সম্পাদকীয় ১...
সুযোগের জানালা
ধৃতরাষ্ট্রের প্রতি উচ্চারিত দুর্যোধনের উক্তিকে ঈষৎ পরিবর্তিত করিয়া প্রধানমন্ত্রী বলিতেই পারেন, ‘আজ আমি জয়ী, এবং সুখী।’ মহাভারতের গভীর প্রেরণায় রবীন্দ্রনাথ তাঁহার ‘গান্ধারীর আবেদন’-এ ধর্মের স্বরূপ লইয়া যে দিগন্তপ্রসারী আলোচনা করিয়াছিলেন, ইউ পি এ সরকারের নায়কনায়িকারা তাহা লইয়া ভাবিত হইবেন বলিয়া মনে হয় না। সে হস্তিনাপুরীও নাই, সে মনমোহনও সিংহও নাই। ১৯৯১ সালে রাজবৃত্তে নবাগত অর্থমন্ত্রী রাজধানী দিল্লির ‘কুটিল’ এবং ‘আলো-আঁধারি’ বাস্তব সম্পর্কে অনন্য ভাষণ দিয়াছিলেন, মুঘল দরবারের সহিত তাহার তুলনা করিয়াছিলেন। তাহার পর দুই দশক অতিক্রান্ত, সিংহ মহাশয় ইতিমধ্যে অনেক আঘাটায় জল পান করিয়াছেন। তিনি এখন রাজনীতির মূল মন্ত্র শিখিয়া গিয়াছেন: মারি অরি পারি যে কৌশলে। এবং বুঝিয়াছেন: রাজনীতিতে কোনও স্থায়ী বন্ধু নাই, কেবল স্থায়ী স্বার্থ আছে। খুচরো ব্যবসায় বহু-ব্র্যান্ড বিপণিতে বিদেশি বিনিয়োগের ছাড়পত্র সংক্রান্ত প্রস্তাবটি যে ভাবে সংসদের দুই সভায় জয়ী হইল, তাহা রাজনীতির কৃতি হিসাবে ঐতিহাসিক। সুষমা স্বরাজ সীতারাম ইয়েচুরি গুরুদাস দাশগুপ্ত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ নব্বই ডেসিবেলের উপরে গলা তুলিয়া ‘অনৈতিক’ ষড়যন্ত্রের অভিযোগ করিতে পারেন, ‘সংখ্যালঘু সরকার’-এর অবিলম্বে পদত্যাগের দাবিতে বৃন্দগান গাহিতে পারেন, কিন্তু তাঁহারা সকলেই মনে মনে বিলক্ষণ জানেন, প্রেমে ও রণে নৈতিক আদর্শের কোনও মূল্য থাকিলেও থাকিতে পারে, রাজনীতিতে কিছুমাত্র নাই। রাজ্যসভার ভোটপর্ব সমাপ্ত হইবার পরে অর্থমন্ত্রী চিদম্বরম সংসদ ভবনের বাহিরে জানাইয়াছেন বিরোধীরা ভোট চাহিয়াছিলেন, ভোট হইয়াছে, সরকার জয়ী হইয়াছে, ইহার পরে আর কোনও কথা চলিতে পারে না। তাঁহার সহাস্য সংযোজন: সংবিধানে যে সদস্যরা উপস্থিত থাকেন এবং ভোট দেন তাঁহাদের সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থনের কথা বলা হইয়াছে, কয় জন সদস্য কোন পক্ষে ‘কথা বলিয়াছিলেন’, সেই হিসাব মানিতে চাহিলে আগে সংবিধান সংশোধন করিতে হইবে। অনুমান করা যায়, মন্তব্যটি বিরোধীদের গায়ে জ্বালা ধরাইয়াছে, এবং স্মিতহাস্য তাহাতে নুনের ছিটা দিয়াছে। নৈতিকতার উচ্চারণে তাহার প্রশমন হইবে কি?
সহজ সত্য ইহাই যে, ইউ পি এ সরকারের নীতি ও আচরণের প্রতি সংখ্যাগরিষ্ঠ সাংসদের সমর্থন না থাকিলেও সংখ্যাগরিষ্ঠ সাংসদ এখনই এই সরকারের পতন চাহে না, এমনকী মায়াবতী স্পষ্ট বলিয়াই দিয়াছেন তাহাকে বিপাকে ফেলিতেও চাহে না। বি জে পি বা সি পি আই এম নেতারা সম্ভবত তাহা বুঝিয়াছেন, তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রীও হয়তো কালক্রমে বুঝিবেন। ইংরাজি ভাষা হইতে ধার লইলে বলিতে হয়, ইহাই কংগ্রেসের তথা ভারতীয় অর্থনীতির পক্ষে ‘সুযোগের জানালা’। বিমা, ব্যাঙ্ক, পেনশন, জমি অধিগ্রহণ ইত্যাদি নানা বিষয়ে নীতি সংশোধনের কাজ বাকি রহিয়াছে। সব কাজই সংসদের এক অধিবেশনে সারিয়া ফেলা যাইবে, এমন নহে, এমনকী এই জমানাতেও হয়তো সব সংস্কারের সময় মিলিবে না। কিন্তু সুযোগের জানালাটি কাজে লাগাইয়া মনমোহন সিংহ যদি সংস্কারের পথে অগ্রসর হইতে পারেন, তবে দেশি এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীদের নিকট একটি সুস্পষ্ট বার্তা যাইবে যে, এই সরকার শেষ অবধি কাজে ফিরিয়াছে। ভারতীয় অর্থনীতি দীর্ঘদিন নীতিপঙ্গুত্বে ভুগিয়াছে, তাহা বিনিয়োগ এবং আয়বৃদ্ধির পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকর। সেই জড়তা কাটাইয়া উঠিবার সুযোগ আসিয়াছে, ইহাই সংসদের সাম্প্রতিক ঘটনাবলির প্রধান তাৎপর্য। তবে এই সুযোগ কাজে লাগাইতে চাহিলে বলিষ্ঠতার পাশাপাশি কংগ্রেসকে আর একটি কাজ করিতে হইবে। শরিক, বন্ধু, নিরপেক্ষ, এমনকী বিরোধী শিবিরের বিভিন্ন দলের সহিত যথাসম্ভব সমন্বয় সাধনের চেষ্টা করা জরুরি। অহমিকা নয়, বাস্তবোচিত বিচক্ষণতাই গণতন্ত্রের সাফল্যের উপায়। তাহা না থাকিলে সুযোগের জানালা বেশি দিন খোলা থাকে না। সাফল্যের গৌরবে অতিমাত্রায় উৎসাহিত হইয়া পড়িলে মনমোহন সিংহ এবং বিশেষত, তাঁহার সদা-গর্বিত সহকর্মীরা বড় ভুল করিবেন। কথাটি চিদম্বরম প্রমুখের মনে রাখা দরকার।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.