পুলিশের গুলি চালানোর ঘটনায় রবিবার তেহট্ট হাইস্কুল মাঠে একটি প্রতিবাদ সভার আয়োজন করেছিল নদিয়া জেলা কংগ্রেস। ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী দীপা দাশমুন্সি, আবু হাসেম খান চৌধুরী, প্রদীপ ভট্টাচার্য, শঙ্কর সিংহ সহ রাজ্য ও জেলা কংগ্রেসের একাধিক নেতা। শনিবার পশ্চিম মেদিনীপুরের লালগড়ের সভায় তেমন ভিড় না হলেও এ দিন তেহট্ট হাই স্কুল মাঠে ভিড় খুব ভালই হয়েছিল বলেই কংগ্রেস নেতাদের দাবি। নদিয়া জেলার ১৭টি ব্লক থেকে মানুষ এসেছিলেন তেহট্টের ওই সভায়। পুলিশের হিসাবে এদিন প্রায় হাজার দশেক মানুষ জমায়েত হয়েছিলেন। এদিন ওই প্রতিবাদ সভায় আহত অখিলেশ ঘোষ উপস্থিত থাকলেও মৃত অশোক সেন ও আহত সুধাময় ঘোষের পরিবারের কেউ উপস্থিত ছিলেন না। তৃণমূলের গৌরীশঙ্কর দত্তও বলেন, “যে পরিবারকে ঘিরে এত কিছু সেই পরিবারের কেউই তো কংগ্রেসের মঞ্চে আসেনি।”
কংগ্রেসের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, অশোকবাবুর পরিবারের লোকজনকে কংগ্রেসের সভায় আসতে দেয়নি তৃণমূল নেতৃত্ব। সেন পরিবারকে তৃণমূলের লোকেরা ‘ভয়’ দেখিয়েছে যে কংগ্রেসের মঞ্চে তারা এলে চাকরির জন্য বিবেচনা করা হবে না। তৃণমূলের গৌরীবাবু অবশ্য বলেন, “এই অভিযোগ ঠিক নয়।” অশোকবাবুর ভাই অজিত সেনও বলেন, “তৃণমূল ভয় দেখিয়েছে, এটা ঠিক কথা নয়। কাল রাত থেকে বৌদি অসুস্থ। হাসপাতালে ভর্তি। সেই কারণেই আমরা কেউ যেতে পারিনি। তবে দীপাদেবী আমাদের বাড়িতে এসে ২৫ হাজার টাকা দিয়ে গিয়েছেন।” আহত সুধাময় ঘোষের স্ত্রী রীতা ঘোষ বলেন, “দীপাদেবী আমাদের বাড়িতেও এসেছিলেন দশ হাজার টাকা দিয়ে গিয়েছেন।” কংগ্রেস সাংসদ সেন ও ঘোষ পরিবারে গিয়ে দেখা করেন ও তাঁদের হাতে নগদ অর্থ তুলে দেন। |
এ দিন শঙ্কর সিংহ বলেন, “বামফ্রন্ট জমানায় যা হয়েছিল, তা যাতে আর না হয়, সেই জন্যই এই সরকারকে এনেছিলেন সাধারণ মানুষ। এখন দেখা যাচ্ছে তৃণমূল সেই বামফ্রন্টের রাস্তাতেই হাঁটছে। আমার চল্লিশ বছরের রাজনৈতিক জীবনে এমন নির্লজ্জ প্রশাসক দেখিনি। কংগ্রেসের সাহায্য নিয়ে রাজ্যে ক্ষমতায় এসেছে তৃণমূল, আমাদের সাহায্য নিয়েই মুখ্যমন্ত্রী মহাকরণে যেতে পেরেছেন এখন তারা কংগ্রেসকেই শেষ করতে চাইছে। এটা আমরা কিছুতেই হতে দেব না। আমরা এ বার একা লড়াই করে বুঝিয়ে দেব যে কংগ্রেস ছিল, আছে এবং থাকবে। সিপিএমকে উৎখাত করতে আমরা তৃণমূলের জন্য অনেক কিছু ত্যাগ করেছি, আর নয়।”
