বনমন্ত্রীর উদ্বোধন করা শালপাতার থালা তৈরির প্রকল্প নিয়ে বিপাকে পড়েছেন গরুমারা জঙ্গল সংলগ্ন ময়নাগুড়ির চড়াইমহল এলাকার স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা। বিদ্যুৎ সংযোগের ব্যবস্থা ছাড়া ঢাকঢোল পিটিয়ে উদ্বোধনের প্রায় সাত মাস পরেও ওই কারখানার চাকা ঘোরেনি। একটি থালাও তৈরি হয়নি। হতাশ মহিলারা প্রশ্ন তুলেছেন প্রকল্পের মেশিন কত দিন পাহারা দিয়ে রাখবেন।
স্বনির্ভর হয়ে ওঠার স্বপ্ন সামনে রেখে গত ১৪ মে শালপাতার থালা তৈরির কারখানার উদ্বোধন করেন বনমন্ত্রী হিতেন বর্মন। অভিযোগ, বিদ্যুতের ব্যবস্থা না-করে কেন প্রকল্পের উদ্বোধন হচ্ছে প্রশ্ন উঠলে ওই সময় বলা হয় দ্রুত সমস্যা মিটে যাবে। কিন্তু তার পরে কেউ খোঁজ নেয়নি। কিছু জানাতে গেলে বনকর্তারা উলটে অবাক হয়েছেন। কেউ বলেছেন, “নতুন দায়িত্বে এসেছি। কিছু বলতে পারছি না।” বাসিন্দারা খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন বিদ্যুৎ সংযোগের আবেদন পত্রের জটিলতার ফাঁসে আটকে প্রকল্পটি শুরুতে থমকে গিয়েছে। |
জলপাইগুড়ির ডিএফও বিদ্যুৎ সরকার সমস্যার কথা অস্বীকার করেননি। তিনি বলেন, “বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য প্রয়োজনীয় টাকা জমা দেওয়া আছে। স্বনির্ভর গোষ্ঠীর নামে ওই সংযোগ হবে। কিন্তু ভুল করে ব্যক্তিগত নামে আবেদন করায় সমস্যা হয়েছে। আশা করছি কয়েক দিনের মধ্যে বিদ্যুৎ পৌঁছে যাবে।”
যদিও বনকর্তার ওই বক্তব্যে চড়াইমহল গ্রামের বাসিন্দারা আশ্বস্ত হতে পারছেন না। উলটে প্রশ্ন উঠেছে রাজনৈতিক চমক দিতেই কি তড়িঘড়ি এমন উদ্যোগ? সিপিএমের স্থানীয় কৃষক নেতা কেশব রায় বলেন, “জ্বালানির খোঁজ নেই। অথচ গাড়ির চাবি হাতে তুলে দিয়ে চালাতে বলা হল। এটা রাজনৈতিক চমক ছাড়া কী হতে পারে!” বনমন্ত্রী হিতেন বর্মন অবশ্য ওই বিষয়ে খোলাখুলি কিছু জানাতে রাজি হননি। তাঁর সংক্ষিপ্ত উত্তর, “কেন এমনটা হল খোঁজ নিয়ে দেখব।”
বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, গ্রামের মহিলাদের স্বনির্ভর করে তুলতে ৫০ হাজার টাকার ওই প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। পাকা রাস্তার পাশে তৈরি করা হয় টিনের চাল দেওয়া পাকা ঘর। এলাকার বিভিন্ন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের সেখানে বসে থালা তৈরির কাজ করার সুযোগ করে দিতে বসানো হয় দুটি সেলাই এবং একটি ডাইস মেশিন। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনার ভার তুলে দেওয়া হয় ভাগ্যলক্ষ্মী নামে একটি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর হাতে। কিন্তু দায়িত্ব পেয়েও হাত গুটিয়ে বসে থাকতে বাধ্য হয়েছেন সংস্থার সভ্যরা। বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় যন্ত্রপাতি কাজে লাগেনি। ব্যবসাও জমেনি। |
হতাশা ছড়িয়েছে চড়াইমহল ছাড়াও সংলগ্ন কাউয়াগাব, কালামাটির মতো বিভিন্ন গাঁয়ে। জ্যোতি রায়, রেখা রায়, সরলা রায়ের মতো নানা গোষ্ঠীর মহিলারা জানিয়েছেন, প্রায় ৮ বছর ধরে তাঁরা ভাগ্যলক্ষ্মী, বাবা মহাকাল, মা ভান্ডানী ইত্যাদি নামে স্বনির্ভর গোষ্ঠী গড়ে জঙ্গল থেকে শালপাতা এনে কাঠি দিয়ে গেঁথে থালা বিক্রি করছেন। একশো থালা বিক্রি করে মিলছে ২৫ টাকা। কিন্তু সেটা সেলাই করে তৈরি করা হলে প্রায় দ্বিগুণ দাম মিলত। ভাগ্যলক্ষ্মী স্বয়ম্ভর গোষ্ঠীর সভাপতি হরবালা রায় বলেন, “আমরা ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখেছিলাম। কিন্তু কোথায় কী! কিছুই হল না। এ ভাবে আর কত দিন ধরে এই মেশিন পাহারা দিয়ে রাখতে হবে তা জানি না।”
|