|
|
|
|
‘সুপার সিলেক্টর’ এ বার বাদ দিলেন যুবরাজদের |
রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায় ও প্রিয়দর্শিনী রক্ষিত • কলকাতা |
সন্দীপ পাটিল। রজার বিনি। সাবা করিম। বিক্রম রাঠৌর। রাজিন্দর সিংহ হংস।
জাতীয় নির্বাচক কমিটির এই পাঁচ সদস্যের টিমে সর্বশক্তিমান কে? ক্রিকেটারদের চূড়ান্ত ভাগ্য কে ঠিক করেন?
ভারতীয় ক্রিকেট-অলিন্দে যাঁদের যাতায়াত কম, তাঁরা বলবেন সন্দীপ পাটিল। তিনিই তো প্রধান নির্বাচক। কিন্তু পাটিল নন। ওই পাঁচেরই কেউ নন। তিনি এন শ্রীনিবাসন। এবং বোর্ড প্রেসিডেন্টই যে ভারতীয় ক্রিকেটের ‘সিক্সথ অ্যান্ড সুপার সিলেক্টর’, সেটা আরও একবার প্রমাণ হয়ে গেল রবিবাসরীয় ইডেনে।
রবিবারের মহানাটকীয় দল নির্বাচনী সভাও যার দলিল হিসেবে থেকে গেল। শ্রীনিবাসনের এক ফোনে নাগপুর টেস্ট থেকে বাদ পড়ে গেলেন যুবরাজ সিংহ। সঙ্গী জাহির এবং হরভজন। শেষ কবে ভারতীয় দল থেকে তিন সিনিয়রকে একই সঙ্গে ছেঁটে ফেলা হয়েছে, বার করতে গেলে ক্রিকেট-পরিসংখ্যানবিদের হাত ব্যথা হয়ে যাবে।
ইডেনে টেস্ট হারার ঘণ্টা দেড়েকের মধ্যে শুরু হওয়া নির্বাচনী বৈঠক দেখল নাটকের পর নাটক। যুবরাজ নিয়ে নির্বাচকরা সহানুভূতিশীল হয়ে পড়েও বোর্ড প্রেসিডেন্টের ফোনে মত পাল্টালেন। বাদ পড়ে যুবি-জাহিররা নির্বাচক প্রধানের ফোন ধরলেন না। টেস্ট দলের জন্য আচমকা ভেসে উঠল মনোজ তিওয়ারির নাম।
|
|
ইডেনের সাত-সকাল। নির্বাচকদের মুখোমুখি ধোনি। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস |
মহেন্দ্র সিংহ ধোনিও তো অক্ষত থেকে গেলেন। অনেকেই মনে করছিলেন, দেশের মাঠে এমন বিপর্যয়ের পর ধোনি নিজেই সরে দাঁড়াবেন। কিন্তু তা না করে ভারত অধিনায়ক বলে দিলেন, “ক্যাপ্টেন্সি ছেড়ে দেওয়াটা এখন সবচেয়ে সহজ। কিন্তু সেটা করলে দায়িত্ব থেকে পালিয়ে যাওয়া হবে। যখন টিম ভাল খেলছে, তখন তাদের অধিনায়কের সে ভাবে দরকার পড়ে না। খারাপ সময়ে অধিনায়কত্ব করাটাই তো চ্যালেঞ্জ। বাকিটা বোর্ড আর নির্বাচকরা বুঝবেন।” নাগপুরে যুবরাজ খেলবেন কি না, তা ঠিক করতেই এ দিন ঘণ্টা খানেকের উপর বেরিয়ে যায়। নির্বাচকদের কেউ কেউ বলেন, আরও একটা টেস্ট দেখা যাক। কিন্তু তার ফাঁকেই বোর্ড প্রেসিডেন্ট ফোন করেন সচিব সঞ্জয় জাগদালেকে। জিজ্ঞেস করেন, এই পারফরম্যান্সের পর যুবরাজদের রাখা কতটা যুক্তিযুক্ত? বার্তাটা ধরতে খুব অসুবিধা হয়নি নির্বাচকদের। মাঠ থেকে ডেকে পাঠানো হয় ধোনি-ফ্লেচারকে। টিম ইন্ডিয়া তখন ফুটবলে ব্যস্ত। প্রথমে অধিনায়ক-কোচের সঙ্গে আলাদা করে কথা বলেন বোর্ড সচিব। ধোনিদের নিয়ে ঢোকেন মিটিং রুমে। যুবরাজ নিয়ে বোর্ডের অবস্থান পরিষ্কার। ‘মৃত্যুঞ্জয়ী’কে ঘিরে আবেগ পরে, পারফরম্যান্স আগে। ইডেনের ব্যাটিং ট্র্যাকেও কেন রান পাবেন না যুবরাজ? কেন জেমস অ্যান্ডারসনের বলে ও ভাবে গড়াগড়ি খাবে তাঁর স্টাম্প? |
