বিষ্ণুকে ছুঁয়ে গেল ইডেনের দুঃস্বপ্ন
৬ অগস্ট, ১৯৮০।
৯ ডিসেম্বর, ২০১২।
ভিন্ন দুই দশক, ভিন্ন দুই প্রজন্ম। ভিন্ন দুই স্টেডিয়াম। সে দিন ছিল ইডেন গার্ডেন্স। আজ, যুবভারতী। কিন্তু প্রেক্ষাপট যে এক। দিলীপ পালিতের ফাউল আর নির্মল ছেত্রীর বিশ্রী মার। কোথাও যেন দুই সময়কে আবার মিলিয়ে দিয়ে গেল কলকাতার ফুটবল। শুধু তফাত একটাই। বত্রিশ বছর আগে ইডেনে বাঁশি মুখে ছিলেন সুদিন চট্টোপাধ্যায়। আর এ দিন গুজরাতের বিষ্ণু চৌহান।
আমরি কাণ্ডের বর্ষপূর্তির দিনে আজকের বিষ্ণু আরও একবার মনে পড়িয়ে দিলেন অতীতের সুদিন-সুশান্ত-রবিদের। রবিবারের বিতর্কিত রেফারিকে দেখে ১৬ই অগস্টকে মনে পড়ছে সে দিনের রেফারিদের।
বড় ম্যাচে দর্শক হামলা। রক্তাক্ত নবি হাসপাতালে। খবরটা শোনার পরেই ধরা গেল সত্তরোর্ধ্ব সুশান্ত চৌধুরীকে। সেই কুখ্যাত ১৬-ই অগস্টের সহকারি রেফারি। এ রকমই এক বড় ম্যাচের। ফোনের ও পারে প্রথম প্রশ্ন, “আজ মাঠে শ্যামল বিশ্বাস বা রবিন আদকের মতো কেউ চিরতরে হারিয়ে যায়নি তো?”
কেউ হারিয়ে যাননি শুনে একটু আশ্বস্ত। তার পর কাঁপাকাঁপা গলায় বলে ফেলেন, “সে দিন দিলীপ পালিত মেরেছিল বিদেশ বসুকে। আজ হরমনজিৎকে মারল নির্মল। অবস্থাটা সেই একই দাঁড়াল।”
বিতর্কিত রেফারি।
সঙ্গে যোগ করলেন, “সে দিন আমার উল্টো দিকে সহকারী রেফারি ছিলেন রবি চক্রবর্তী। ওর দিকেই বিদেশ বসু আর দিলীপ পালিতের মধ্যে ঝামেলা লাগে। আর তা থেকেই গ্যালারি উত্তপ্ত।” আর ওডাফা? তাঁকে লাল কার্ড দেখানো ঠিক হয়েছে? জবাবে সুশান্ত-র উত্তর, “ম্যাচ দেখিনি। তবে যদি কোনও ফুটবলার তেড়ে গিয়ে রেফারিকে গালিগালাজ করে তা হলে লাল কার্ড হতেই পারে। এখানে ব্যাপারটা ঠিক জানি না।” যোগাযোগ করা যায়নি সেই ম্যাচের রেফারি সুদিন চট্টোপাধ্যায় কিংবা আর এক সহকারী রেফারি রবিবাবুকে।
প্রাক্তন ফিফা রেফারি প্রদীপ নাগেরও একই মত। বলছিলেন, “ঘটনার সময় বিষ্ণু তো কাছেই ছিল দেখলাম। তবে ওডাফা গালাগাল করেছে কি না তা কী ভাবে বলি? তবে রেফারি হিসাবে বিষ্ণুর যথেষ্ট ব্যক্তিত্ব আছে।”
১৯৮০-র সেই ম্যাচের কেন্দ্রীয় চরিত্র দিলীপ পালিতের আবার এখানেই তীব্র আপত্তি। বাগুইআটির বাড়িতে বসে তাঁর সাফ কথা, “বিষ্ণু তো ঠিকঠাক খেলাতেই পারছিল না। ওর ভুলের জন্যই আজ এত গণ্ডগোল।”
মোহনবাগানের কী শাস্তি হতে পারে
• এ বারের বাকি ম্যাচ ছাড়া আরও দু’বছর আই লিগ থেকে সাসপেন্ড করা হতে পারে। শাস্তি বাড়তে পারে।
• বড় রকমের জরিমানা হতে পারে।
• টিভি স্পনসর এবং দর্শকদের আর্থিক ক্ষতি হলে তা পূরণ করতে হতে পারে।
ইস্টবেঙ্গলের কী শাস্তি হতে পারে
• ম্যাচের সংগঠক হওয়ায় জরিমানা করা হতে পারে।
দিলীপ বলছেন, করিমও বলে গেলেন। মোহনবাগান কোচের মনে হচ্ছে, বিষ্ণু আত্মবিশ্বাসের অভাবে ভুগছিলেন। বললেন, ‘‘ওকে দেখে একেবারেই আত্মবিশ্বাসী মনে হয়নি।” ইডেন টেস্ট কভার করার ফাঁকে যুবভারতীতে ঢুঁ মারা কুক-ট্রটদের দেশের ‘সানডে টাইমস’-এর প্রতিনিধি ম্যাথিউ ফিয়ারনও মানছেন, রেফারির ছোটখাটো ভুল হচ্ছিল।
আই লিগে জীবনের প্রথম মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গল ম্যাচ খেলাতে নেমে কেন এত নড়বড়ে লাগল গুজরাতের পুলিশ অফিসার বিষ্ণু চৌহানকে? সন্তোষ ট্রফিতে টানা ১২ বছর খেলেছেন। দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছেন বিশ্ব পুলিশ মিটে। রেফারি মহলেও সুনাম ব্যক্তিত্বের জন্য। ফেডারেশনের রেফারিজ অ্যাসেসর কর্নেল গৌতম করও বললেন, “বিষ্ণু খুব সাহসী। কখনও কেঁপে যায় না। এই তো মাসখানেক আগেই ফেডারেশন কাপ ফাইনাল খেলিয়েছে।” তা হলে আজ কী হল? প্রশ্ন শুনেই গৌতমবাবু বললেন, “নো কমেন্টস।”
দিলীপ পালিত, মাঠ-ফেরত দর্শকরা যখন বিষ্ণুকে নড়বড়ে বলছেন ঠিক তখনই নাম উল্লেখ না করে দেশের রেফারি মহলের অনেকেই বলছেন, “বিষ্ণু কিছু ভুল করেনি। নিশ্চয়ই সংশ্লিষ্ট ফুটবলার ওঁকে গালমন্দ করেছিল।”
জীবনের প্রথম ডার্বিতেই প্রশংসা-নিন্দার জাঁতাকলে পড়ে প্রচারমাধ্যমের সার্চলাইটে বিষ্ণু। কিন্তু এমন প্রচার আর কে-ই বা চায়?




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.