ট্রেজারি বেঞ্চ তখন রণং দেহি! মহিলা সতীর্থকে বাঁচাতে ব্যতিক্রমী ভূমিকায় দেখা গেল শাসক দলের এক জন মহিলা বিধায়ককেই। হলদিয়ার শিউলি সাহা।
তৃণমূল বিধায়কদের জটলার মধ্যে তখন ঘেরাও হয়ে গিয়েছেন আদিবাসী অনগ্রসর দফতরের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা সিপিএম বিধায়ক দেবলীনা হেমব্রম। কুমারগঞ্জের তৃণমূল বিধায়ক মেহমুদা বেগমের সঙ্গে বচসা শুরু হলেও তত ক্ষণে দেবলীনাকে ঘিরে ধরেছেন শাসক দলের একাধিক পুরুষ বিধায়ক। নিগ্রহের মুখে অসহায় দেবলীনাকে দেখে এগিয়ে যেতে দেখা গেল শিউলিকে। স্পিকারের আসনের সামনে থেকে মন্ত্রীদের আসনের সামনের জায়গায় যখন টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে দেবলীনাকে, স্পিকারের পাশেই দাঁড়িয়ে ডেপুটি স্পিকার সোনালি গুহ। মন্ত্রীর আসনে বসে মহিলা তৃণমূলের রাজ্য সভানেত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। নিজের নিজের আসনে বসে শাসক দলের মহিলা বিধায়ক দেবশ্রী রায়, ফিরদৌসী বেগম, মালা সাহা প্রমুখ। উঠলেন শুধু শিউলি।
|
শিউলি সাহা।
নিজস্ব চিত্র |
এক জন মহিলা বিধায়ককে ফেলে মারা হচ্ছে, কিছু করি চলুন এই রকমই অনুরোধ নিয়ে দলের মহিলা সহকর্মীদের দিকে এগোলেন হলদিয়ার বিধায়ক। দলের ‘বিরুদ্ধাচরণ’ করবেন না বলেই হয়তো, কেউ এগোলেন না! অগত্যা একা শিউলিকেই দেখা গেল, দলীয় সহকর্মীদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করছেন। পুর্ব মেদিনীপুরের অধিকারী পরিবারের সুনজরে না-থেকে জেলায় দলের মধ্যে উপেক্ষিত শিউলি সাম্প্রতিক কালে বার কয়েক মুখ খুলেছেন। তাই নিয়ে দলে অশান্তিও কম নয়। বিধানসভার মধ্যে ‘মানবিক’ শিউলির ব্যতিক্রমী আচরণ রাজনৈতিক তাৎপর্যবাহী কি না, শাসক ও বিরোধী, দু’শিবিরেই জল্পনা শুরু হয়েছে।
বাম বিধায়কেরা দেবলীনাকে নিয়ে কক্ষত্যাগ করার পরে বিধানসভার মেডিক্যাল ইউনিটের ঘরেও যেতে দেখা যায় শিউলিকে। সেখানে চিকিৎসা চলছিল সিপিএমের অপর আহত বিধায়ক গৌরাঙ্গ চট্টোপাধ্যায়ের। মেডিক্যাল ইউনিটে নিজের দলের আহত কোনও বিধায়ক রয়েছে কি না, খোঁজ করতে দেখা যায় শিউলিকে। কাউকে দেখতে না-পেয়ে ফিরে যান তিনি। যেতে যেতে পাশে থাকা বিধানসভার এক মহিলা রক্ষীকে কিছুটা অনুযোগের সুরেই তাঁকে বলতে শোনা যায়, “এমন ঘটনা আগে দেখেছ? তোমাদের ভূমিকাও কিন্তু ভাল ছিল না। যখন দেখছ এক জন মহিলাকে মারছে, তোমরা বাধা দেবে তো!” পাছে দলে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হয়, তাই বিধানসভায় আক্রান্ত বিরোধী বিধায়কের প্রতি তাঁর আচরণ নিয়ে প্রকাশ্যে আর মুখ খুলতে চাননি শিউলি। পরে শুধু বলেন, “আমি কাউকে বাঁচাতে যাইনি। শুধু দেখছিলাম!” অবশ্য বিধানসভা ছাড়ার আগে দাবি করেন, তৃণমূলের মেহমুদা আক্রান্ত হয়েছেন দেখে সরানোর চেষ্টা করেছিলেন দুই মহিলা বিধায়ককেই।
মুখের কথা যা-ই হোক, বিধানসভার ভিতরের ছবি দেখেছেন উপস্থিত সকলেই! |