বিশেষজ্ঞদের বিচারসভায় |
সুনীল গাওস্কর |
জাহিরের বাদ পড়াটা প্রত্যাশিত কিন্তু যুবরাজ আর হরভজনকে বলির পাঁঠা করা হল। মুম্বইয়ে ভারত হারে দলগত ব্যর্থতায়। হরভজনের জন্য নয়। যুবরাজও পরপর তিরিশের ঘরে রান পেয়েছে। যদি তুমি এই দু’জনকে বাদ দাও তা হলে অন্য যারা পারফর্ম করতে পারেনি তাদেরই বা নয় কেন? |
মহম্মদ আজহারউদ্দিন |
ভারতীয় দলের পারফরম্যান্সকে নারকীয় বললেও বোধহয় ভুল বলা হবে না। সময় এসেছে আরও বেশি করে তরুণ ক্রিকেটারদের সুযোগ দেওয়ার... |
গৌতম মুখোপাধ্যায় (ক্যানসার শল্যচিকিৎসক) |
ব্যর্থ তো অনেকেই হয়েছে। যুবরাজ তো তা-ও একটা টেস্টে ৭৪ করেছিল। ক্যানসার রুগী বলেই কি ওকে ছেঁটে ফেলা হল? বিপর্যয়ের জন্য যুবরাজকে একা কেন বেছে নেওয়া হল? আমি এর তীব্র প্রতিবাদ করছি। চারদিকে এর প্রতিবাদ হওয়া উচিত। |
|
যুবরাজের সঙ্গে যাঁর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটজীবন শুরু, সেই জাহির খানকে নিয়ে আবার নতুন প্রশ্ন উড়ছে রবিবারের পর। জাহিরের ভবিষ্যৎ এ বার কী? এক যুগ ধরে ভারতীয় পেস ব্যাটারির দায়িত্ব সামলানো জাহিরকে কি আর নতুন বল হাতে দেখা যাবে টেস্টে? বয়স হয়েছে। জাহির এখন চৌত্রিশ। পারফরম্যান্স তো বটেই, তাঁর ফিটনেস থেকে শরীরী ভাষা কোনও কিছুই ভাল লাগেনি নির্বাচকদের।
বৈঠক শেষে যুবরাজ-জাহিরকে ফোন করেছিলেন পাটিল। কিন্তু কেউই নির্বাচক প্রধানের ফোন ধরেননি! ততক্ষণে সব চ্যানেলেই ব্রেকিং চলছে, যুবরাজের জায়গায় রবীন্দ্র জাডেজা। জাহিরের বদলি দিল্লি পেসার পরবিন্দর আওয়ানা।
হরভজন সিংহ বাদ পড়তেনই। পড়েছেন। নির্বাচকরা মনে করেছেন, অফস্পিনার কমিয়ে একজন লেগস্পিনার রাখা ভাল। তাই পীযূষ চাওলা। পনেরো জনের স্কোয়্যাডে মনোজের নাম রেখেও পরে কেটে দেওয়া হল রঞ্জিতে তাঁর সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স ভাল নয় বলে। মনোজকে টি-টোয়েন্টি দলে রাখা হয়েছে (যে দল থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন সহবাগ)। যেখানে অশোক দিন্দাও আছেন। কিন্তু পিঠের পেশি ছিঁড়ে যাওয়ায় মনোজ হয়তো মাসখানেক বাইরে। নির্বাচকদের নতুন চিন্তায় ফেলে। |
নাগপুর টেস্টের দল |
মহেন্দ্র সিংহ ধোনি (অধিনায়ক), বীরেন্দ্র সহবাগ, গৌতম গম্ভীর, সচিন তেন্ডুলকর, বিরাট কোহলি, চেতেশ্বর পূজারা, রবীন্দ্র জাডেজা, রবিচন্দ্রন অশ্বিন, পীযূষ চাওলা, ইশান্ত শর্মা, অজিঙ্ক রাহানে, অশোক দিন্দা, মুরলী বিজয়, পারবিন্দর আওয়ানা। |
টি-টোয়েন্টি সিরিজের দল |
ধোনি (অধিনায়ক), গম্ভীর, রাহানে, কোহলি, রোহিত শর্মা, রায়না, যুবরাজ, মনোজ তিওয়ারি, অশ্বিন, জাডেজা, চাওলা, দিন্দা, ভুবনেশ্বর কুমার, বালাজি, আওয়ানা। |
|
|
|
|
|
|