ফুটবল মাঠে আজ বাঙালির সেই চিরন্তন লড়াই
করিমের দল সাজানোর উপর অনেক কিছু নির্ভর করবে
ড্রেসিংরুমের রসায়নই এই বড় ম্যাচ জেতায়!
ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান ম্যাচ আসলে নিখাদ স্নায়ুযুদ্ধ। কোনও অঙ্ক বা পরিসংখ্যান দিয়ে এর বিচার করা যায় না। ট্রেভর মর্গ্যান তিরিশ না একত্রিশ টানা ক’টা ম্যাচ জিতেছে এই পরিসংখ্যান যেমন আজকের ডার্বিতে কোনও ফ্যাক্টর নয়, তেমনই করিম এই ম্যাচটা জেতার ব্যাপারে এগিয়ে কি না সেটাও ধর্তব্যের মধ্যে রাখা উচিত নয়। ফুটবলার এবং কোচ হিসেবে একশোর ওপর বড় ম্যাচে মাঠের ভেতর থাকার অভিজ্ঞতা আছে আমার। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই বলছি, এই ম্যাচের জেতা-হারা নির্ভর করে আগের ক’টা দিন এবং ম্যাচের দিন কী ভাবে পুরো টিমকে মোটিভেট করেছে দু’দলের কোচ। অনেকে আমার সঙ্গে ভিন্নমত হতে পারেন, কিন্তু আমি মনে করি, এই বড় ম্যাচে জেতা-হারার প্রশ্নে কোচের দায়িত্ব অন্তত চল্লিশ শতাংশ। গত বছর কলকাতা লিগে পুলিশের কাছে হারের পরেও চোট-আঘাত পাওয়া টিমকে নিয়ে মর্গ্যানের ইস্টবেঙ্গলকে হারিয়েছিলাম। শুধু নানা টোটকায় চাঙ্গা করে এবং সঠিক স্ট্র্যাটেজি দিয়ে। ওপারা-পেনরা হয়তো কিছু ট্রফি জিতেছিল গত বার, কিন্তু একটা ম্যাচেও হারাতে পারেনিমোহনবাগানকে।
ডার্বি জেতার টোটকা এবং স্ট্র্যাটেজি আমি শিখেছি প্রদীপ বন্দোপাধ্যায়ের কাছ থেকে। বহু বড় ম্যাচ প্রদীপদা উতরে নিয়ে গিয়েছেন শুধু তাঁর দলের ফুটবলারদের ভোকাল টনিক দিয়ে। সেটা কী? শুধুই বক্তৃতা! না, তা নয়। এই ম্যাচটার আগে হাতে যে ক’টা দিন সময় থাকে সেই সময় প্রত্যেক ফুটবলারের মুখ-চোখ কড়া নজরে রাখতেন তিনি। দেখতেন কে চাপে আছে, কে ফুরফুরে মেজাজে। কর্তা এবং সমর্থকদের তীব্র চাপ তৈরি হয় এই ম্যাচ নিয়ে। কোনও ফুটবলার ভয় পেতেই পারে। সেটা দোষের নয়। সে জন্যই ফুটবলারদের নানা ‘টনিকে’ উদ্বুদ্ধ করতে হয়। এটা এক-এক জন কোচ এক-এক ভাবে করেন। অরুণ ঘোষও বড় কোচ ছিলেন, কিন্তু এই ম্যাচের আগে কেঁপে যেতেন। প্রদীপদা বড় ম্যাচের আগে তিনটে জিনিস করতেন: এক) ফুটবলারদের ডেকে ডেকে বলতেন, তোমার চেয়ে ভাল ফুটবলার বিশ্বে কেউ নেই। সেটা আরও একবার প্রমাণ করো। দুই) মাঠে নেমে কার কাজ কী হবে ধরে ধরে বোঝাতেন। তিন) সবার মধ্যে একটা বিশ্বাস তৈরি করে দিতেন এই বলে যে, তুমিই ম্যাচটা জিতিয়ে ফিরবে। বলতে দ্বিধা নেই, কোচ হিসেবে এই টোটকাগুলো ব্যবহার করে আমিও অনেক বড় ম্যাচ জিতেছি।
আর নিজের ফুটবলার জীবনে চুয়াত্তর, সাতাত্তর-সহ এমন বহু ডার্বির উদাহরণ দিতে পারি, যেখানে তারকাসমৃদ্ধ ফেভারিট টিম হেরে গিয়েছে। সে সব তথ্য মাথায় রেখেও লিখছি, আই লিগের এই ম্যাচে ইস্টবেঙ্গল সামান্য হলেও এগিয়ে। এর প্রধান কারণ যদি হয়, জিতে জিতে মেহতাবদের আত্মবিশ্বাস তুঙ্গে থাকা, তা হলে অন্য কারণ অবশ্যই পেন-ওপারা-খাবরাদের দীর্ঘ দিন একসঙ্গে খেলা। যা মর্গ্যানকে ড্রেসিংরুম-রসায়নে এগিয়ে রাখবে। ইস্টবেঙ্গল ৪-৩-১-২ ফর্মেশনে খেলে। পেন ফ্রি-ফুটবলার হিসেবে স্ট্রাইকারদের পিছনে সংযোগের কাজটা করে। আমার ধারণা, সেটা আজ সামান্য বদলাবে মর্গ্যান। ওডাফাকে সামলানোর জন্য। মোহনবাগানে ওডাফাই একমাত্র ফুটবলার যে ম্যাচের রং বদলে দিতে পারে। টোলগে যদি সুস্থ থাকত তা হলে আমি বলতাম ম্যাচটা ফিফটি-ফিফটি।
এই ম্যাচে ইস্টবেঙ্গলের উপর চাপ কম। কারণ ড্র করলেও ওদের বিশাল কোনও ক্ষতি নেই। লিগ অনেক বাকি। মোহনবাগানের কিন্তু তা নয়। এই ম্যাচ হারলে রহিম নবিদের মানসিকতা আরও তলানিতে নেমে যাবে। এমনিতে পরপর তিনটে ম্যাচে পয়েন্ট নষ্ট করে করিমের টিমের মনোবল ভাল জায়গায় নেই। ইচে ছাড়া সব ফুটবলারকেই শুনলাম পাচ্ছে মোহনবাগান। নবির দলে ফেরাটা করিমকে সুবিধে দেবে। কিন্তু মোহনবাগান কোচ কতটা মোটিভেট করতে পারবে ওডাফা-নবিদের, তার ওপর ম্যাচের ভাগ্য অনেকখানি নির্ভর করছে। সবথেকে বড় কথা, শুধু ওডাফার ওপর নির্ভর করে জিততে গেলে কিন্তু সমস্যায় পড়বে করিম। টিম গেম খেলতে হবে মোহনবাগানকে। এবং তার জন্য সঠিক স্ট্র্যাটেজি দরকার। করিম কী ভাবে টিম সাজায় সেটা দেখার অপেক্ষায় থাকলাম।

