আফগানিস্তানে অসামরিক সরকার গড়ার যে উদ্যোগ শুরু হইয়াছে, তাহার লক্ষ্য ২০১৪ সালের মার্কিন ও নেটো বাহিনী প্রত্যাহার-পরবর্তী পরিস্থিতি। এই প্রেক্ষিতেই তালিবানদের বিভিন্ন গোষ্ঠীপতিকে আলোচনা ও দরকষাকষির টেবিলে টানিয়া আনার প্রাণপণ চেষ্টা চলিতেছে। সে জন্য পাকিস্তানে বন্দি তালিবান নেতাদের মুক্তির আবেদনও আফগান প্রেসিডেন্ট জানাইয়াছেন। পাশাপাশি ভারতের মতো মিত্ররাষ্ট্রকে নূতন আফগানিস্তানে প্রাসঙ্গিক করিয়া তোলার প্রয়াসও অব্যাহত। ভারত ইতিমধ্যেই কাবুল সহ বিভিন্ন আফগান জনপদে পরিকাঠামো উন্নয়নে যুক্ত। আফগান পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর প্রশিক্ষণেও। এই সম্পর্ককে রণনৈতিক অংশীদারিতে রূপান্তরিত করিতে প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাইয়ের সহিত প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের চুক্তিও স্বাক্ষরিত।
আফগানিস্তান যে ভারতের সহযোগিতা চায়, তাহার এক কারণ পাকিস্তান। ইসলামাবাদ কালক্রমে কাবুলকে গ্রাস করিয়া লইতে, নিদেনপক্ষে তাঁবেদার বানাইতে উৎসুক। পাকিস্তানের সহিত সীমান্ত ‘ডুরান্ড লাইন’ বরাবর পাক বাহিনীর নিয়মিত অনুপ্রবেশ ও সামরিক ঘাঁটি বানাইবার অপপ্রয়াস কাবুলকে গত কয় মাস যাবৎ প্রতিবেশীর সহিত সীমান্ত সংঘর্ষে ব্যাপৃত রাখিয়াছে। আফগানরা ইতিহাসে কখনও ডুরান্ড লাইন শিরোধার্য করেন নাই। স্বভাবতই পাকিস্তানের সহিত ইহা লইয়া কাজিয়া লাগিয়াই থাকে। পাক বাহিনীর সহিত আফগান বাহিনীর আঁটিয়া ওঠা কঠিন। উপরন্তু তালিবানরা বহুজাতিক বাহিনীর বিদায়ের পরেই কাবুল দখল করিতে উদ্যত হইবে, এমন সম্ভাবনা প্রবল। বিভিন্ন জনজাতীয়তা ও যুদ্ধসর্দারের প্রতি আনুগত্যে বিভাজিত তালিবানের কোনও ঐক্যবদ্ধ কমান্ড নাই। মোল্লা উমরের কর্তৃত্ব গুলবুদ্দিন হেকমতিয়ার কিংবা উজবেক যুদ্ধসর্দার রসিদ দোস্তামের মতো গোষ্ঠীপতিরা মানিয়া লইবে কি না, তাহাও নিশ্চিত নয়। নিশ্চিত কেবল বহুজাতিক বাহিনীমুক্ত আফগানিস্তানে গৃহযুদ্ধ। এই গৃহযুদ্ধে আই এস আই তথা পাক সেনা কোন পক্ষকে সমর্থন করে, তাহার উপরেই নির্ভর করিতে পারে কাবুলের ভবিষ্যৎ।
এ জন্যই ২০১৪-র পরেও মার্কিন ও বহুজাতিক বাহিনীর এক উল্লেখযোগ্য অংশকে আফগানিস্তানে থাকিয়া যাওয়ার আবেদন জানানো শুরু হইয়াছে। সেই সঙ্গে কাবুল নয়াদিল্লিকেও সঙ্গে চায়। এ ক্ষেত্রে ভারতের সমস্যা ঈষৎ ভিন্ন প্রকৃতির। প্রতিবেশী রাষ্ট্র হিসাবে, এবং পাকিস্তানের ‘প্রতিপক্ষ’ হিসাবে, আফগানিস্তানে প্রভাব বিস্তারের সুযোগ ভারত তুচ্ছ করিতে পারে না। আবার আগ বাড়াইয়া এমন কিছুও করিতে চায় না, যাহাতে ইসলামাবাদ আফগানিস্তানে ভারতকে তাহার প্রতিপক্ষ মনে করে। তালিবান-শাসিত আফগানিস্তান যে পাকিস্তানকেই তাহার স্বাভাবিক সুহৃদ জ্ঞান করিবে, সন্দেহ নাই। সরকারি পর্যায়ে এবং তালিবানকে দিয়া, উভয়তই ইসলামাবাদ কাবুলের উপর নিজ প্রভাব ও প্রাধান্য বজায় রাখিতে চাহিবে। ভারতের ভূমিকা লইয়া ইতিপূর্বেই পাকিস্তান আপত্তি জানাইয়াছে। দিল্লির পক্ষে খেলাটি জটিল। |