|
|
|
|
বাবা জ্ঞান দিয়ো না |
প্রেম
প্রেম
গেম
শুধু প্রেম? বৈদিক যুগের ব্যাপার। এখন শরীর আগে। প্রেম পরে। এমনকী বাংলা ছবিতেও।
খুঁজলেন দেবাঞ্জলি রায়
|
দেবদাস-পার্বতীর যুগ শেষ। এখন সময় নীল আর নিকির। কোনও আবেগের প্যানপ্যানানি নেই। নেই প্রেমের চোটে নাকের জলে-চোখের জলে হওয়াও। যাকে ভালবাসব তার নাম মুখে নিয়েই মরব, এই ভাবনাটাও বস্তাপচা। কলকাতার যুবসমাজের একটা বিশাল অংশ এখন এটাই মনে করেন। কলেজছাত্রী শতরূপার যেমন সাফ কথা,“প্রেম করা আর এক ছাদের তলায় থাকা এক নয়। বিয়েটা অনেকটাই স্থায়ী ব্যাপার, তাই চটজলদি কোনও সিদ্ধান্তই নয়।” তবে হ্যাঁ, ঘুরব-ফিরব, খাব-দাব, সিনেমা দেখব। বার-বি-কিউ, অ্যাকোয়াটিকা, নলবনে ঘেষাঁঘেষি তক ঠিক হ্যায়। কিন্তু বিয়ে? নো ওয়ে।
|
মডেল: রুদ্রজিৎ মুখোপাধ্যায়, শ্রেয়া পাল, কুন্তল সরকার। ছবি: সুব্রত কুমার মণ্ডল |
মাছ ধরব, পানি ছোঁব না
সুলগ্নার বাবা-মা ঠিকই করে রেখেছেন যে সাধের মেয়েটার বিয়ে দেবেন কোনও নামকরা ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়রের সঙ্গে। তা বলে কিন্তু তিনি ‘লুট গই, বরবাদ হো গয়ি’ বলে কেঁদে ভাসাননি। বা খাওয়া-দাওয়াও বন্ধ করে দেননি। উল্টে সুলগ্না কিন্তু বেজায় খুশি এই সিদ্ধান্তে। ঝামেলা মিটেছে একটা! এদিকে দিব্যি চলছে বারিস্তা, কেএফসি, ম্যাকডি। কখনও অর্ণব তো কখনও সায়ন। শুধু একটাই ব্যাপার, “ঘুরছ ঘোরো, বিয়ে-টিয়ের কথা ভেবো না”। রাজি হতে হবে দু’পক্ষকেই। থাকবে না কোনও প্রতিশ্রুতি। কোনও পিছুটান। নেই সম্পর্ক ভাঙার যন্ত্রণা। এক্কেবারে ট্যাক্স-ফ্রী আনন্দ!
প্রতিশ্রুতির ভয়?
“যাই বলো, এই ধরনের মুখোশ
আঁটা-সম্পর্কগুলো কিন্তু গা বাঁচিয়ে
চলা মানুষদের জন্য। যাদের শিরদাঁড়া বলে জিনিসটাই নেই,” ছুঁড়ে দিলেন রূপসায়র দাস। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ছাত্রের মতে এই ধরনের সম্পর্কে ‘অনুভূতি’কে মর্যাদা দেওয়া হয় না। প্রাধান্য পায় পয়সা, সামাজিক পদমর্যাদার মতো জিনিসগুলো। পোহাতে হবে অনেক ঝক্কি। সামলাতে হবে সম্পর্কের জটিলতা, মন ভেঙে টুকরো হওয়া। নিতে হবে দায়িত্ব।
হটাও ইয়ার। পারলাম না অত কিছু। কেরিয়ার আছে, ভবিষ্যৎ আছে। এর মধ্যে প্রতিশ্রুতির ঘাড়-ধাক্কা? তার থেকে এই বন্ধু-বন্ধু প্রেম-প্রেম খেলাটাই ভাল। সম্পর্কের ‘দি এন্ড’ হলে খুব সহজেই “আমরা শুধুমাত্র বন্ধু ছিলাম। তাই, কোনও বাজে অনুভূতিও নেই, বলে তুমি উত্তর, আমি দক্ষিণ।”
সমঝোতা দু’তরফেই
“যদি প্রথম থেকেই দু’তরফে সমঝোতা থাকে তাহলে এই ধরনের সম্পর্কের জুড়ি নেই। থাকবে না কাপলদের মতো নিত্য ভাঙা গড়ার চচ্চড়ি,” বললেন হাওড়া এমসিকেভি স্কুলের শিক্ষিকা শুভেচ্ছা চট্টোপাধ্যায়।
শুধু ঝামেলা একটাই। “যখন কোনও একজন সম্পর্কটায় সিরিয়াস হয়ে পড়ে। তখনই শুরু হয় ইমোশনাল অত্যাচার”, জানালেন প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী মানালি ঘোষ। যতই নিয়মে বাঁধা হই, হাজার হোক মানুষ তো! মানালির মতে, একসঙ্গে ঘোরা-ফেরা করতে করতে একটা আবেগের সম্পর্ক
জন্মে যায়ই। তখনই না থাকে দোস্তি, না থাকে প্যার। সব মিলে একটা জগাখিচুড়ি ব্যাপার!
