পায়ের জোরে মর্যাদার লড়াই করতে এসে মাঠ ছাড়লেন স্ট্রেচারে। ডান চোখের কোণে গভীর ক্ষতচিহ্ন। গলগল করে রক্তপাত হচ্ছে। কখনও জ্ঞান আছে, কখনও নেই। যন্ত্রণায় কাতর।
বিরতির ঠিক আগে গ্যালারি থেকে যে পাথরটা উড়ে এসে রহিম নবির কপালে লাগল, সেটা চিরকালের জন্য তাঁর দৃষ্টিশক্তি কেড়ে নিতে পারত! হয়তো সে জন্যই তীব্র অভিমানী নবি আবেগতাড়িত হয়ে হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে আনন্দবাজারকে বললেন, “ফুটবল খেলা শেষ। লিখে দিন, রহিম নবি কালকেই অবসর ঘোষণা করছে।”
কী ভেবেছিলেন আর কী পেলেন? ডার্বির মহোৎসবে গা ভাসাতে এসে নবি এখন কপাল ফাটিয়ে যন্ত্রণায় ছটফট করছেন হাসপাতালের কেবিনে। আশেপাশে সবুজ-মেরুন জনতার ভিড় নেই। ডাক্তার-নার্সদের কড়া নজরদারিতে জোরকদমে শুশ্রুষা চলছে। পাশে দাঁড়িয়ে মোহনবাগানের গুটিকয়েক কর্মকর্তা। আচ্ছন্নতার ঘোরেই নবি বলছিলেন, “পাথরটা ইস্টবেঙ্গল গ্যালারি থেকে এসেছে, না মোহনবাগান গ্যালারি থেকে এসেছে, বলতে পারব না। পাথরটা যে একজন ফুটবল সমর্থক মেরেছে, সেটাই আমার কাছে সবচেয়ে দুঃখের। যাদের জন্য খেলি তারাই যখন এ রকম ব্যবহার করল তখন আর ফুটবল খেলে কী করব?” ডান চোখের পাশে আলগা করে ব্যান্ডেজ বাঁধা। ডাক্তাররা আপাতত ওই চোখটাকে বেশি নাড়াচাড়া করতে মানা করেছেন। তবে বাঁ চোখের জল আটকে রাখতে পারলেন না নবি। |
কতটা গুরুতর নবির চোট? ডান দিকের কপালের হাড়ে চিড় ধরেছে। সোমবার অস্ত্রোপচার হওয়ার কথা। পাথরের আঘাতে কপালে যে চোট লেগেছে, তাতে আপাতত সেলাই করা হয়েছে। যে ডাক্তারের তত্ত্বাবধানে নবির চিকিৎসা চলছে, সেই এসএন সিংহ বললেন, “কাল অপারেশন হবে বলে হালকা ভাবে সেলাই করা হয়েছে।” জানা গিয়েছে, চোখ ও ডান কানের মাঝে কপালের ওই হাড় জোড়া লাগাতে ছোট প্লেটও বসাতে হতে পারে।
নবির চোটের আড়ালে মোহনবাগান আবার দল তুলে নিল বিরতির পরেই। কর্তাদের যুক্তি, “মাঠে কোনও নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই। ফুটবলারদের কথা ভেবেই আমরা ঠিক করেছি, এই ম্যাচ আর খেলব না।” নবিকে ঢাল করলেন মোহনবাগান কোচ করিম বেঞ্চারিফাও। তাঁর কথায়, “প্রথমেই শুনলাম, নবি অজ্ঞান হয়ে গিয়েছে। খবরটা আমাদের ড্রেসিংরুমে এসে পৌছতেই, আমরা খুব ভয় পেয়ে যাই। কী করব কিছুই মাথায় আসছিল না। পরে ফুটবলারদের নিরাপত্তার কথা ভেবে খেলব না ঠিক করি।” |
মোহনবাগানের মাঝপথে দল তুলে নেওয়ার ঘটনা ডার্বির ইতিহাসে নজিরবিহীন। এই ঘটনা নিয়ে প্রচুর তর্ক-বিতর্কও হতে পারে। তবে নবির চোট পাওয়ার বিষয়টা যেন কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না মোহনবাগান! সচিব অঞ্জন মিত্র সাফ জানিয়ে দিলেন, “নবিকে মেরে ফেলার চক্রান্ত করা হয়েছিল। এটা একটা পরিকল্পিত ঘটনা।” যা শুনে ইস্টবেঙ্গলের অন্যতম শীর্ষ কর্তা দেবব্রত সরকার বলেন, “মোহনবাগান এই ম্যাচটা আয়োজন করলে কী হত? তখন যদি ইস্টবেঙ্গল গ্যালারি থেকে কোনও বোতল এসে লাগত, সেই দায়িত্ব কি মোহনবাগান সচিব নিতেন? নবির গায়ে যে পাথর লেগেছে, সেটা ওদের গ্যালারি থেকেই তো ছোঁড়া হয়েছে।” রবিবার রাতেই অবশ্য দেবব্রতবাবু নবির সঙ্গে হাসপাতালে গিয়ে দেখা করে আসেন। সোমবার অস্ত্রোপচারের সময়ও নবির পাশে থাকবেন বলে জানালেন তিনি। |