ঠিকাকর্মী পদে নিয়োগ নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে শ্রীরামপুর ওয়ালশ হাসপাতালে। দীর্ঘ দিন ধরে নামমাত্র পারিশ্রমিকে কাজ করেছেন, এমন লোকজনকে বসিয়ে তৃণমূলের নেতারা নিজেদের লোক ঢোকাতে চাইছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সিপিএম-কংগ্রেস তা নিয়ে সরব হয়েছে। পাল্টা অভিযোগ, ওই দুই দলের স্থানীয় নেতৃত্বও তাঁদের পছন্দের লোকজনকে কাজ পাইয়ে দিতে চাইছেন। বৃহস্পতিবার বিষয়টি নিয়ে তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে কংগ্রেস-সিপিএমের লোকজনের তুমুল বিতণ্ডা বাধে হাসপাতাল সুপারের ঘরে।
এই পরিস্থিতিতে, কারা কাজ পাবেন তা এখনও পরিষ্কার নয়। এই রাজনৈতিক ডামাডোলের মধ্যে ফাঁপরে পড়েছে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার সংস্থা। কারণ, আজ সোমবারের মধ্যেই নিয়োগের কাজ শেষ করতে হবে।
হাসপাতাল সূত্রের খবর, অস্থায়ী কর্মী হিসেবে ঠিকাদারের অধীন ২০ জন নিরাপত্তারক্ষী নিয়োগ করার কথা হয়। দরপত্র ডেকে ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়ে গিয়েছে। এই হাসপাতালে বেশ কিছু মহিলা-পুরুষ আছেন, যাঁরা দীর্ঘ দিন ধরে খুব অল্প দৈনিক পারিশ্রমিকে নিরাপত্তারক্ষী বা সাফাইকর্মীর কাজ করেন। স্বভাবতই ঠিকাদারের অধীনে কর্মী নিয়োগের সময় তাঁদের নাম প্রাথমিক বিবেচনায় আসে।
সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার সংস্থার বক্তব্য, পুরনো কর্মীদের মধ্যে থেকে ১০ জনকে নেওয়া হবে বলে তাঁরা ঠিক করেন। বাকি ১০টি পদেও হাসপাতালের সঙ্গে দীর্ঘ দিন যুক্ত লোকজনকেই নেওয়ার কথা ভাবা হয়। কিন্তু স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব প্রথমে পুরনো কর্মীদের মধ্যে থেকে ৩-৪ জনকে বাদ দিতে বলেন। এতে ওই কর্মীদের মধ্যে প্রবল অসন্তোষ তৈরি হয়। ঠিকাদার সংস্থার এক কর্তার দাবি, এই মুহূর্তে তৃণমূল নেতারা চাইছেন পুরনোদের মধ্যে এক জনকে বাদ দেওয়া হোক। অর্থাৎ বাকি ১১টি পদে তাদের পছন্দের লোক ঢুকুক। ঠিকাদার বা কর্মীদের একাংশ তা মানতে নারাজ। এই অবস্থায় ঠিকাদার সংস্থা বিষয়টি লিখিত ভাবে জেলাশাসক-সহ সংশ্লিষ্ট সমস্ত জায়গায় বিষয়টি জানিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছেও চিঠি পাঠানো হয়েছে। ‘বসিরহাট ফুড সাপ্লাই মহিলা কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড’ নামে ওই ঠিকাদার সংস্থার তরফে পারমিতা ঘোষের দাবি, “বিতণ্ডা না মিটলে তো কোনও কাজই করতে পারব না।”
এ নিয়ে আলোচনার জন্য বৃহস্পতিবার তৃণমূল, সিপিএম এবং কংগ্রেসের নেতারা হাসপাতাল সুপারের ঘরে যান। অস্থায়ী কর্মীরাও যান। শুরু হয় ঝগড়াঝাটি। উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্য তৃণমূল এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে দোষারোপ করতে থাকেন কংগ্রেসের এক নেতা। তৃণমূলের এক স্থানীয় নেতাও উত্তেজিত হয়ে পড়েন। দলের অন্য এক নেতা তাঁকে সামলান। শেষ পর্যন্ত, কোনও সিদ্ধান্তও নেওয়া যায়নি। কংগ্রেস নেতা গিরিধারী সাহার অভিযোগ, “আগে সিপিএম যে ভাবে নিজেদের লোক ঢুকিয়েছে, তৃণমূলও তাই করতে চাইছে।” তৃণমূল অবশ্য অভিযোগ মানেনি। দলের নেতা অন্বয় চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “এটা অপপ্রচার। নিরপেক্ষতা বজায় রেখে লোক নিয়োগের চেষ্টা হচ্ছে। তাই সিপিএম তা বানচাল করার চেষ্টা করছে।” অন্বয়বাবুর দাবি, “১০ জন পুরনো লোককে নেওয়ার সিদ্ধান্ত পাকা। ২টি পদে ঠিকাদার নিজের পছন্দের লোক নেবে বলেছে। বাকি ৮টি পদে সরকার নির্ধারিত যোগ্যতার নিরিখে হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা যাতে কাজ পান, আমরা সেই চেষ্টাই করছি।” সিপিএম অবশ্য অভিযোগ মানেনি। |