দীপাদের অস্ত্র হলদিয়া-তেহট্টও
কংগ্রেস-তৃণমূল তুমুল তরজা জঙ্গলমহল নিয়ে
সাম্প্রতিক যে ঘটনাগুলিতে সমালোচনার মুখে পড়েছে তৃণমূল সরকার, সেগুলিকে তুরুপের তাস করেই জমি শক্ত করতে চাইছে কংগ্রেস। জঙ্গলমহল থেকে হলদিয়া, তেহট্ট রয়েছে সেই তালিকায়। পাল্টা কর্মসূচি নিয়েছে তৃণমূলও।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীদের উপস্থিতিতে শনিবার লালগড়ে সভা করে কংগ্রেস। জয়রাম রমেশ, দীপা দাশমুন্সি, অধীর চৌধুরীরা তথ্য দিয়ে দাবি করেন, জঙ্গলমহলে উন্নয়নের নানা প্রতিশ্রুতি দিলেও তা রক্ষায় আদতে ব্যর্থ মমতা। রবিবার কংগ্রেস নেতা-নেত্রীরা বিভিন্ন জেলায় গিয়ে সেই ব্যর্থতার অভিযোগই তোলেন। নদিয়ার তেহট্টে দীপা বলেন, “গুলিচালনার পরেও অপদার্থ পুলিশের সুপারকে সরানো হল না।” অন্য দিকে, হলদিয়ায় রেল কারখানা পরিদর্শনে গিয়ে এবিজি’র কাজহারা শ্রমিকদের অবস্থান-মঞ্চে পৌঁছে যান অধীর। এবিজি-বিদায় পর্বে তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি’র ভূমিকা নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছিল। ফলে, এ দিন অধীরের কাজহারা শ্রমিকদের ধর্নামঞ্চে পৌঁছে যাওয়া আসলে শিল্পশহরে কংগ্রেসের রাজনৈতিক জমি দখলের চেষ্টা বলেই মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।
সম্প্রতি পুলিশের গুলিতে এক জনের মৃত্যু ঘিরে উত্তপ্ত হয়েছিল নদিয়ার তেহট্ট। সেই ঘটনার পরে তেহট্টে গিয়েও ঘটনাস্থলে পৌঁছতে পারেননি দীপা। ১৪৪ ধারার ঘেরাটোপে আটকে যান কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী। এ দিন তেহট্টে প্রত্যাশিত ভাবেই তীব্র আক্রমণ করেছেন মুখ্যমন্ত্রীকে। দীপার কথায়, “মুখ্যমন্ত্রী কাজের কাজ কিছু করছেন না। গান, কবিতা, ছড়া, বিচিত্রানুষ্ঠান এই সব করে বেড়াচ্ছেন।” জঙ্গলমহলে ‘শ্মশানের শান্তি বিরাজ করছে’ বলেও মন্তব্য করেন রায়গঞ্জের কংগ্রেস সাংসদ। তাঁর বক্তব্যে উঠে আসে এইমসের ধাঁচে হাসপাতাল করার প্রসঙ্গও। দীপার আশ্বাস, “সব নিয়ম মেনেই রায়গঞ্জে আমরা হাসপাতাল করব। এ নিয়ে আগামী ১০ জানুয়ারি মহাকরণ অভিযান হবে।” তেহট্টে পুলিশের গুলিতে নিহতদের পরিজনদের সঙ্গেও দেখা করেন দীপা। এ দিন বসিরহাটে দীপা বলেন, “তৃণমূল সরকার গঠন করার পরেই কংগ্রেসকে শেষ করে দেওয়ার চক্রান্ত শুরু করে। মনে রাখবেন, বাংলার মাটি রক্তাক্ত হবে, আর আমরা চুপ করে থাকব, সেটা হবে না।”
তেহট্টের মঞ্চে শঙ্কর সিংহ ও দীপা দাশমুন্সি। —নিজস্ব চিত্র
