|
|
|
|
ত্রুটি পরিকল্পনাতেই |
১০ বছরেও শেষ হয়নি সেতুর কাজ
সুমন ঘোষ • মেদিনীপুর |
একটি সেতুর কাজ শুরু হয়েছিল ২০০২ সালের মে মাসে। অন্য সেতুটি ২০০৩ সালের মার্চে। ২০১২ সাল শেষ হতে চলল। কিন্তু এখনও সেতু দু’টি চালু করা যায়নি। এমনকী চালু করা নিয়ে সংশয়ে পূর্ত দফতরের কর্তারাও। প্রথম সেতুটি হল, দাসপুরের যশাড়ে। আর দ্বিতীয়টি ডেবরার লোয়াদাতে। দু’টিই কংসাবতীর উপর।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, রূপনারায়ণ নদী ঘেঁষে তৈরি হওয়া যশাড় সেতুর ওয়ার্ক অর্ডার দেওয়া হয়েছিল ২০০২ সালের ২২ মে। ব্যয় ধরা হয়েছিল ৪ কোটি ২৫ লক্ষ টাকা। এখনও বাকি রয়েছে সেতুর দু’টি স্প্যান ও একটি গুরুত্বপূর্ণ পিলার তৈরির কাজ। নদীতে জোয়ার-ভাঁটা হওয়ায় সাধারণ যন্ত্র দিয়ে পিলার তৈরি সম্ভব নয় এই অজুহাতে কর্তব্যরত ঠিকাদার সংস্থটি কাজ ছেড়ে দেয়। পূর্ত দফতর জানিয়েছে, এই সেতু নির্মাণে প্রায় ১ কোটি টাকা পড়ে রয়েছে। জেলা সভাধিপতি অন্তরা ভট্টাচার্য জানান, ওই সেতু নির্মাণের জন্য প্রয়োজনে আরও ১ কোটি টাকা তাঁরা দেবেন। তবু কাজ না হওয়ার কারণ? পূর্ত দফতর জানিয়েছে, জোয়ার-ভাটা এলাকায় পিলার তৈরির যন্ত্র যে সমস্ত বড় ঠিকাদারের কাছে থাকে তাঁরা ১০০ কোটি টাকার নীচে কাজ ধরেন না। তাই এই অবস্থা। |
দাসপুরের যশাড়ে অসম্পূর্ণ সেতু তৈরির কাজ। ছবি: কৌশিক সাঁতরা। |
সেতু তৈরি হলেও সমস্যা থাকছে। কারণ, দাসপুরের মানুষ যাতে সহজে কোলাঘাট পৌঁছতে পারেন সে জন্যই সেতুটি তৈরি করা হয়েছিল। গোপালনগর হয়ে সোজা কোলাঘাট পৌঁছতে পারলে অনেক কম সময়ে কলকাতায় যেতে পারবেন তাঁরা। কিন্তু সেতু পেরিয়ে যে রাস্তা রয়েছে তা খুবই সঙ্কীর্ণ। বাস চলাচলের উপযোগী করতে হলে ৮ কিলোমিটার রাস্তা করতে হবে। সেক্ষেত্রে জমি অধিগ্রহণ করে রাস্তা বানিয়ে তা গোপীগঞ্জ সড়কে জুড়তে হবে। নাহলে সেতুটি তৈরি হলেও মানুষ সুবিধা পাবেন না।
অন্য দিকে, লোয়াদা সেতু নির্মাণের ওয়ার্ক অর্ডার দেওয়া হয়েছিল ২০০৩ সালের ৩ মার্চ। ব্যয় ধরা হয়েছিল প্রায় ৬ কোটি ৫৬ লক্ষ টাকা। ২০০৫ সালে লোহার দাম বেড়ে যাওয়ায় একটি স্প্যান তৈরি অসম্পূর্ণ রেখেই কর্তব্যরত ঠিকাদার সংস্থাটি চলে যায়। তবে, সেতু নির্মাণের কাজ শেষ হলেও সংযোগকারী রাস্তা নেই। একদিকে রয়েছে চাষ জমি। অন্য দিকে লোয়াদার ঘিঞ্জি বাজার। প্রশাসন সূত্রে খবর, সেতু নির্মাণ শেষ করে দু’দিকে রাস্তা তৈরি করতে পরিকল্পনা দফতর ২৭ কোটি ৫৯ লক্ষ টাকার একটি পরিকল্পনা নিয়েছে। যদি রাজ্য সরকার তা অনুমোদন করে ও জমি অধিগ্রহণ সুষ্ঠু ভাবে হয়, তবেই এই কাজ শেষ সম্ভব। সব মিলিয়ে প্রায় সাড়ে ৬ একর জমির প্রয়োজন। এই জন্য বিধায়কের উদ্যোগে তৈরি হয়েছে একটি কমিটিও। কিন্তু বাস্তবে তা কতটা কার্যকর হবে তা নিয়ে রয়ে গিয়েছে সংশয়। ফলে ডেবরার সঙ্গে দাসপুর ও কেশপুর এলাকার সংযোগ ঘটাতে যে সেতু নির্মাণ করা হয়েছিল, আজও সেই সংযোগ ঘটানো যায়নি। হয় মেছোগ্রাম, নয় মেদিনীপুর হয়ে ঘুরপথেই অন্য এলাকায় যেতে হয়। |
