আমরি: এক বছর
দুঃস্বপ্ন বুকে নিয়ে দাঁড়িয়ে অভিশপ্ত সেই বাড়ি
ঢাকুরিয়া সেতুর মুখে বড়সড় সাদা বাড়িটা দীর্ঘকাল ধরেই দক্ষিণ কলকাতার একটি পরিচিত দিকচিহ্ন।
এক বছর আগেকার অগ্নিকাণ্ড বাড়িটাকে রীতিমতো দ্রষ্টব্য করে তুলেছে। পিছনের বাড়িটার উপরতলাগুলোও দূর থেকেই চোখে পড়ে। তার জানলার ভাঙা কাচ হাঁ করে তাকিয়ে। ২০১১ সালের ৮ ডিসেম্বর গভীর রাতে সেই বদ্ধ কাচের ও-পারেই বাঁচার আর্তিতে মাথা খুঁড়ছিলেন অসহায় রোগীরা। শনিবার দুপুরে পথচলতি স্কুলপড়ুয়ার দলটা ওই জানলার দিকে আঙুল উঁচিয়ে কী যেন বলতে বলতে হেঁটে গেল।
ঢাকুরিয়ার আমরি হাসপাতালের অ্যানেক্স বিল্ডিং। কলকাতা তথা গোটা দেশের অন্যতম ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ক্ষত বাড়িটার গায়ে এখনও দগদগে হয়ে আছে। বিপর্যয়ের রাতে ওই বাড়ির কয়েকটি জানলা ভেঙেই বেশ কয়েক জন রোগীকে বার করে আনা হয়েছিল। এক বছর আগের দম বন্ধ করা ধোঁয়ার কটু গন্ধটাই যা নেই।
সামনের মূল ভবনের গায়ে কিন্তু আনকোরা রঙের প্রলেপ। খুঁটিয়ে দেখলেই মালুম হবে, জানলার শিকও নতুন। দেওয়ালে এগজস্ট ফ্যানের খোপ, যা আগে ছিল না। সেই বাড়িতে ঢোকার ফটক ভিতর থেকে বন্ধ। পাশ দিয়ে ঢুকতে গেলেই রক্ষীদের প্রশ্নের মুখে পড়তে হবে।
ভিতরে কারা রয়েছেন? কী কাজই বা করছেন তাঁরা?
আমরির সেই অভিশপ্ত ভবনে মোমবাতি জ্বালছেন এলাকার দুই বাসিন্দা। রবিবার সকালে।—নিজস্ব চিত্র
এ-সব নিয়ে আলোচনার ফাঁকে ভিতরে ঢুকতেই অবধারিত ভাবে হানা দেবে এক বছর আগেকার স্মৃতি। অ্যানেক্স ভবনের বেসমেন্ট বা ভূগর্ভতলের উত্তর-পশ্চিম কোণে এখনও দেখা যায় আগুনে পুড়ে খাক হয়ে যাওয়া কালো দেওয়ালটা। গেটের সামনে ফেলে রাখা ভাঙাচোরা চেয়ার-টেবিল, রোগীদের শয্যা, ওষুধ রাখার জায়গা। ভাঙা কম্পিউটারের কি-বোর্ড এমনকী হাসপাতালের শয্যার পুরনো চাদরও দেখা গেল ফটকের পাশে। ইতিউতি ছড়িয়ে থাকা ছেঁড়া-পোড়া পুরনো ফাইলে আবছা ভাবে পড়া যাচ্ছে রোগীদের নামও। পুলিশি তদন্ত বা মামলা চলছে বলে অ্যানেক্স ভবনের সামনে পড়ে থাকা কোনও কিছুই সরানোর ঝুঁকি নিচ্ছেন না কেউ।
এর ঠিক উল্টো ছবি পাশেই মূল ভবনে। পরিচর্যায় বাড়িটা ক্রমশ নতুন চেহারা পাচ্ছে। ইতিমধ্যেই চারতলা বাড়িতে এক পোঁচ সাদা চুন লাগানোর কাজ সারা হয়ে গিয়েছে। জানলায় নতুন গ্রিল। নির্মাণকাজের জন্য সকাল থেকেই আসছেন কর্মীরা। সিমেন্ট ভর্তি বস্তা পরপর ঢুকে যাচ্ছে ভিতরে। কর্মীরা জানালেন, ভবনের বিভিন্ন তলায় মেঝের টাইলস বসানো থেকে শুরু করে নানা ধরনের কাজ হচ্ছে। বিদ্যুতের কাজও চলছে জোর কদমে। এমনকী দেখা গেল, মশা মারার স্প্রে-যন্ত্র নিয়ে এক পুরকর্মী ওই ভবনে ঢুকলেন। আমরি হাসপাতালের মূল ভবনের উল্টো দিকেই রয়েছে ‘আমরি ইনস্টিটিউট অফ ডায়াবেটিকস অ্যান্ড হরমোনাল ডিসঅর্ডার ভবন’। ওই ভবনটিও বন্ধ। তবে সদ্য হাল্কা সবুজ রং করা ওই ভবনের ঝকঝকে রিসেপশনে ঢুকলে মনে হবে, যেন কোনও হাসপাতাল সদ্য খুলল!
অ্যানেক্স বিল্ডিংয়ে অগ্নিকাণ্ডের দু’দিন বাদে আমরির মূল ভবন ও উল্টো দিকের বাড়িটাও বন্ধ করে দিয়েছিল প্রশাসন। তার পর থেকে দু’টো বাড়িরই ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। মূল ভবন ফের চালু করার জন্য রাজ্য সরকারের কাছে বারবার অনুরোধ জানিয়েছেন আমরি-কর্তৃপক্ষ। তাঁদের দাবি, বাড়ি সংস্কার করে যাবতীয় সতর্কতা নেওয়া হয়েছে। কিন্তু প্রশাসনের সাড়া এখনও মেলেনি।
আপাতত শুধু স্মৃতির আঘাত। যেমন, বাবু মণ্ডল নামে এলাকার এক বাসিন্দা অ্যানেক্স বিল্ডিংয়ের ভাঙা কাচ দেখিয়ে বললেন, “ওই কাচের জানলাটা দেখলে এখনও অসহায় রোগীদের আর্তনাদ শুনতে পাই।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.