এ রাজ্য থেকে কংগ্রেসের আর এক কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী অধীরবাবু রবিবার দিনভর কাটান হলদিয়ায়। হাতিবেড়িয়ায় রেলের ডিএমইউ ইঞ্জিন তৈরির কারখানা পরিদর্শনে এসেছিলেন রেল প্রতিমন্ত্রী। সেখান থেকে বেরোনোর সময় তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা রেল প্রতিমন্ত্রীর কনভয় ঘিরে বিক্ষোভ দেখান। প্রকল্প এলাকায় কাজ পাওয়ার দাবিতেই ছিল তাঁদের বিক্ষোভ। সেই সময় অধীরবাবুকে ফুল দিয়ে বরণ করে পাল্টা স্লোগান দেন কংগ্রেস সমর্থকেরাও। নিরাপত্তাক্ষীরা বিক্ষোভ হটিয়ে দিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। হাতিবেড়িয়া থেকে অধীরবাবু সোজা চলে যান সুতাহাটার নন্দরামপুরে এবিজি-র কাজহারা শ্রমিকদের অবস্থান-মঞ্চে।
অধীরবাবু বলেন, “আমরা এবিজিকে হয়তো আনতে পারব না। এবিজি সম্পর্কেও নানা অভিযোগ রয়েছে। এবিজি বা তার প্রতিযোগী সংস্থা কেউ-ই শ্রমিকদের খাতির করবে না। এই শ্রমিকদের দেখার দায়িত্ব বন্দরের। বন্দরের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে হবে।”
কংগ্রেসের এই রাজনৈতিক প্রচারের জবাব দিতে আসরে নেমেছে তৃণমূলও। এ দিন তৃণমূল সভা করে পশ্চিম মেদিনীপুরের রামগড়ে। মুখ্য বক্তা ছিলেন দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী, সাংসদ তথা যুব তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি শুভেন্দু অধিকারী, রাজ্যের মন্ত্রী সুকুমার হাঁসদা প্রমুখ। লালগড়ে কংগ্রেসের পাল্টা হিসেবে এই সভার প্রচার চলছিল অনেক দিন ধরে। তবে এ দিন তৃণমূল নেতৃত্বকে জোরালো ভাবে উন্নয়নের খতিয়ান দিয়ে কংগ্রেস নেতাদের বক্তব্য খণ্ডন করতে শোনা যায়নি। শুভেন্দু শুধু বলেন, “লালগড়ে সেতু তৈরি হবে। শিলান্যাস হয়েছে। ভসরাঘাটে সেতু তৈরি হবে। কত আর উন্নয়নের কথা বলব? মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগে জঙ্গলমহলের ছেলেমেয়েরা জুনিয়র কনস্টেবল-হোমগার্ডের চাকরি পেয়েছেন। আশা করেছিলাম, জয়রাম রমেশ এখানে ঘোষণা করবেন, ২৩টি ব্লক থেকে ২৩ হাজার লোক সিআরপিতে নিয়োগ করা হবে। তা হল না।” সুব্রতবাবুর কথায়, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জঙ্গলমহলে পা রাখার পর বিডিও অফিস খুলেছে। মানুষ একশো দিনের কাজের প্রকল্পে কাজ পাচ্ছেন। স্কুল-কলেজ খুলেছে। মানুষকে আর হেঁটে জল আনতে যেতে হয় না। সাইকেলে করে গিয়ে জল আনছেন।” কংগ্রেসের নেতৃত্বকে ‘পরিযায়ী পাখি’ বলে কটাক্ষও করেন তৃণমূল নেতারা। এ প্রসঙ্গে কংগ্রেস বিধায়ক মানস ভুঁইয়ার প্রতিক্রিয়া, “আমরা শুরু থেকেই জঙ্গলমহলের মানুষের পাশে আছি। নেতাইয়ের ঘটনার পর প্রতিনিধি দল নিয়ে সেখানে গিয়েছি।”
এ দিন রামগড়ের সভা থেকে শুভেন্দু ঘোষণা করেন নেতাই-কাণ্ডের স্মরণে আগামী ৭ জানুয়ারি লালগড় থেকে নেতাই পর্যন্ত মিছিল হবে।
পঞ্চায়েত ভোট যত এগিয়ে আসছে, একদা শরিক এই দুই দলের পরস্পরের বিরুদ্ধে তোপের জোরও ততই বাড়ছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.