বন্ধু-বন্ধু প্রেম-প্রেম
‘‘ওটা কমই দেখা যায়,” উল্টো গাওনা কলেজপড়ুয়া সৈকতের। এর সঙ্গে ঘুরবে না, তার সঙ্গে ডিস্কে যাবে না। এটা পরবে, ওটা খাবে। ধ্যাত্তেরি! “এই বাধঁনগুলো মাঝেমাঝে এক্কেবারে পোষায় না। কাউকে প্রতিশ্রুতি
দিলেই থাকে প্রত্যাশার বাড়তি
বোঝা। সেটা না পূর্ণ হলেই সম্পর্কটা তিতকুটে হতে শুরু করে। মনে হয় ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি,” বললেন বছর তেইশের শ্রীলেখা। মা-বাবা খুঁজছেন এনআরআই পাত্র। তবে তাতে কিন্তু তার অভিজিতের সঙ্গে সামপ্লেস এল্সে যাওয়া বা সৌম্যর সঙ্গে শপিং করা আটকাচ্ছে না। বিন্দাস। বিয়ের কথায় শ্রীলেখা দুষ্টুু হেসে বলেন, “বিয়েটা ফিক্স্ড অ্যাকাউন্ট, তোলা থাক।
এগুলো কারেন্ট।”
বেড়ে ওঠো বাবা
“ব্যাপারটা হয়ে গেল, ফুর্তি করব নিজের মতে, ধরা দেব পয়সাওয়ালার হাতে। একেবারেই সমর্থন করি না,” ঝাঁঝিয়ে উঠলেন বছর পঁচিশের সৌমিক সরকার। ভাষা-ভাষা প্রেমহীন এই ‘ধান্দা’র সম্পর্ক রাখতে নারাজ তারই মতো অনেকে। ভালবাসার মানুষকে নিয়ে তাই নো সমঝোতা। ভালবাসব যাকে বিয়ে করবও তাকে। কিন্তু বাকি একাংশ? “বি প্র্যাকটিকাল। মা-বাবাকে লুকিয়ে তো কিছু করছি না। সুতরাং ওসব ভিত্তিহীন সেকেলে ব্যাপারস্যাপার ঝেড়ে ফেলো,” বেশ জোর দিয়ে বললেন কর্পোরেট কর্মী অনিন্দিতা।
সিনেমায় যেমন হয়
বাঁধন ছাড়া প্রেম হোক বা গদগদ প্রেমে হাবুডুবু খাওয়া, দু’টোই কিন্তু উঠে এসেছে সিনেমায়। ‘যব তক হ্যায় জান’য়ে যেমন সমর-মীরার কমিটেড সম্পর্ক, তেমনই ‘নীল অ্যান্ড নিকি’তে সম্পর্কের শুরুই স্রেফ বাঁধন ছাড়া মজা। সিনেমা তো বাস্তবের থেকে আলাদা নয়। বাস্তবেও সম্পর্কের ডায়নামিক্সটা যে বদলাতে চলেছে, সেটা তাই বেশ টের পাওয়া যাচ্ছিল।
‘নো স্ট্রিংস অ্যাটাচড’, ‘ফ্রেন্ডস্ উইথ বেনিফিটস্’ বা ‘সলাম নমস্তে’। হালের সিনেমাগুলোতে বারবার উঠে এসেছে বাঁধনহীন এই সম্পর্ক। তবে এই দু’টো সম্পর্ক নিয়েই শেষ কথাটা বলেছিলেন প্রবীর রায় চৌধুরি ‘২২ শে শ্রাবণ’ সিনেমায়, “... তফাৎটা বোঝো? একটা নেসেসিটি, অন্যটা লাক্সারি।” ব্যাপারটা কিন্তু খেয়াল করার মতো।
