এই ম্যাচ থেকেই লড়াইয়ে ফেরার স্বপ্ন দেখেছিল মোহনবাগান সমর্থকরা। কিন্তু ওডাফা ওকোলির লাল-কার্ডটাই যেন সব কিছু ওলটপালট করে দিল। প্রথমার্ধের খেলা তখনও শেষ হয়নি। লাল-কার্ড দেখে রাগে গজরাতে গজরাতে সাজঘরের পথে মোহনবাগানের অধিনায়ক। আর সবুজ-মেরুন সাজঘরে তখন হইচই কাণ্ড।
বিরতির বাঁশি বাজার সঙ্গে সঙ্গে কোচ করিম বেঞ্চারিফার পরামর্শ নেন যুবভারতীতে উপস্থিত কর্তারা। ফোনে অঞ্জন মিত্রদের সঙ্গে কথা বলে জানিয়ে দেওয়া হয়, আর ম্যাচ খেলতে মাঠে নামবে না মোহনবাগান। সেই মর্মে ঠিক ৩-২৫ মিনিটে ম্যাচ কমিশনারের কাছে চিঠি জমা দেন ফুটবল সচিব উত্তম সাহা। কর্তাদের তরফ থেকে পরে সচিব অঞ্জন মিত্র বলেন, “বিরতির সময় দেখা যায়, ফুটবলাররা রীতিমতো আতঙ্কিত। নবির আহত হওয়ার পর মাঠে নামতে ভয় পাচ্ছে ওরা। ফুটবলারদের নিরাপত্তার অভাব বোধ করি। তাই দ্বিতীয়ার্ধে দল না নামানোর সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হই।” কিন্তু এই সিদ্ধান্তের ফলে তো বড় শাস্তির কবলে পড়তে হতে পারে মোহনবাগানকে? অঞ্জনের উত্তর, “নিরাপত্তা না থাকলে ফুটবলাররা খেলবে কী ভাবে? আমরা আজকে নিজেরা আলোচনা করেছি। কালদুপুরে জরুরি সভা ডাকা হয়েছে। তবে, ঘটনাটা ফেডারেশনকে জানাব। সুবিচার না পেলে ফিফা পর্যন্ত যাব।”
সব মিলিয়ে মোহনবাগান জুড়ে তখন ঘটনার ঘনঘটা। সাজঘরের বাইরে সংবাদমাধ্যমের উপচে পড়া ভিড়। হঠাৎ করিম বেরিয়ে বললেন, তিনি সাংবাদিক সম্মেলন করতে যাচ্ছেন। মুহূর্তে ফাঁকা হয়ে যায় সাজঘরের বাইরের ভিড়টা। সেই সুযোগে চুপিচুপি বেরিয়ে যান ওডাফা।
বাগানের অধিনায়ক যখন দৌড়ে পালাচ্ছেন, তাঁর সঙ্গী আনন্দবাজারের প্রতিনিধি। ওডাফার চোখেমুখে তখন আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট। সাজঘর থেকে বেরিয়ে দেখেন গাড়ির ব্যবস্থা হয়নি। উত্তেজিত হয়ে বলে ফেলেন, “এখানে আমি দাঁড়িয়ে থাকলে তো এ বার আমার মাথায় ইট এসে পড়তে পারে।” গাড়িতে উঠে শেষ পর্যন্ত হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন সবুজ-মেরুনের গোলমেশিন। মাঠ ছাড়ার আগে ম্যাচ প্রসঙ্গ উঠতে হতাশ গলায় তিনি বললেন, “আপনারা তো ম্যাচটা দেখেছেন। যেটা হল সেটা কি ঠিক? পুরো ঘটনাটাই চূড়ান্ত বিরক্তিকর।”
ওডাফাকে সব বিতর্ক থেকে দূরে রাখার জন্যই করিমের সাংবাদিক সম্মেলনটা ছিল আসলে মোহনবাগানের একটা চাল। এই ঘটনার অনেকটাই পরে সাংবাদিক সম্মেলন করতে এসে করিম বললেন, “বিশ্ব ফুটবলের দিকে তাকালে অবশ্য ওডাফার লাল কার্ডটা আমি ভুল বলতে পারব না। তবে ভারতীয় ফুটবলে এ রকমটা সব সময় সম্ভব হয় না। পরিস্থিতি বুঝে রেফারিকে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। ওডাফার কার্ড দেখার পরই কিন্তু ঝামেলা শুরু হয়।”
তখন বিকেল সাড়ে পাঁচটা। উত্তেজনার আগুনে জল ঢালা হলেও যুবভারতী জুড়ে রয়ে গিয়েছে তার উত্তাপ। সেই সময় একে একে নিঃশব্দে সাজঘর থেকে বেরোলেন নির্মল, জুয়েল, অরিন্দমরা। নজিরবিহীন বিরক্তির জ্বালায় ছটফট করতে করতে এ দিন যুবভারতী ছাড়লেন মোহনবাগান ফুটবলাররা। |