তাঁর দলনেত্রী রেলমন্ত্রী থাকার সময়ে তিনি হাজির হননি অনুষ্ঠান-মঞ্চে। কিন্তু রবিবার হাওড়ায় রেল প্রতিমন্ত্রী, কংগ্রেসের অধীর চৌধুরীর অনুষ্ঠান-মঞ্চে হাজির হয়ে প্রকারান্তরে নিজের দলের বিরুদ্ধেই তোপ দাগলেন তৃণমূলের প্রবীণ সাংসদ অম্বিকা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এর আগে গত ২৬ নভেম্বর রেল প্রতিমন্ত্রীর কাঁচরাপাড়ার অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ পেয়েও হাজির হননি তৃণমূল সাংসদ ও প্রাক্তন রেলমন্ত্রী দীনেশ ত্রিবেদী। ওই দিনই বেলেঘাটায় মেট্রো রেলের এক অনুষ্ঠান ছিল। যাননি সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তবে অম্বিকাবাবু কেন দলের এই ‘রীতি’ মানলেন না? অম্বিকাবাবুর জবাব, “দল যা-ই বলুক না কেন, রেলের অনুষ্ঠানে আমি যাব।”
শুধু অধীরবাবুর সভায় যাওয়াই নয়, রেলের অনুষ্ঠানে দাঁড়িয়ে এ দিন দলের সমালোচনাও করেছেন হাওড়ার এই প্রবীণ সাংসদ। তিনি বলেন, “আমাদের দলের রেল মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেওয়া মানুষ ভাল চোখে নেয়নি।” অনুষ্ঠানের পরে অম্বিকাবাবু অধীরকে পাশে নিয়ে তাঁর কাজের ভূয়সী প্রশংসাও করেন। বলেন, “অধীরবাবু উদ্যমী মানুষ। ওঁর হাত ধরে বাংলায় রেলের উন্নয়ন অনেকটাই এগিয়ে যাবে। এই উন্নয়নের স্বার্থে আমি ওঁর পাশে রয়েছি।”
প্রশংসার জবাবে অধীরবাবুও পাল্টা প্রশংসা করেন হাওড়ার সাংসদের। রেল প্রতিমন্ত্রীর কথায়, “রেলের উন্নয়ন নিয়ে কোনও রাজনীতি করা উচিত নয়। কিন্তু দুঃখের বিষয় বাংলার উন্নয়ন নিয়ে রাজনীতি হচ্ছে।” পরে তিনি বলেন, “বাংলায় রেলের উন্নয়নের জন্য জমি দরকার। সে জন্য প্রয়োজনে আমি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে নিজে গিয়ে দেখা করে কথা বলব।” |
সন্দেহ নেই শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের পরে তৃণমূলের এই বর্ষীয়ান নেতার বক্তব্য দলের অস্বস্তি বাড়াবে। এই প্রসঙ্গ নিয়ে চর্চাও শুরু হয়ে গিয়েছে। তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেলমন্ত্রী থাকাকালীন তাঁর মঞ্চে উপস্থিত না থাকা নিয়ে প্রশ্নের সরাসরি উত্তর না-দিয়ে অম্বিকাবাবু শুধু জানান, সেই সময় তিনি অসুস্থ ছিলেন।
এ দিন সাঁতরাগাছিকে প্যাসেঞ্জার টার্মিনালে রূপান্তর করা এবং শালিমারে কোচিং টার্মিনালের উন্নয়নের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন অধীরবাবু। চালু করা হয় আদ্রা-আসানসোল এবং বিষ্ণুপুর-আদ্রা মেমু ট্রেন। এই অনুষ্ঠানেই আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল হাওড়ার সাংসদ অম্বিকাবাবুকে। দলকে অবাক করে তিনি ওই অনুষ্ঠানে হাজির হলে তাঁকে সাদরে মঞ্চে স্বাগত জানান অধীরবাবু।
হাওড়া এবং শিয়ালদহ স্টেশনের উপর দিন দিন চাপ বাড়ছে। সেই চাপ কমাতে সাঁতরাগাছি এবং শালিমারকে গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনের রূপ দিতে চাইছে রেল মন্ত্রক। সাঁতরাগাছিকে প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল করে তুলতে ১৯৮ কোটি ৬৫ লক্ষ টাকা এবং শালিমারকে স্বনির্ভর কোচিং টার্মিনাল করতে ১৪২ কোটি ৪৪ লক্ষ টাকার প্রকল্পের কথা ঘোষণা করেন রেল প্রতিমন্ত্রী। এ দিনই পূর্ব মেদিনীপুরের হাতিবেড়িয়ায় রেলের প্রস্তাবিত ডিএমইউ কোচ কারখানা পরিদর্শনে যান তিনি। সঙ্গে ছিলেন দক্ষিণ-পূর্ব রেলের জেনারেল ম্যানেজার অজয়কুমার বর্মা, চিফ মেকানিক্যাল অফিসার এবং পি চৌবে, খড়্গপুরের ডিআরএম রাজীবকুমার কুলশ্রেষ্ঠ-সহ রেল-বিকাশ নিগম ও রেলের কর্তারা।
পরিদর্শন শেষে রেল প্রতিমন্ত্রী দাবি করেন, আগামী জানুয়ারিতেই চালু হয়ে যাবে এই কারখানা। তিনি বলেন, “রাজ্যের অধিকাংশ প্রকল্প সমীক্ষার পর্যায়ে রয়েছে। এক লক্ষ টাকা দিয়ে প্রকল্প সমীক্ষা করা সহজ। কিন্তু তার বাস্তবায়ন কঠিন। রেলের হাতে এখন অনেক প্রকল্প। সে ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার অনুযায়ী প্রকল্পগুলি নিয়ে এগোতে হবে। রাজ্যগুলিকে বলেছি নতুন প্রকল্পগুলির জন্য কিছু টাকা ও জমি শেয়ার করতে। সেখানে এই রাজ্য যদি এগিয়ে না-আসে, সমস্যা হবে।” |