খুশ ওরা, খুশ আমরা
“বিয়ে মানেই একটা প্রতিশ্রুতি, বাড়তি প্রচুর দায়িত্ব। সেটাকে এড়ানোর জন্যই কিন্তু আজকাল ছেলেমেয়েরা বিয়ে ব্যাপারটাকে ঠেলে দিচ্ছে মা-বাবার কোর্টে,” জানালেন পঞ্চাশোর্ধ চৈতালী রায়। এখন বিয়ের পাত্র খুঁজতে পেরে মা-বাবাও খুশ, ছেলেমেয়েও খুশ।
এ ধরনের ‘বাঁধনছাড়া’ সম্পর্কে সবচেয়ে বড় সুবিধা, মা-বাবার কাছে ‘কেস’ খাওয়ার ভয়টা নেই। মেয়ে আমার ‘বন্ধু’দের সঙ্গে ঘুরছে ঘুরুক। যাকে তাকে ধরে বিয়েটা তো করছে না। “নিজের কেরিয়ার জলে না দিলেই হল। কার সঙ্গে শপিং করবে বা সিনেমা দেখতে যাবে সেটা ওর নিজের পছন্দ। আমাদের মাথা ঘামানোর দরকারই নেই,” স্পষ্ট জানালেন কলেজপড়ুয়া স্নিগ্ধার বাবা পার্থপ্রতিম দত্ত। এখনকার ছেলেমেয়েদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মা-বাবারাও কিন্তু দিব্যি আছেন।
|
কেন লিখছেন |
সৃজিত মুখোপাধ্যায়
‘২২শে শ্রাবণ’-য়ের সংলাপ, “বেদে আট রকম বিয়ের কথা বলা আছে। গান্ধর্ব মতে লিভ-ইন টাও বিয়ে। ওটা কোন মার্কিনি আমদানি নয়।”‘অটোগ্রাফ’ ও ‘২২শে শ্রাবণ’য়ে লিভ-ইন সম্পর্ক দেখিয়েছিলাম। কারণ এ রকম সম্পর্কই বাস্তবে বেশি হচ্ছে। তবে আমি মানি না, যে লিভ-ইন-য়ে কোনও কমিটমেন্ট নেই। |
মৈনাক ভৌমিক
‘বেডরুম’-য়ের সংলাপ, “সবাই করতে চাইছে কিন্তু পারছে না। যারা পারছে না, তারা সাহসের অভাবে চরিত্রবান।” লাগামহীন, নিঃশর্ত যৌন সম্পর্ক কলকাতায় হামেশাই হচ্ছে। বেডরুমের মতো সিনেমা এই কারণেই বক্স অফিসে এত হিট। ইয়ুথ আইডেনন্টিফাই করতে পারছে। |
সুজয় ঘোষ
সিনেমা বেশির ভাগ সময়ই বাস্তব ঘটনানির্ভর হয়। কাজেই যদি ইউথদের নিয়ে ছবি বানাতে চাই তাহলে লিভ-ইন বা প্রাক্বিবাহ যৌনতার মতো বিষয় গল্পে রাখতেই হবে। আমি যদি আমার বাবাকে এসে বলতাম আমি লিভ-ইন করব, আমাকে বাবা চড় মারতেন। কিন্তু আমার ছেলে এসে আমায় যদি বলে, আমায় মেনে নিতেই হবে। |
|
|
|
|
|
|
|
|