জঘন্য খেলা, তার পর জঘন্য এক ঘটনা। রবিবার বাংলার ফুটবলে এক কালো দিন দেখল যুবভারতী, যা কোনও দিন মনে রাখতে চাইবেন না সত্যিকারের কোনও ফুটবলপ্রেমী। এ তো ফুটবল নয়, ফুটবলের সর্বনাশের ইঙ্গিত।
কিন্তু এমন ঘটনা ভুলতে চাইলেই যে ভোলা যায়, তাও তো নয়। ১৯৮০-র ১৬ অগস্টের ঘটনা কি ভুলতে পেরেছি কেউ? ভুলতেও যেমন পারিনি, তেমন সেই ঘটনা থেকে শিক্ষাও নিতে পারিনি। তারই প্রমাণ রবিবারের ঘটনা। মাঠের উত্তেজনা গ্যালারিতে ছড়িয়ে পড়লে যে কী মর্মান্তিক কাণ্ড হতে পারে, তা ফুটবলদুনিয়া বারবার দেখেছে। কখনও ফুটবলার, কখনও কোচ, কখনও রেফারির ভুলের খেসারত এভাবেই দেয় ফুটবল।
ভুল ছাড়া আর কী? রবিবারের দুর্ঘটনার শুরু যেখান থেকে, সেটা তো একটা মস্ত বড় ভুল। তার পর আরও কতগুলো ভুল। এই ভুলগুলোই মিলেমিশে জন্ম নিল এক বিশাল দুর্ঘটনার, যা ভারতীয় ফুটবলের কালো অধ্যায়ে চিরকালের মতো ঢুকে থাকল। |
না, ওই পরিস্থিতিতে ওডাফাকে লাল কার্ড দেখানো উচিত হয়নি রেফারি বিষ্ণু চৌহানের। আসলে যে রাজ্যগুলোতে ফুটবলের অতটা চল নেই, সেই রাজ্যগুলো থেকে রেফারিরা যখন এ রকম বড় আসরে ম্যাচ খেলাতে নামায়, তখন এমন ভুলের সম্ভাবনা থাকেই। যুবভারতীর গ্যালারিতে এক লক্ষ দর্শক দেখে গুজরাতের এই রেফারির ঘাবড়ে যাওয়ারই কথা। তার নিজের রাজ্যে সবচেয়ে বড় ফুটবল ম্যাচেও হাজারখানেক দর্শক হয় কি না, সন্দেহ আছে। সেই লোক যদি এক লাখ দর্শকের চিৎকার কানে নিয়ে এ রকম উত্তেজনায় ঠাসা একটা ম্যাচ খেলাতে নামে, তা হলে তার এমন ভুল অস্বাভাবিক নয়। ওই পরিস্থিতিতে ওডাফাকে হলুদ কার্ড দেখোনা যেত। ওডাফা তো রেফারিকে স্পর্শ করেনি। তাড়া করেছিল। লাল কার্ডটা একটু বাড়াবাড়িই হয়ে গিয়েছিল। সেই বাড়াবাড়িরই খেসারত দিতে হল রহিম নবিকে, বাংলার ফুটবলকেও। |
মোহনবাগান খেলতে না চেয়ে ভুল করেনি। ফুটবলের আইন তাই বলছে। বিপক্ষের হোম গ্রাউন্ডে খেলতে গিয়ে যদি কোনও দলের খেলোয়াড় আক্রান্ত হয়, সেই দলের খেলতে না চাওয়ার দায়িত্ব অবশ্যই আছে। কিন্তু মোহনবাগান ক্লাবের সুপ্রাচীন সুনামের কথা মাথায় রেখে ম্যাচটা শেষ করে যদি হেরেও মাঠ ছাড়ত ওরা, তা হলেও তা অসম্মানের হত না। কিন্তু এখনকার ফুটবলে এ সব আবেগ চলে না। তা ছাড়া বিদেশি কোচরা তা বুঝবেনই বা কেন? তাদের কাছে কৌশলই আসল। কিন্তু অত পরে কেন ওই সিদ্ধান্তটা নিলেন মোহনবাগান কর্তারা? যে মুহূর্তে গ্যালারি থেকে উড়ে আসা ইঁটের আঘাতে নবির কপাল ফাটল, সেই মুহূর্তেই সিদ্ধান্তটা জানানো উচিত ছিল।
এটা যেমন একটা ভুল, তেমন আরও আর একটা ভুল হয়েছে ওডাফার সতীর্থদের আর দলের কোচের। যখন দলের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ফুটবলার প্রচণ্ড উত্তেজিত হয়ে পড়ছে, তার ‘অপরাধ’ প্রবণতা বাড়ছে, সেই সময় দলের অন্য প্লেয়ারদের তাকে গিয়ে অবশ্যই আটকানো উচিত ছিল। কোচই এই স্ট্র্যাটেজিটা ঠিক করে দিতে পারত। মাঠের বাইরে দাঁড়িয়ে কোচ যখন দেখছে, তেমন কিছু হচ্ছে না, তখন তারই দলের ছেলেদের কাছে ছুটে গিয়ে উত্তেজিত প্লেয়ারকে আটকানোর নির্দেশ দেওয়া উচিত ছিল। আমি কোচ হলে সেটা তো করতামই, দলের কিছু ছেলেকে আগে থেকে এ রকম অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি সামলানোর দায়িত্বও দিয়ে রাখতাম। ফুটবলের বাইরের কিছু ব্যাপারও ছেলেদের শেখাতে হয় কোচকে। কিন্তু করিম বাইরে থেকে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পুরো ঘটনাটা দেখল!
