নলহাটি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনের প্রার্থিপদ নিয়ে তৃণমূলের কাজিয়া প্রকাশ্যে এল। রবিবার নলহাটি হরিপ্রসাদ হাইস্কুলে একটি কর্মিসভায় হাজির হয়ে ওই কেন্দ্রের গত বারের তৃণমূলপ্রার্থী মনুস্মৃতি দেবনাথ বলেন, “আমি এ বারেও প্রার্থিপদের দাবিদার।” ঘটনা হচ্ছে, ইতিপূর্বেই নলহাটি কমিউনিটি হলের একটি কর্মিসভায় এলাকার প্রাক্তন পুরপ্রধান তথা দলের জেলা সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব ওঝাকে উপনির্বাচনে প্রার্থী করার দাবি তুলেছিলেন তাঁর অনুগামীরা। এ দিন বিপ্লববাবু অবশ্য বলেন, “দলের মধ্যে কেউ নিজেকে প্রার্থিপদের দাবিদার মনে করতেই পারেন। কিন্তু এ ব্যাপারে যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার তা দলীয় নেতৃত্বই নেবেন।” সম্প্রতি নলহাটির কংগ্রেস বিধায়ক অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় জঙ্গিপুরের সাংসদ নির্বাচিত হওয়ার পরে এই আসনে উপনির্বাচন অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়েছে।
বিপ্লব ওঝা-র অনুগামীদের সেই সভায় কিন্তু ডাক পাননি প্রদেশ তৃণমূল সদস্য তথা নলহাটি শহর তৃণমূলের সভাপতি মনুস্মৃতি দেবনাথ। এ দিনের সভায় নলহাটির দীর্ঘদিনের এই তৃণমূল নেতার সমর্থনে গলা ফাটালেন বহু তৃণমূলকর্মীই। কর্মিসভায় উপস্থিত বাণিওর অঞ্চলের বারশোর গ্রামের তৃণমূলকর্মী মহম্মদ মহিদ আলি বলেন, “মনুস্মৃতিদেবী আমাদের বহু আন্দোলনের সঙ্গী। বর্তমান বিধানসভা এলাকায় সাংসদেরও প্রতিনিধি। অথচ তাঁকেই প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে না।” হরিদাসপুর অঞ্চলের উদয়নগরের তৃণমূলকর্মী আসরাফুল ইসলাম, কলিঠা অঞ্চলের তৃণমূলকর্মী রতন লেট, বাউটিয়া অঞ্চলের তৃণমূল কর্মী গোরাচাঁদ মণ্ডল-সহ সভায় উপস্থিত বহু কর্মী জেলার তৃণমূল নেতৃত্বের প্রতি প্রায় ‘হুঁশিয়ারি’ দিয়েই বললেন, “মনুস্মৃতিদেবীকে প্রার্থী না করলে তাঁকে নির্দল প্রার্থী হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতেও উৎসাহ দেব।” তাঁদের অভিযোগ, দলীয় নেতৃত্বের একাংশ পুরনো তৃণমূলকর্মীদের গুরুত্ব না দিয়ে সুযোগ বুঝে সদ্য দলে যোগ দেওয়া লোকেদেরই বেশি প্রাধান্য দিচ্ছেন।
রবিবারের সভায় শতাধিক তৃণমূলকর্মী বিধায়ক প্রার্থিপদে মনুস্মৃতিদেবীর প্রতি সমর্থন দেখালেও বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে নারাজ দলের নলহাটি ২ ব্লক সভাপতি তথা নলহাটি পুরসভার তৃণমূল কাউন্সিলর অশোক ঘোষ। তাঁর দাবি, “একটি অংশের নেতারা দলের মধ্যে বিশৃঙ্খলা তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছেন। সাধারণ মানুষের সঙ্গে তাঁদের কোনও যোগ নেই।” তাঁর পালটা অভিযোগ, “ওই সভা করতে দলের কোনও অনুমতিই নেওয়া হয়নি। দলের ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বকে সব জানাব।” যদিও ওই সভার আহ্বায়ক তথা দলের নলহাটি ১ ব্লক সভাপতি মানস মণ্ডলের দাবি, “পঞ্চায়েত ও বিধানসভা উপনির্বাচনের আগে দলীয় কর্মীদের নিয়ে নানা সাংগঠনিক স্তরের আলোচনা করতে সভার আয়োজন করেছিলাম।” এ বিষয়ে কারও অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন নেই বলেই তাঁর দাবি।
এ দিনের ঘটনা সম্পর্কে তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের ফোনে বহু বার যোগাযোগ করা হলেও তাঁর মন্তব্য মেলেনি। |