|
|
|
|
বাবা জ্ঞান দিয়ো না |
|
হৃত্বিক, বিপাশা ও আপনি
ডেডলাইন ভ্যালেনটাইন’স ডে। ১৪ ফেব্রুয়ারি। অর্থাৎ সিক্স
প্যাকের পেশির অধিকারী হওয়ার জন্য হাতে সময় দু’মাস কয়েক দিন।
তার মন্ত্র কী? জানাচ্ছেন টোটা রায় চৌধুরি |
|
পাগলু টু’র শ্যুটিঙের জন্য তখন আমি হায়দরাবাদে। সিতারা হোটেলে সন্ধেবেলা ওদের নীচের ফ্লোরে জিম করতে গিয়ে দেখি, হৃত্বিক রোশন। ও তখন ‘ক্রিশ থ্রি’-র শ্যুটিঙের জন্য হায়দরাবাদে। হৃত্বিকের সামনে ওঁর ইনস্ট্রাকটর ক্রিশ গেঠিন। যে ভদ্রলোক এখন রণবীর সিংকে ট্রেনিং দিচ্ছেন। আই পড চালিয়ে এক মনে জিম করে চলেছে হৃত্বিক। মুখে কথা নেই। অথচ দেখে বেশ বোঝা যাচ্ছে, পুরো ব্যাপারটা ও খুব এনজয় করছে। যে কোনও এক্সারসাইজের প্রথম শর্ত হল এটাই। ওর অল্প দূরে আমিও জিম করতে শুরু করলাম। কিছুক্ষণ বাদেই বুঝলাম, যে যন্ত্রপাতিগুলো ব্যবহার করছি সেগুলো হৃত্বিকের। সিকিওরিটির লোকজন বিনীতভাবে এসে বললেন। আমার তো তখন লজ্জার একশেষ! মাথা তুলে দেখি হৃত্বিক হেসে বলছে, ‘‘নো প্রবলেম, ক্যারি অন।’’ যেখানে যায় হৃতিক, ট্র্যাভলিং জিম সঙ্গেই থাকে। এতটাই পার্টিকুলার। তা বলে ‘সিক্স প্যাক’-এর জন্য সবাইকে ট্র্যাভলিং জিম নিয়ে ঘুরতে হবে বলছি না, কিন্তু ‘পার্টিকুলার’ হতে দোষ কী!
|
ডায়েটিঙেই সত্তর ভাগ |
ছোট্টবেলা থেকে যেহেতু শরীর চর্চাটা আমার প্যাশন, অনেকের কাছেই আমি ‘টলিউডের পি টি টিচার’। ফেলুদা থেকে যিশু। অনেকের ধারণা, সিক্স প্যাক করতে গেলে খুব বেশি মাত্রায় পেটের মাসলের এক্সারসাইজ করতে লাগে। একদম ভুল। সিক্স প্যাক সত্তর ভাগ হয় ঠিকঠাক ডায়াটিং-এ। বাকিটা জিম। এখানে আমি জিতের কথা বলব। ‘ফাইটার’ ওর একটা কামব্যাক ছবি। ও চেয়েছিল পোস্টারে এমন একটা লুক, যাতে ছবির নামটার সঙ্গে যায়। মাত্র তিন মাসে ‘প্যাক’ এনেছিল জিৎ। নুন ছাড়া খাবার খেত। চিনি, তেল এক্কেবারে কমিয়ে দিয়েছিল। বয়েলড চিকেন, টক দই খুব খেত। তার সঙ্গে ঠিকঠাক ট্রেনারের কাছে গিয়েছিল।
শীতকাল সময়টা কিন্তু অসম্ভব লোভে পড়ার মতো। নলেন গুড়, প্লাম কেক, পিঠেপুলি। তারপর নিউ ইয়ার্স ইভ, ফার্স্ট জানুয়ারির পার্টি। সরস্বতী পুজো। গুচ্ছের স্ন্যাক্স, পানীয়। এবারে আবার ‘ভ্যালেনটাইন ডে’ সরস্বতী পুজো একই দিনে। তার আগেই প্যাক রেডি করতে গেলে রাশ টানতেই হবে।
