দল তুলে নেওয়ায় নজিরহীন শাস্তির ছায়া বাগানে
মোহনবাগানের ১২৩ বছরের ইতিহাসে নজিরবিহীন ঘটনা ঘটে গেল রবিবার।
বিরতির পর ট্রেভর মর্গ্যানের ইস্টবেঙ্গল নেমে পড়েছিল মাঠে। নেমে পড়েছিল পুরো রেফারি টিম, লাখখানেক দর্শক অপেক্ষা করছিলেন বাকি পয়তাল্লিশ মিনিট খেলা দেখার জন্য। কিন্তু অপেক্ষাই সার। মিনিট পনেরো পর হঠাৎ-ই মোহনবাগান ম্যানেজার উত্তম সাহা ম্যাচ কমিশনার গুলাব সিংহ চৌহানের হাতে ধরিয়ে দিলেন একটা চিঠি। যার মোদ্দা বক্তব্য, ‘ফুটবলারদের নিরাপত্তা নেই। তাই আমরা দল তুলে নিচ্ছি’।
১৯৭৫-র ইস্টবেঙ্গলের কাছে পাঁচ গোল খাওয়ার স্মৃতি, ১৯৯৫-’৯৬-তে আই লিগের মূলপর্বে উঠতে না পারা, রোভার্সে অমল দত্তের কোচিংয়ে গড়াপেটার অভিযোগ, প্রায় তিরিশ মাস কোনও ট্রফি না জেতা এত দিন এ সবই ছিল মোহনবাগান সমর্থকদের কাছে লজ্জার। কিন্তু রবিবারের ডার্বিতে যা হল, তা হয়তো সব কলঙ্ককেই ছাপিয়ে যাবে।
আই লিগের সিইও সুনন্দ ধর ফেডারেশনের নিয়মে যে শাস্তির ধারাগুলো জানিয়েছেন, তাতে এ বছরের আই লিগ তো বটেই, পরের দু’বছরও আই লিগ থেকে সাসপেন্ড হতে পারে করিমের বাগান। শুধু তাই নয়, বড় রকমের জরিমানাও হতে পারে গঙ্গাপারের ক্লাবের। এখানেই শেষ নয়। টিভি স্পনসর, টিকিট কিনে খেলা দেখতে আসা দর্শক এবং স্টেডিয়ানের ক্ষতির জন্যও জরিমানা দিতে হতে পারে তাদের। শাস্তি কী হবে, তা অবশ্য ঠিক করবে ফেডারেশনের তিনটি কমিটি। প্রথমে আই লিগ কমিটি, তার পর শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি এবং শেষ সিদ্ধান্ত নেবে ফেডারেশনের কার্যকরী কমিটি। যে সিদ্ধান্তই নেওয়া হোক, তাতে আরও অন্ধকারে তলিয়ে যাবে মোহনবাগান। ক্লাবসচিব অঞ্জন মিত্র অবশ্য শাস্তির ব্যাপারটিকে গুরুত্বই দিতে চাননি। উল্টে পুরো ব্যাপারটাই চাপিয়ে দিয়েছেন সংগঠক ইস্টবেঙ্গলের ঘাড়ে! বলে দিয়েছেন, “মাঠে ফুটবলারদের নিরাপত্তা ছিল না। খেলার মতো পরিস্থিতি ছিল না। যা হয়েছে তা পূর্বপরিকল্পিত। ফেডারেশন কী করে দেখি। প্রয়োজনে ফিফায় যাব।”
ইটের আঘাতে আহত বিধাননগরের
পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার। —নিজস্ব চিত্র
মাঠের যে অংশ থেকে ইট-বৃষ্টির ফলে মোহনবাগানের রহিম নবি আহত হয়েছেন, সেখানে অবশ্য ছিলেন মোহনবাগানের সমর্থকরাই। তবে ম্যাচটির আয়োজক যে-হেতু ছিল ইস্টবেঙ্গল, তাই কিছু দায় তাদের উপরও বর্তাতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন সুনন্দ। বলে দিয়েছেন, “ম্যাচের সংগঠক ছিল ইস্টবেঙ্গল। আইনশৃঙ্খলার ব্যাপারে কোনও সমস্যা হলে দায় তাদের উপরও পড়বে। সবই দেখবে শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি।” ইস্টবেঙ্গলের মাঠসচিব বাবু চক্রবর্তী অবশ্য পাল্টা বললেন, “আইনশৃঙ্খলা তো পুলিশ দেখবে। আমরা কী করব? আমরা তো পুলিশ যা সাহায্য চেয়েছে, করেছি।” তবে মোহন-ইস্ট নিয়ে ফেডারেশন শাস্তির যে সিদ্ধান্তই নিক, তাতে প্রধান গুরুত্ব পাবে রেফারি ও ম্যাচ কমিশনারের রিপোর্ট। আজই তা ফেডারেশনের কাছে জমা পড়ার কথা। শাস্তি হতে আরও সপ্তাহ খানেক হয়তো লাগবে।
কিন্তু প্রশ্ন উঠে গিয়েছে, বিরতিতে টিম তুলে নিয়ে মোহনবাগান কর্তারা ঠিক কাজ করেছেন কি না? যদি নিরাপত্তাহীনতার জন্যই তাঁরা টিম তুলে নেবেন, তা হলে সেটা নবি-ওডাফা পর্বের সঙ্গে সঙ্গেই করা হল না কেন? কেন ওডাফা-নবি মাঠের বাইরে চলে যাওয়ার পরেও বিরতির আগে দু’মিনিট ইনজুরি টাইম খেলল করিমের দল?
ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান ম্যাচে ঝামেলা নতুন কিছু নয়। লালকার্ড, মারামারি সে তো বহু ম্যাচেই হয়েছে। কিন্তু ১৯২৫ সালে শুরু হওয়া ডার্বির ৩০২তম পর্বে যা হল, তা নজিরবহীন। ময়দানে বহু দিন ধরে ডার্বি দেখা দর্শকরা টেনে আনছেন নানা স্মৃতি। স্যার বীরেন মুখোপাধ্যায় এক বার এগারো জন প্রথম দলের ফুটবলার না থাকা সত্ত্বেও টিম নামিয়ে হেরেছিলেন। হেরে গিয়ে বলেছিলেন, ‘মোহনবাগান পালিয়ে যায় না’। ১৯৬৯-এ কলকাতা লিগে এক বার অশোক চট্টোপাধ্যায়ের অফসাইড গোলে পিছিয়ে পড়েছিল মোহনবাগান। সি প্রসাদের নেতৃত্বে রেফারির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে মাঠ ছেড়ে
এসেছিল মোহনবাগান। কিন্তু শৈলেন মান্না তাদের মাঠে ফেরান এই বলে যে, ‘মোহনবাগান কখনও পালিয়ে যায় না’। সেই রামও নেই, নেই সেই অযোধ্যাও। টুর্নামেন্ট বয়কট, লিগ না খেলার হুমকি টুটু-অঞ্জনদের সময় আকছার ঘটেছে বা ঘটছে। ডার্বি ম্যাচে টিম তুলে নেওয়ার পর অবশ্য তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছে সেই সিদ্ধান্ত নিয়ে। প্রাক্তন ফুটবলার কৃষ্ণেন্দু রায় বলে দিয়েছেন, “ধীরেন দে থাকলে এ রকম ঘটতই না। ডার্বি ম্যাচে ঝামেলা নতুন কিছু নয়। বহু বার হয়েছে। কিন্তু টিম তুলে নেওয়াটা হাস্যকর। মেনে নেওয়া যায় না।” প্রাক্তন প্রয়াগ ইউনাইটেড কোচ সঞ্জয় সেন বললেন, “ওডাফা-নবি চলে যাওয়ার পর মোহনবাগান মনে হয় ভেবেছিল আরও চার-পাঁচ গোল খেয়ে যাবে। এ রকম ভেবেই ওরা হয়তো দল তুলে নিয়েছে। নিরাপত্তা কোনও কারণ নয়।” গায়ক মনোময় ভট্টাচার্যের প্রতিক্রিয়া, “খুব আশা নিয়ে বসেছিলাম খেলা দেখব বলে। মাঠ ভর্তি এত দর্শকের মতো। খুব হতাশ হলাম।” পাল্টা বলার লোকও কম নয়। প্রাক্তন ফুটবলার মানস ভট্টাচার্য বললেন, “রেফারিটাই ডুবিয়েছে। ওডাফার লালকার্ড হয়ই না। মোহনবাগান যা করেছে সেটাই ঠিক। নবির মতো আরও ফুটবলার আহত হতে পারত।”
তর্ক-বিতর্ক চলবেই। শাস্তিও হয়তো হবে কিছু। কিন্তু দল তুলে নেওয়ার পর শতবর্ষের বাগান যে লজ্জার মধ্যে পড়ল, তা কলকাতা ফুটবলকে কলঙ্কিতই করবে।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.