রাজ্যে বছরে মাছের ঘাটতি হয় প্রায় দু’লক্ষ টন।
ভাঁড়ারেও মা ভবানী অবস্থা।
এই পরিস্থিতিতে এক চালে অতিরিক্ত মাছ ও বাড়তি টাকা তুলতে জলাশয়কে বেছে নিতে চাইছে রাজ্যের নতুন সরকার।
সরকারি মালিকানাধীন বিল, বাওড় এবং অন্যান্য জলাশয় থেকে একাধারে আয় এবং মাছের উৎপাদন বাড়ানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে। মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে গড়া টাস্ক ফোর্সের সাম্প্রতিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই এই প্রসঙ্গ তোলেন। তিনি বলেন, জলাশয়ের যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে একই সঙ্গে সরকারের আয় এবং মাছের উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব। তাতে রাজ্যে মাছের ঘাটতি পূরণ করা যাবে।
কী ভাবে এটা সম্ভব হবে?
সরকারের পরিকল্পনা, বিভিন্ন বিল ও বাওড় এত দিন যে-ভাড়ায় লিজ দেওয়া হত, তার পরিমাণ অনেকটা বাড়িয়ে দেওয়া হবে। মৎস্যজীবীরা সেই লিজের টাকা তোলার জন্যই উৎপাদন বাড়াতে বাধ্য হবেন। জলাশয়ের লিজ ভাড়া বাড়ানোর আগে অবশ্য জলাশয়গুলির মূল্যায়ন করে প্রতিটির লিজের ভাড়া নির্ধারণ করা হবে বলে মৎস্য দফতর সূত্রের খবর। এই নতুন প্রকল্পের খসড়া তৈরি করেছে ওই দফতরই।
রাজ্যে সরকারি মালিকানাধীন যত বিল ও বাওড়ের মতো জলাশয় রয়েছে, তার মোট আয়তন প্রায় ৪২ হাজার হেক্টর। তার অধিকাংশই ভূমি দফতরের অধীন। স্থানীয় মৎস্যজীবীদের সমবায়গুলি দীর্ঘদিন ধরেই ওই সব জলাশয়ে মাছ চাষ করে আসছে। লিজ-ভাড়ার ভিত্তিতে সমবায়গুলিকে মাছ চাষের অধিকার দেয় সরকার। ওই লিজের মেয়াদ সাধারণ ভাবে তিন থেকে সাত বছর। এক মৎস্য আধিকারিক জানান, অনেক দিন ধরে এই ব্যবস্থা চলছে। ওই সব জলাশয় থেকে সরকারের উপার্জন খুবই কম। মাছের উৎপাদনও তেমন হয় না।
অথচ রাজ্যে মাছের বিপুল ঘাটতি রয়েছে। রাজ্যে বছরে ১৬ লক্ষ মেট্রিক টন মাছ দরকার। কিন্তু উৎপাদন হয় ১৪ লক্ষ মেট্রিক টন। ঘাটতি পূরণ করার জন্য ভিন্ রাজ্য থেকে মাছ আমদানি করতে হয়। তার বেশিটাই আসে অন্ধ্রপ্রদেশ, তামিলনাড়ু ও কর্নাটক থেকে। ওড়িশা থেকেও আসে কিছুটা। নতুন প্রকল্পের খসড়া প্রস্তাবে বলা হয়েছে, প্রতিটি বিল ও বাওড়ে সমীক্ষা চালিয়ে তাদের লিজ-ভাড়া নির্ধারণ করা হবে। প্রাথমিক ভাবে বড়, মাঝারি ও ছোট তিন ভাগে ভাগ করা হবে ওই সব জলাশয়কে। যে-সমবায় সমিতি এত দিন নির্দিষ্ট জলাশয়ে মাছ চাষ করেছে, প্রথমে তাদেরই বর্ধিত ভাড়ায় তা লিজ দেওয়ার চেষ্টা হবে। ওই মৎস্যজীবীরা যদি নতুন লিজ-ভাড়ায় মাছ চাষ করতে না-পারেন, তা হলে সংশ্লিষ্ট জলাশয় ভাড়া দিতে নিলাম হবে প্রকাশ্যে।
সরকার শুধু লিজ-ভাড়া ঠিক করবে না, সংশ্লিষ্ট জলাশয়ে মাছ উৎপাদনের একটা লক্ষ্যমাত্রাও নির্দিষ্ট করে দেবে। প্রতিটি জেলায় তিন সদস্যের একটি কমিটি গড়া হবে। কোন বিলের কত ভাড়া হবে, সেটা ঠিক করবে তারাই। ওই কমিটিতে থাকবেন জেলাশাসক এবং মৎস্য ও ভূমি দফতরের এক জন করে প্রতিনিধি। মৎস্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দেওয়ার পরে ঠিকমতো কাজ হলে সরকারি বিল ও বাওড়ে মাছের উৎপাদন হবে এক লক্ষ ৭৫ হাজার মেট্রিক টন। সে-ক্ষেত্রে মাছের ঘাটতি পূরণ তো হবেই। ধীরে ধীরে মাছ উৎপাদনে ‘উদ্বৃত্ত-রাজ্য’ হতে পারে পশ্চিমবঙ্গ।
নতুন পরিকল্পনা রূপায়িত হবে কী ভাবে? সরকারি সূত্রের খবর, এর জন্য ১৯৯১ সালের ভূমি ও ভূমি সংস্কার আইনের একটি ‘রুল’ সংশোধন করতে হবে। সেই পর্ব সাঙ্গ করে বিজ্ঞপ্তি জারি করবে রাজ্য সরকার। মাছ উৎপাদন বাড়াতে সরকারের এই উদ্যোগের মধ্যে মাছের বাজার আগুন হয়েই আছে। এই অবস্থায় কলকাতার বাজারে মাছের দাম নিয়ন্ত্রণের জন্য পুরসভার কমিশনারকে নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এখন থেকে প্রতিদিন শহরের বিভিন্ন বাজারে মাছের দামের তালিকা তৈরি করতে বলা হয়েছে। পুর কমিশনার খলিল আহমেদ সম্প্রতি পুর বাজারের দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসারদের ডেকে এ কথা জানিয়ে দেন। |