দীর্ঘ দিন ধরেই বন্ধ ডেবরার লোয়াদায় সেতু তৈরির কাজ। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল। |
দীর্ঘ দিন ধরে অধর্সমাপ্ত সেতুর কাজ সম্পূর্ণ না হওয়ায় ক্ষুব্ধ স্থানীয় দুই তৃণমূল বিধায়কও। ডেবরার বিধায়ক রাধাকান্ত মাইতি বলেন, “সেতু চালুর জন্য মুখ্যমন্ত্রী সাহায্য করবেন বলে জানিয়েছেন। যাতে জমি অধিগ্রহণে সমস্যা না হয় সে জন্য একটি কমিটিও তৈরি করা হয়েছে। ৬২ জনের জমি রয়েছে ওই এলাকায়। সেতুর জন্য তাঁদের বেশির ভাগই জমি দিতে আগ্রহী।” আর যশাড় সেতু নিয়ে দাসপুরের বিধায়ক মমতা ভুঁইয়া বলেন, “অবাক লাগছে, কেন এখনও কাজটি অসম্পূর্ণ হয়ে পড়ে রয়েছে। আমার প্রথম কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পরিকল্পনার মধ্যেই রয়েছে যশাড় সেতু নির্মাণ শেষ করে তা চালু করা।” পূর্ত দফতরের এক আধিকারিকের কথায়, “পরিকল্পনাতেই ভুল থাকার কারণেই এই সমস্যা।” পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের বর্তমান সভাধিপতি অন্তরা ভট্টাচার্য বলেন, “যশাড়ে ঠিকাদারি সংস্থাটি সমস্যা করছে। আর লোয়াদাতে সংযোগকারী রাস্তার জন্য জমি না মেলায় চালু করা যায়নি।” পূর্ত দফতরের এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার অশোক মণ্ডলের সংক্ষিপ্ত জবাব, “দু’টি সেতুরই বকেয়া কাজ সম্পূর্ণ করার জন্য পদক্ষেপ হচ্ছে। পরিকল্পনা দফতরকে দিয়ে পরিকল্পনাও তৈরি করা হচ্ছে।”
এমনই বেহাল অবস্থা জেলার আরও কয়েকটি সেতুর। যেমন সবংয়ের দেভোগে কপালেশ্বরী নদীর উপর একটি সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছিল প্রায় বছর দেড়েক আগে। মাঝ পথেই সেই কাজ বন্ধ হয়ে যায়। সভাধিপতি জানান, এই সেতু নির্মাণের জন্য ৪ কোটি ৫৬ লক্ষ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছিল। প্রথম ধাপে রাজ্য সরকার ২ কোটি টাকা দিয়েছিল। তারপর আর টাকা মেলেনি। ফলে বন্ধ কাজ। সেতুটি হলে সবংয়ের সঙ্গে খড়্গপুর, নারায়ণগড়, কেশিয়াড়ির যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হবে। সবংয়ের কংগ্রেস নেতা বিকাশ ভুঁইয়া বলেন, “সেতু নির্মাণ শেষ না হওয়ায় মানুষকে দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। দ্রুত সেতু নির্মাণ শেষের দাবি জানিয়েছি। সভাধিপতি বলেন, “সরকার টাকা দিলেই কাজ শুরু করে দেব।” |
|
|
|
|
|