দু’দলের দুই ব্রহ্মাস্ত্র
লাল-হলুদের চিডি
শক্তি: যে কোনও পরিস্থিতিতে ঠান্ডা মাথা। অতীতে ডার্বির এক ম্যাচে চার গোল করার আত্মবিশ্বাস। অনেকটা জায়গা জুড়ে খেলার ক্ষমতা।
দুর্বলতা: গতি কম। উইথ দ্য বল ততটা মারাত্মক নয়। গোলের সুযোগ নষ্ট করার প্রবণতা।
কী ভাবে আটকাতে চান করিম: ডিপ ডিফেন্সে ঢোকার আগে রাকেশ মাসিকে দিয়ে ব্লকিং। মাসিকে টপকে গেলে আইবর ও মেহরাজউদ্দিনকে দিয়ে ডাবল কভারিং।
সবুজ-মেরুনের ওডাফা
শক্তি: বড় শরীরকে কাজে লাগানো। বক্সের আশপাশ থেকে গোলে নিখুঁত শট নেওয়া। ভয়ঙ্কর ফ্রিকিক।
দুর্বলতা: পুরোপুরি ফিট নয়। বয়স গতিতে থাবা বসিয়েছে। একাই গোলের রাস্তা তৈরি করার বাড়তি চাপ।
কী ভাবে আটকাতে চান মর্গ্যন: ডাবল কভারিং। বড় শরীরটাকে কাজে লাগায় বলে ফাইনাল ট্যাকলে যাবেন ওপারা। কভার করবেন অর্ণব। ইস্টবেঙ্গলের ছোট বক্সের ভেতর ওডাফাকে কিছুতেই বল ধরতে দেওয়া নয়। বক্সের আশপাশে বাগানের ফ্রিকিক পাওয়া আটকানোর চেষ্টা করা। যে ফ্রিকিকগুলো ওডাফাই নেন।

যুযুধান যুবভারতী
ইস্টবেঙ্গল : মোহনবাগান (২-০০)




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.