মুম্বই আর কলকাতা, দু’টো টেস্টেই ভারত টস জিতে ইংল্যান্ডের ঘাড়ে বিশাল রানের বোঝা চাপিয়ে দেওয়ার সুযোগ পেয়েও দু’বারই সেটা কাজে লাগাতে পারল না। ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের ‘ইগো’ নিয়ে ইংরেজ বোলাররা খেলা করেছে। ওদের চাপে রেখেছে। চরিত্রগত ভাবে ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা আক্রমণাত্মক। বেশি বাউন্ডারি মারতে চায়। ইংল্যান্ডের শৃঙ্খলাবদ্ধ বোলিং, পরিস্থিতি অনুযায়ী লেংথ আর লাইনে বল করার পরিকল্পনা, মাঠে সেই পরিকল্পনা সার্থক ভাবে প্রয়োগ করাএগুলো ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের স্বাভাবিক ব্যাটিং প্রবণতায় ব্রেক কষে দিয়েছিল। ইংরেজ বোলিং রীতিমতো সাফল্যের সঙ্গে টপ অর্ডারের ধৈর্যের পরীক্ষা নিয়েছে। বীরু আর গৌতমের মাধ্যমে ভারতের শুরুটা আশাব্যঞ্জক হলেও একবার বীরু রান আউট হতেই আর কোনও ব্যাটসম্যান তাদের শুরুটাকে বড় রানে পরিণত করতে পারেনি। পানেসর আর সোয়ান, দুই স্পিনারই আমাদের চাপে রেখেছিল। যেটা আরও বেশি মারাত্মক হয়ে উঠেছিল সেটা হল, অ্যান্ডারসন (বিশেষ করে প্রথম ইনিংসে) আর ফিনের রিভার্স সুইং। স্লো উইকেটে ব্যাটসম্যানের সফল হওয়ার প্রধান অস্ত্র হল ধৈর্য। যেটা কুক দেখিয়ে চলেছে। পূজারাও প্রথম দু’টো টেস্টে দেখিয়েছিল। ইংল্যান্ডের শৃঙ্খলাবদ্ধ বোলিংয়ের জন্য ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা খুব কম ‘লুজ’ ডেলিভারি পেয়েছে। পাশাপাশি আমাদের কয়েকজন ব্যাটসম্যান আউট হয়েছে অহেতুক রান তৈরি করতে গিয়ে। ইডেনে ভারতের দু’টো ইনিংসে দু’টো গুরুত্বপূর্ণ রান আউট হল। ওপেনার বা তিন নম্বরের রান আউট হওয়াটা যে কোনও ব্যাটিং দলেরই সবচেয়ে অপছন্দের। সহবাগ আর পূজারার সৌজন্যে সেটাই ভারতকে দেখতে হল। বহু দিন বাদে ঘরের মাঠে ভারতকে পরপর দু’টো টেস্টে হারতে দেখাটা ভীষণ হতাশাজনক। ইংল্যান্ড শেষ দুটো টেস্টে, বিশেষ করে ইডেনে যে ভাবে খেলল, সেটা দেখে আমাদের গত ইংল্যান্ড সফরে টেস্ট সিরিজের কথা মনে পড়ছে। যখন ওদের ব্যাটসম্যানরা বিশাল রান করত আর ওদের শৃঙ্খলাবদ্ধ বোলিংয়ের সামনে ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা চাপে থাকত। ইডেনে ইংরেজ ব্যাটসম্যানরা একবার জমে যাওয়ার পর এবং ভারতীয় বোলাররা যখন উইকেট তোলার চেষ্টা চালাচ্ছে, সেই সময় প্রায় প্রতিটা লুজ বলেরই ফায়দা তুলেছে।
ভারতের প্রথম ইনিংসে গম্ভীর-সচিনের হাফসেঞ্চুরি দুটো সেঞ্চুরিতে পরিণত হলে যেমন ইডেন টেস্টের ছবিটা অন্য রকম হতে পারত। তেমনই কুকের প্রথম ইনিংসের গোড়ার দিকে ক্যাচটা পূজারা মিস না করলেও ম্যাচের ছবিটা হয়তো অন্য রকম হত। বিশেষ করে দ্বিতীয় ঘটনাটা। কারণ প্রথমত, জাহির শুরুর দিকে উইকেট পেলে সব সময় অন্য রকম বোলার হয়ে ওঠে ভয়ঙ্কর। দ্বিতীয়ত, ইংল্যান্ড ওদের সবচেয়ে ভাল ফর্মে থাকা ব্যাটসম্যানকে ইনিংসের গোড়ার দিকে খুইয়ে বসত আর তার জায়গা নিতে আসত সিরিজে ওদের সবচেয়ে খারাপ ফর্মে থাকা ব্যাটসম্যান।
আসলে অনেক ছোট ঘটনাও ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট হয়ে ওঠে। রান আউট কিংবা ক্যাচ পড়া ক্রিকেটের অঙ্গ। কিন্তু সেগুলো আবার ভুক্তভুগী দলকে খুব খারাপ ভাবে আঘাতও করে। ইডেনে যেটা ভারত হাড়েহাড়ে বুঝেছে।
|
ভারত প্রথম ইনিংস: ৩১৬
ইংল্যান্ড প্রথম ইনিংস: ৫২৩ |
ভারত দ্বিতীয় ইনিংস: (আগের দিন ২৩৯-৯) |
অশ্বিন নঃআঃ ৯১
প্রজ্ঞান বো অ্যান্ডারসন ৩
অতিরিক্ত ১০
মোট ২৪৭
বোলিং: অ্যান্ডারসন ১৫.৪-৪-৩৮-৩, ফিন ১৮-৬-৪৫-৩, পানেসর ২২-১-৭৫-১,
সোয়ান ২৮-৯-৭০-২, সমিত ১-০-৯-০। |
ইংল্যান্ড দ্বিতীয় ইনিংস |
কুক স্টাঃ ধোনি বো অশ্বিন ১
কম্পটন নঃআঃ ৯
ট্রট এলবিডব্লিউ ওঝা ৩
পিটারসেন ক ধোনি বো অশ্বিন ০
বেল নঃআঃ ২৮
অতিরিক্ত ০
মোট ৪১-৩
পতন: ৪, ৭, ৮
বোলিং: অশ্বিন ৬.১-১-৩১-২, ওঝা ৬-৩-১০-১। |
|