সাংসদ আবু হাসেম খান চৌধুরী মুখ্যমন্ত্রীকে ‘অহঙ্কারী’ বলে কটাক্ষ করে বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী অহঙ্কারী কারণ তিনি অনেক ভোটে জিতেছেন। কিন্তু তাতে যে আমাদেরও অবদান রয়েছে, সে কথা তিনি ভুলে গিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী জেদ ধরেছেন, জমি দেব না। তা হলে শিল্প কি আকাশে হবে?” তাঁর কথায়, “রাজ্যে কোথাও কোনও উন্নয়ন হচ্ছে না, মুখ্যমন্ত্রী কাগজ-কলমে লক্ষ লক্ষ চাকরি দিচ্ছেন, কিন্তু বাস্তবে কিছুই হচ্ছে না। আমরা যে ভাবে সিপিএমকে ছুড়ে ফেলেছিলাম, সে ভাবে তৃণমূলকেও ছুড়ে ফেলে দেব।”
কংগ্রেসের প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেন, “তেহট্টের ঘটনার সিবিআই তদন্ত হওয়া উচিত। তেহট্টের ঘটনা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ও জেলাশাসক প্রথমে প্রচুর আজেবাজে কথা বলেছিলেন, সে সব কথা ঠিক নয়। এই সরকার সুস্থ নয়।” তাঁর কথায়, “আসলে কোনও পরিবর্তনই হয়নি। সিপিএম ও তৃণমূলের কোনও ফারাকই নেই। মাথা নিচু করে স্বীকার করছি যে, সিপিএমকে তাড়াতে তৃণমূলকে আমরা সমর্থন করেছিলাম। কিন্তু আর নয়। এ বার আমরা একাই লড়াই করব, আগামি পঞ্চায়েত নির্বাচনে কংগ্রেস ভাল ফল করতে পারবে।” তৃণমূল ও সিপিএমের পঞ্চায়েতগুলোতে চুরি চলছে। তাঁর কথায়, “কেন্দ্রীয় প্রকল্পের লক্ষ লক্ষ টাকা আসছে। কিন্তু রাজ্য সরকার কোনও কাজই করছে না। কেন্দ্রের প্রকল্পগুলো সামনে রেখে মানুষের কাছে আমাদের পৌঁছতে হবে।”
এ দিন বক্তৃতা করার সময়ে মাইকে একবার গোলমাল হলে দীপা বলেন, “কংগ্রেসের কন্ঠকে এত সহজে বন্ধ করে দেওয়া যাবে না।” দীপা বলেন, “সিপিএমের বি টিম তৃণমূল। কিছু দিন আগে বলা হয়েছিল, সিপিএমের কারও সঙ্গে চা খাওয়া যাবে না, ওদের পরিবারের সঙ্গে বিয়ে দেওয়া যাবে না, এখন মমতা নিজেই বলছেন যে, তিনি আলিমুদ্দিনে গিয়ে মিটিং করবেন। তৃণমূলকে কখনওই বিশ্বাস করা যায় না। ভবিষ্যতে পঞ্চায়েত নির্বাচনে ত্রিমুখী লড়াই হবে।” দীপা বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর ও তাঁর দলের লোকের অনেকেরই মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ প্রয়োজন, ওরা কোনও বিকারে ভুগছেন।”
তৃণমূলের গৌরীশঙ্করবাবু অবশ্য বলেন, “ভারতে এখন সর্বত্র কংগ্রেসের ভরাডুবি হচ্ছে। তাই কংগ্রেস এখানে কী বলে গেল, তাতে তৃণমূলের কিছুই যায় আসে না। কংগ্রেস এখন ঘোলা জলে মাছ ধরতে নেমেছে। পঞ্চায়েত নির্বাচনে আমরাই জিতব।” |