আর কত ভুলের মাশুল দেবে বাংলার ফুটবল? |
দুই মাঠের নির্ঘণ্ট |
ইডেন নাটক |
|
১১-৩০
(সিএবি প্রেসিডেন্টস রুম) |
নির্বাচনী বৈঠক শুরু। প্রথম ঘণ্টায় আলোচনার কেন্দ্রে যুবরাজ। একটা সময় নির্বাচকদের কেউ কেউ যুবরাজকে দলে রাখার ব্যাপারে সহানুভূতিশীল হয়ে পড়েছিলেন। |
১২-৩০ |
শ্রীনিবাসনের ফোন বোর্ড সচিব জাগদালেকে। এর পরেও কি রাখা ঠিক হবে যুবরাজদের, এই প্রশ্ন তোলেন বোর্ড প্রেসিডেন্ট। |
১২-৪৫ |
মাঠে ফুটবল খেলছিলেন ধোনিরা। ফ্লেচার-ধোনিকে ডেকে আলাদা করে বৈঠক করেন জাগদালে। পরে কোচ-অধিনায়ককে নিয়ে যান টিম মিটিংয়ে। |
১-০০ |
মিটিংয়ে ধোনিদের বলে দেওয়া হয়, যুবরাজ ফর্মে নেই। জাহির আনফিট, বডি ল্যাঙ্গোয়েজও খারাপ। এই দু’জনকে নাগপুর টেস্টে রাখা যাবে না। বাদ হরভজনও। |
পরের আধ ঘণ্টায় |
১৪তম সদস্য হিসাবে তিন জনের নাম লেখা হয়েছিল। মনোজ, আওয়ানা, ভূবনেশ্বর কুমার। সাম্প্রতিক ফর্ম ভাল নয় বলে কাটা পড়ে যায় মনোজের নাম। তখনও তাঁর চোটের কথা নির্বাচকদের জানা ছিল না। |
২-১৫ |
মিটিং শেষ। গম্ভীর মুখে বেরিয়ে যান ধোনি-ফ্লেচার। তার আগেই অবশ্য টিম ইন্ডিয়া ইডেন ছেড়ে চলে গিয়েছে। |
যুবভারতী কাণ্ড |
|
২-৪৬ |
আক্রমণে ইস্টবেঙ্গল। খাবরাকে ট্যাকল নির্মল ছেত্রীর। ইস্টবেঙ্গলের ফ্রি কিক। ওডাফা তেড়ে যান রেফারির দিকে। কথা কাটাকাটি শুরু। লাল কার্ড ওডাফাকে। |
২-৪৭ |
রেফারিকে ঘিরে ধরে প্রতিবাদ মোহনবাগান ফুটবলারদের। |
২-৪৮ |
হঠাৎ ইঁট বৃষ্টি শুরু। ইঁট এসে লাগে নবির মাথায়। |
২-৫০ |
মাঠের মধ্যে অ্যাম্বুলেন্স ঢুকে পড়ে। প্রাথমিক শুশ্রুষায় রক্ত বন্ধ না হওয়ায় অ্যাম্বুল্যান্সে করে নবিকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। |
৩-১৫ |
খেলা শুরু। মিনিট খানেকের মধ্যেই হাফ টাইমের বাঁশি। |
৩-১৭ |
বাগান কোচ-কর্তাদের ড্রেসিংরুমে যুদ্ধকালীন বৈঠক। |
৩-২০ |
রিজার্ভ বেঞ্চের ফুটবলারদের তুলে নেয় মোহনবাগান। |
৩-২৫ |
মোহনবাগানের না খেলার সিদ্ধান্ত লিখিতভাবে জানানো হয় ম্যাচ কমিশনারকে। |
|