টলিউডে ‘সিক্স প্যাক’ ব্যাপারটা প্রথম যদি কেউ হাইলাইট করে থাকে, তবে সেটা জিৎ। যেটা বলিউডের ক্ষেত্রে সলমন। পরে করেছেন আমির, শাহরুখদের অনেকেই।
জিতের সিক্স প্যাকের পর টলিউডে আরও তিনজনের নাম উঠে আসে। ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত, হিরণ আর দেব। বিশেষ করে ইন্দ্রনীলের। ও শুধু প্যাক দিয়ে ‘কিল’ করতে পারে। বছর কয়েক আগে ইন্দ্রনীল একটা আন্ডারগারমেন্টস-এর বিজ্ঞাপন করত। তাতে দেখতাম ওকে দেখে ধুপধাপ মেয়েরা কী করে পড়ে যাচ্ছে। পরে রিংগোর ‘সিস্টেম’ দেখেও আমার একই কথা মনে হয়েছে। হিরণের ব্যাপারটা ইন্টারেস্টিং অন্য কারণে। ২০১০-এ ক্রেন থেকে পড়ে গিয়ে ওর বাঁ কাঁধের রোটেটার গাফ বলে একটা মাসল ছিঁড়ে যায়। এর পরও কিন্তু ‘ম্যাচো মুস্তাফা’ ফিল্মটার জন্য ও খুব যত্ন নিয়ে ‘প্যাক’ তৈরি করে। প্যাক তৈরির ক্ষেত্রে এই যত্নটা একটা ভাইটাল ব্যাপার। ইদানীং প্যাক না হোক, বলিউডে অ্যাথলেট টাইপ চেহারা দেখা যাচ্ছে মেয়েদের মধ্যেও। বিপাশা যেমন। শুনেছি এক্সারসাইজের পাশাপাশি সারা বছরে এক দিন ও ভাত খায়। অসম্ভব স্বাস্থ্যসচেতন। ভারতীয় মেয়েদের ক্ষেত্রে ‘সিক্স প্যাক’ ব্যাপারটা চলে না। বিপাশাদের মতো চেহারায় সিক্স না হোক, ফোর প্যাক সম্ভব। |
হৃত্বিক রোশন |
ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো |
|
‘যা সওয়াবে, তাই সয়’ নয় |
সিক্স প্যাকের এক্সারসাইজ হল সারা শরীরের জন্য ‘অপটিমাম এক্সারসাইজ’। অর্থাৎ, যে শরীর যতটা নিতে পারে ততটাই। একেবারেই ‘শরীরের নাম মহাশয়, যা সওয়াবে তাহা সয়’ গোছের ব্যাপারই নয়। অতিরিক্ত কিছু করলেই শরীর জানান দেয়। অনেকটা বাবার কান মোলার মতো। তখন থামা উচিত।
সপ্তাহে ছ’দিন এক ধরনের এক্সারসাইজ চার্টের কথা আমি বলব।
দু’দিন ‘রেজিজ্স্ট্যান্স ট্রেনিং’। এখানে শরীরের যে কোনও মুভমেন্ট একটা ‘বাধা’কে সামনে রেখে করানো হয়। যেমন, হয়তো হাতটাকে ওঠা-নামা করতে বলা হল, কিন্তু একটা ‘ওয়েট’ চাপিয়ে। একটা রাবার টিউব কোনও একটা জায়গায় আটকে, তাকে টানতেও বলা হতে পারে। কিংবা স্টিলের স্প্রিং বা ‘চেস্ট এক্সপ্যানডার’ ব্যবহার করেও এই ট্রেনিং দেওয়া হয়। এছাড়া ‘পুশ আপ’, ‘চিন