ভারতের হয়ে যতই কপিল দেব, জাহির খান, বিষেণ বেদীরা মাঠে নেমে থাক, ভারতীয় ক্রিকেটের আসল রাজা বরাবরই ব্যাটসম্যানরা। আর ঘরের মাঠে ওদের যে দোর্দণ্ড প্রতাপ দেখা যায়, তেমনটা বিশ্বের আর অন্য কোথাও দেখা যায় না। গত কয়েক দশকে এ দেশের শুকনো, ন্যাড়া, নিচু বাউন্সের উইকেটে রানের পাহাড় গড়ে শুরু থেকেই প্রতিপক্ষকে তার তলায় পিষে ফেলার শিল্পটায় ওরা ওস্তাদ হয়ে উঠেছে।
আজ, সেই ব্যাটসম্যানরাই ডোবাচ্ছে ভারতকে!
আমি অবশ্য ‘সেই ব্যাটসম্যানরাই’ বলার সময় মোটেই সেই সব ব্যাটসম্যানের কথা বলছি না। ইডেনের হারের পর ভারতকে মানতেই হবে, রাহুল, সৌরভ, লক্ষ্মণদের ফাঁকা জায়গাগুলো ভরাট করা কী অসম্ভব কঠিন হচ্ছে। সচিনও আর খুব বেশি দিন খেলবে না। এই অবস্থায় গম্ভীর, সহবাগ, যুবরাজ আর ধোনিদেরই সিনিয়র হিসেবে দলের হাল ধরতে হবে। কিন্তু এরা ব্যাট করতে গিয়ে বারবার এমন সব ভুল করছে যা কখনও ক্ষমা করা যায় না। ব্যাটসম্যানরা যথেষ্ট রান তুলতে পারছে না বলে ভারতের বোলাররাও একটানা চাপে থাকছে। আর ভারতীয় বোলিং আক্রমণ মাঝারিমানের বলে ওদের কাজটা আরও কঠিন হচ্ছে।
ইডেনের পিচে দলের প্রথম সারির ব্যাটসম্যানদের কী ভাবে খেলা উচিত ছিল সেটা দেখিয়ে গেল অশ্বিন! ভারতীয় সমর্থকদের দেখতে হল গম্ভীর রান আউট করছে সহবাগ আর পূজারাকে। সহবাগ অফ স্টাম্পের অনেক বাইরের ডেলিভারি তাড়া করে উইকেট ছুড়ে দিয়ে আসছে দ্বিতীয় ইনিংসে। আর গত মরসুমে ভারতের নতুন প্রজন্মের মধ্যে যে ছিল সেরা, সেই বিরাট কোহলি ফুটওয়ার্ক আর আত্মবিশ্বাস, দু’টোই হাতড়ে বেড়াচ্ছে।
যুবরাজ আবার সীমিত ওভারের ক্রিকেটে বিশ্বের তাবড় বোলারদের আতঙ্ক হওয়া সত্ত্বেও টেস্ট ক্রিকেটে কিছুতেই মানিয়ে নিতে পারছে না। টেস্টে যুবরাজের ৩৪.৩৮ গড়ই বলে দিচ্ছে বেশির ভাগ সময় ও ভদ্রস্থ রানকে ম্যাচ জেতানো ইনিংসে পরিণত করায় মন দেয় না। ইডেনে গম্ভীর, সচিন আর ধোনিও যুবরাজের মতো একই দোষে দোষী ছিল। টেস্টে ব্যাটসম্যান একবার তিরিশ পেরিয়ে গেলে বিশেষ কোনও কেরামতি দেখিয়ে তাকে আউট করার দায়টা বোলারের থাকে। কারণ, তিরিশ করার পরে কোনও ব্যাটসম্যান নিজের উইকেট ছুড়ে দিয়ে আসে না। অথচ ইদানীং ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা বারবার সেটাই করছে।
ধোনির মুণ্ডু চাই বলে ইতিমধ্যেই চেঁচামেচি শুরু হয়েছে। ভারতীয় সমর্থকদের কিন্তু বুঝতে হবে, দলের ব্যাটিংয়ের ধারাবাহিক ব্যর্থতার জন্য ধোনি একা দায়ী নয়। তবে হ্যাঁ, নেতা হিসেবে ও সীমিত ওভারের ক্রিকেটেই বেশি মানানসই। যেখানে ও ‘ক্যাপ্টেন কুল’। যেখানে তুমুল উত্তেজনার মুখেও ওর ঠান্ডা মাথায় সিদ্ধান্ত নেওয়ার অসাধারণ ক্ষমতা থেকে অন্যদের অনেক কিছু শেখার আছে। কিন্তু পাঁচ দিনের ক্রিকেটে ধোনি যেন খানিকটা খেই হারিয়ে ফেলে যেন হাল ছেড়ে দেয়।
ভারতের কি টেস্ট আর সীমিত ওভারের ক্রিকেটে আলাদা আলাদা ক্যাপ্টেন বাছার সময় এসেছে? প্রশ্নটার উত্তর দেওয়ার জায়গায় আমি নেই। তবে ভারত যদি নিজেদের গুছিয়ে তুলতে না পারে, তা হলে কিন্তু সিরিজে ওদের হার হচ্ছেই। তা সে নাগপুরের ফল যা-ই হোক!
|