পাশেই দমকল কেন্দ্র। সেটাকেই বড় ভরসা করে অগ্নি নির্বাপণের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গড়ে তোলেননি পুরুলিয়া দেবেন মাহাতো সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। উপরন্তু যেটুকু সরঞ্জাম রয়েছে, তা নিয়েও অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা গড়ে তোলার উদ্যোগ চোখেনি।
হাসপাতালের সুপার নীলাঞ্জনা সেন বলছেন, “আমি সবে দায়িত্ব নিয়েছি। তবে অগ্নি নির্বাপণের পরিকাঠামো তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।” তবে আগে যিনি সুপারের দায়িত্বে ছিলেন, তিনি এত দিন ব্যবস্থা নেননি কেন তার উত্তর অবশ্য মেলেনি।
ঢাকুরিয়ার আমরি হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ডের পর এই হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ঘুরে যে অব্যবস্থার ছবি দেখা গিয়েছিল, বছর ঘোরার পরে তেমনটাই দেখা গেল। রোগীদের সঙ্গে দেখা করার সময় বেলা ১১টায় শিশু ওয়ার্ডের কাছেই সিঁড়ির কাছে দেখা গেল আড়াল খুঁজে রোগীর পরিজনেরা ধূমপান করছেন। আশপাশ দিয়ে চিকিৎসক থেকে স্বাস্থ্যকর্মীরা যাতায়াত করছেন। কিন্তু কারও ভ্রুক্ষেপ নেই। মেল মেডিক্যাল, ফিমেল মেডিক্যাল, মেল সার্জিক্যাল ওয়ার্ড-সহ বেশির ভাগ ওয়ার্ড ঘুরে একই দৃশ্য দেখা গেল। ওয়ার্ডের কোনায় ফেলে দেওয়া বিড়ি-সিগারেটের আগুন থেকে হঠাৎ যদি আগুন লেগে যায়? প্রশ্ন করতেই এক ধূমপায়ীর জবাব, “কত লোকই তো ধূমপান করছে! আগুন লাগছে?” |
তিন তলায় শিশু বিভাগের সামনে বারান্দায় এক স্বাস্থ্যকর্মীকে জানতে চাওয়া হল, এখানে অগ্নি নির্বাপক সরঞ্জাম নেই? অক্সিজেন সিলিন্ডারের নব খুলতে খুলতে স্বাস্থ্যকর্মীর জবাব, “এখানে ও সব নেই। পাবেন সুপার বা ওয়ার্ড মাস্টারের অফিসে।” সুপারের অফিস এই ভবনের বাইরে। আর ওয়ার্ডমাষ্টারের অফিস এক তলায়। হঠাৎ যদি আগুন লাগে, কী হবে? ওই স্বাস্থ্যকর্মীর জবাব, “তখন কী হবে জানি না। তবে কাছেই তো দমকল কেন্দ্র। ওদের কর্মীরা এসেই আগুন নেভাবেন।” এই বিশ্বাসে ভরসা করেই চলছে চার তলার এই হাসপাতাল।
মেল মেডিক্যাল, মেল সার্জিক্যাল, ফিমেল মেডিক্যাল, ফিমেল সার্জিক্যাল, শিশু বিভাগ, প্রসূতি বিভাগ এমনকী এক তলায় অপারেশন থিয়েটারের বাইরে লম্বা বারান্দায়কোথাও কোনও অগ্নি নিবার্পক সরঞ্জাম নজরে এল না। আমরির ঘটনার পরে পুরুলিয়া সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে আগুন সংক্রান্ত দুর্ঘটনা এড়াতে যে প্রয়োজনীয় সতর্কতামূলক ব্যবস্থাও নিতে বলেছিল দমকল, তা যে নেওয়া হয়নি বোঝা যাচ্ছিল।
৫১৪ শয্যার এই হাসপাতালের অগ্নি নিবার্পণ ব্যবস্থা কেমন হওয়া দরকার? দমকল বিভাগের বক্তব্য অনুযায়ী, অন্তত এক লক্ষ লিটারের একটি ভূগর্ভস্থ জলের ট্যাঙ্ক থাকা দরকার। সেই ট্যাঙ্ক থেকে পাইপ লাইনের মাধ্যমে প্রতিটি তলায় যাতে জল পৌঁছানো যায়, তার ব্যবস্থা থাকা দরকার। ভূগর্ভস্থ ট্যাঙ্ক এখনও তৈরি করে উঠতে পারেননি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। দমকলের আরও পরামর্শ, বিভিন্ন এলাকায় ফায়ার অ্যালার্ম থাকা দরকার। প্রতিটি তলায় অন্তত দু’টি অগ্নি নির্বাপক সরঞ্জাম রাখাও প্রয়োজনীয়। কিন্তু বাস্তব ছবিটা অবশ্য অন্য।
তাই রোগীদের সচেতন আত্মীয়েরা সব দেখে মোটেই স্বস্তিতে নেই। মানবাজার ২ ব্লকের কুমারী গ্রামের বাসিন্দা বাণেশ্বর চন্দ বললেন, “কোথাও আগুন নেভানোর ব্যবস্থা নেই। বড় কিছু ঘটলে কী ঘটবে জানি না।” পুরুলিয়া মফস্সল থানার বাসিন্দা বিজয় মিশ্র বললেন, “কয়েক বছর আগে লাগানো দক্ষিণ দিকের লিফটও তালাবন্ধ করে রাখা হয়েছে। আগুন লাগলে রোগীদের উপর তলা থেকে লিফটেও নামানোর সুযোগ মিলবে না।” পুরুলিয়া দমকল কেন্দ্রের ওসি সুদীপ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “অগ্নিনির্বাপণের জন্য কী কী ব্যবস্থা নেওয়া দরকার, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানতে চেয়েছেন। তাঁদের জানাব।” |