আপ’, ‘ডন-বৈঠক’ ইত্যাদি তো আছেই। দু’দিন ‘কার্ডিও এক্সারসাইজ’। তার মধ্যে হাঁটা, দৌড়নো, সাইক্লিং, সাঁতার কাটা, ভারী কিছু নিয়ে হাঁটা ইত্যাদি পড়ে। দু’দিন যোগাসন। তার মধ্যে সর্বাঙ্গাসন, হলাসন, মৎস্যাসন, পশ্চিমত্থাসন, ভুজঙ্গাসন, শলভাসন, অর্ধ মৎসেন্দ্রাসন, শীর্ষাসন। শীর্ষাসন না পারলে আবার সর্বাঙ্গাসন।
সপ্তাহর প্রথমদিন রেজিজ্স্ট্যান্স, তারপর দিন কার্ডিও, তারপর দিন যোগাসন। তারপর তিন দিন আবার তাই। সপ্তাহর শেষ দিন বিশ্রাম। পুরো ব্যাপারটা কিন্তু ভাল ট্রেনারের কাছে করা উচিত। তাঁর পরামর্শ নেওয়ার আগে তাঁকে আপনার ‘ফিজিক্যাল এক্টিভিটি’ নিয়ে পরিষ্কার ধারণা দেওয়া উচিত। কোনও রোগ-টোগ থাকলে অবশ্যই বলা উচিত। মোটামুটি তিন মাসে প্যাক তৈরি হয়ে যায়। দু মাসের মধ্যে ‘প্যাক’ চাইলে যোগাসনটা বাদ রেখে বাকি দুটো ট্রেনিং তিন দিন-তিন দিন করে দিতে হয়। |
ডায়েট |
• সন্ধে ছ’টার পর স্টার্চ (রুটি, ভাত) ইত্যাদি জাতীয় খাবার একদম নয়
• দিনে দুই থেকে তিন চামচ চিনি। তিন লিটার জল
• কম তেলে রান্না
• বেশি মশলাদার খাবার নয়
• একসঙ্গে বেশি খাওয়া নয়। তিন থেকে ছ’বারে খাওয়া। তিন ঘণ্টা অন্তর খাওয়া
• তিনটে আলাদা মরসুমি ফল, চারটে আলাদা সবজি, আলাদা রঙের। দুটো রুটি, এক বাটি ভাত, মাছ পারলে না ভেজে বা চর্বির অংশ বাদ দিয়ে। চর্বি বাদ দিয়ে বয়েলড চিকেন
• তেল, ঘি, মাখন একেবারে ছেড়ে দেওয়া বলাটা মুশকিল। পরিমাণে অল্প খাবেন। কিন্তু এগুলোর বাজার চলতি সাবস্টিটিউট কখনই খাবেন না
• দিনে সাত ঘণ্টার ঘুম |
|
মাধ্যমিকে অঙ্কে নব্বই পাওয়ার মতো |
যে কোনও চেহারাতেই সিক্স প্যাক সম্ভব। যে চেহারার গড়ন যেমন, তাতে ‘প্যাক’ তেমন হয়। দু’রকমের চেহারার কথা বলি। ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো আর মেসি। রোনাল্ডোর প্যাক, ফিজিক আমার কাছে পৃথিবীর সেরা। মেসির প্যাক অত স্পষ্ট নয়। লাইনসগুলো ততটা পরিষ্কার নয়।
একটু স্থূল চেহারা হলে বাড়তি কিছু কার্ডিও ট্রেনিং করতে হয়। প্যাক ব্যাপারটা শক্ত, সন্দেহ নেই। অনেকটা মাধ্যমিকে অঙ্কে নব্বই পাওয়ার মতো। কিন্তু অসম্ভব নয়। কাজেই ভ্যালেনটাইন’স ডে-কে সামনে রেখে সিক্স প্যাকের ভ্যালেনটিনো হতে শুরু হোক ‘অপটিমাম এক্সারসাইজ’। |
|
|
|
|
|