আমরি কাণ্ডের পর স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলির অগ্নি নির্বাপণ বিষয়ে নড়েচড়ে বসে রাজ্য সরকার। ফলে, কলকাতা-সহ মফস্সলের হাসপাতালগুলিতেও অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র বসানোর তোড়জোড় শুরু হয়। দেরিতে হলেও বীরভূমের সিউড়ি সদর হাসপাতালে ৮৮টা অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র বসানো হয়েছে। এর সঙ্গে হাসপাতালের সুপার, নার্স-সহ প্রায় ৩০ জন স্বাস্থ্যকর্মীকে অগ্নি নির্বাপক যন্ত্রের ব্যবহার ও আগুন লাগলে কী করা উচিত সে সম্পর্কেও প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
সিউড়ি সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, বিভিন্ন বিভাগের প্রায় ৫৫০টি শয্যা বিশিষ্ট এই হাসপাতালে অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা প্রায় ছিল না বললেই চলে। আমরি কাণ্ডের পর সিউড়ি সদর হাসপাতালের অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা নিয়েও চিন্তা ভাবনা শুরু করেন এই হাসপাতালের কর্তারা। কিছু দিন হইচইয়ের পর বিষয়টি চুপচাপ হয়ে যায়। কিন্তু সাত-আট মাস আগে সিউড়ির এই হাসপাতালে এসএনসিইউ (সিক্ নিউ বর্ন কেয়ার ইউনিট)--এই শিশুবিভাগের কাছে শর্ট সার্কিট থেকে আগুন ধরে যায়। মুহূর্তে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে হাসপাতালের ভিতরে ও বাইরে। অসুস্থ শিশু থেকে সমস্ত রোগীকে বের করার হুড়োহুড়ি পড়ে যায় মা, বাবা ও আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে স্বাস্থ্য কর্মীদের মধ্যেও। কিন্তু হাসপাতালের কাছাকাছি দমকল বাহিনীর কার্যালয় হওয়ায় আগুন লাগার কিছুক্ষণের মধেই দমকলকর্মীরা এসে পড়েন এবং আগুন আয়ত্তে আনেন। সিউড়ি হাসপাতালের এই অগ্নিকাণ্ডের পর অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা নিয়ে ফের নড়ে চড়ে বসে কর্তৃপক্ষ। অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র বসানোর বিষয়টি নিয়ে তোড়জোড় শুরু হয় এবং সপ্তাহ দুয়েক আগে তা বাস্তবায়িত হয়। |
হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেল, হাসপাতাল আগের থেকে অনেক পরিষ্কার। রান্নাঘর, ব্লাড ব্যাঙ্ক, ল্যাবরেটরি-সহ সর্বত্র অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র বসানো হয়েছে। ঝুলে থাকা তার সরিয়ে দেওয়াও হয়েছে।
হাসপাতাল সূত্রের খবর, সাংসদ শতাব্দী রায়ের এলাকা উন্নয়ন তহবিল থেকে দেওয়া অর্থে অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র বসানো হয়েছে। এ ব্যাপারে সিউড়ি সদর হাসপাতালের সুপারিন্টেনডেন্ট মানবেন্দ্র ঘোষ বলেন, “শতাব্দী রায়ের সাংসদ তহবিল থেকে পাওয়া প্রায় দুই লাখ টাকা ব্যয়ে ৮৮টা অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র কেনা হয়েছে। স্থানীয় দমকলবাহিনীর ওসি, অন্যান্য অফিসার ও কর্মীদের মতামত নিয়ে প্রয়োজন মতো সেগুলিকে বসানো হয়েছে। দমকলবাহিনীর কর্মী ও যে সংস্থার কাছ থেকে অগ্নি নির্বাপক যন্ত্রগুলি কেনা হয়েছে, সে সংস্থার লোকজন আমাদের বেশ কয়েক জনকে প্রশিক্ষণও দিয়েছেন। আমি ছাড়াও অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপার, ওয়ার্ড মাস্টার, কয়েক জন নার্স এ রকম বিভিন্ন দফতরের কর্মী মিলিয়ে প্রায় ৩০ জন প্রশিক্ষণ নিয়েছেন আগুন লাগলে কী করতে হবে না হবে সে বিষয়ে।” আরও অগ্নি নির্বাপক যন্ত্রের প্রয়োজন আছে কিনা এই প্রশ্নে তিনি বলেন, “মনে হয় না আর প্রয়োজন আছে। তবে এ ব্যপারে দমকলবাহিনীর ওসি পরিদর্শন করে যদি ছাড়পত্র না দেন এবং আরও অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র বসানোর কথা বলেন তবে সেই মতোই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
দমকলের ওসি জয়দেব ঘোষাল বলেন, “মনে হয় না আরও বসানোর প্রয়োজন আছে। কারণ, সিউড়ি সদর হাসপাতালের চার দিকে ফাঁকা জায়গা এবং দোতলা হাসপাতালের জন্য ৮৮টা অগ্নি নির্বাপক ঠিকই আছে। তবু আমরা আরেকবার দেখে তবে ছাড়পত্র দেব।” |