিয়েছিলেন, তাঁর পায়ে চোট লেগে হাঁটতে পারছেন না। তাঁর ক্ষেত্রেও পরীক্ষায় কিছু না-পেয়ে চিকিৎসকেরা ছেড়ে দেন। মাহমুদা বেগমের অভিযোগ, তাঁর বুকে ব্যথা হচ্ছে। চিকিৎসকেরা জানান, ইসিজি রিপোর্টে অস্বাভাবিকতা পাওয়া যায়নি। তা হলে তাঁকে উডবার্ন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হল কেন? এক চিকিৎসকের কথায়, “এক জন বিধায়ক বলে চলেছেন বুকে যন্ত্রণা হচ্ছে। তাই তাঁকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।” |