|
|
|
|
র্যাঞ্চোরাও মানছে, স্পর্ধা জুগিয়েছে আইআইটি-ই |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
দিন-রাত বই মুখস্থ করা চতুররা নয়। শেষ কথা বলবে ছক-ভাঙা ভাবনার পথিক র্যাঞ্চোরাই। পেশাগত জীবনে উৎকর্ষের চাবিকাঠির খোঁজে এই তত্ত্বই উঠে এল আইআইটি-র প্রাক্তনীদের মহাসম্মেলনের মঞ্চে।
সাহিত্য, প্রচারমাধ্যম ও বিনোদন জগতে আইআইটিয়ানরা, এই নিয়ে আলোচনায় শনিবার থ্রি ইডিয়টস ছবির র্যাঞ্চোদেরই যেন পুরোভাগে দেখা গেল। তাঁদের মধ্যে নাসার সফল বিজ্ঞানী থেকে চলচ্চিত্রকার হয়ে ওঠা বেদব্রত পাইনকে তো এখন চেনে গোটা দেশ। আইআইটি-তে বেদব্রতর সমসাময়িক লেখক-সাংবাদিক সন্দীপন দেব, অ্যানিমেশন ছবি বিশারদ আদিত্যনাথ ঝা বা আমেরিকায় প্রতিষ্ঠিত চিত্রশিল্পী সুজাতা তিব্রেওয়ালাদের সঙ্গেও কলকাতার পরিচয় ঘটল। আইআইটি-তে এই চার জনের থেকে খানিকটা সিনিয়র, কিরণ শেঠ ও অরুণ সহায়রাও ছিলেন এক মঞ্চে। এ দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ঘুরে ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীত ও শিল্প-সাহিত্যের প্রসারে একটি সংস্থা গড়ে তুলেছেন ওই দু’জন।
এক ঘণ্টার পরিসরে বিজ্ঞান, প্রযুক্তিবিদ্যা, মানবিক বিদ্যার মতো প্রচলিত সীমারেখাগুলিই অবান্তর প্রমাণ করে ছাড়লেন তাঁরা। বরং দেখা গেল, সৃজনশীলতার বিকাশ বা শিল্পচর্চার ক্ষেত্রে বিজ্ঞান পড়ার উপকারিতা নিয়েই তাঁরা সরব। চিটাগং-খ্যাত বেদব্রতকে অবশ্য বেশি ক্ষণ পায়নি কলকাতা। তাঁর ছবি প্রদর্শনের জন্য এ দিন বিকেলেই বিদেশের উড়ান ধরার কথা ছিল বেদব্রতর। তার আগে আলোচনার ধরতাইটা তিনিই দিয়ে গেলেন।
খড়্গপুর আইআইটি-র ১৯৮৬ সালের ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের স্নাতক বেদব্রত বললেন, “আইআইটি-ই শিখিয়েছিল অন্য ভাবে ভাবতে, নতুন ভাবনা ভাবতে। আইআইটি আমাদের অজানার জন্য প্রস্তুত করেছিল।”
সেটা কী ভাবে?
পরিষ্কার হল বাকিদের কথায়। অধুনা শিকাগোবাসী, সুজাতা যেমন বলছিলেন, “আমার কাছে শিল্পকলা হল, বিজ্ঞানের এক ধরনের বিশ্লেষণ।” আইআইটি খড়্গপুরে গণিতশাস্ত্রের এই প্রাক্তন ছাত্রী এখন তাঁর ছবির জন্য বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্মান পেয়েছেন। ‘আর্টসায়েন্স এডুকেটর’ বলে পরিচিত চিত্রশিল্পীর ছবিতেও বিজ্ঞানের নানা গবেষণার প্রভাব। মেয়েদের অধিকার বা ক্ষমতায়নের কথা বলতেও বিজ্ঞানের নানা তত্ত্বের সাহায্য নিয়েছেন, কবুল করলেন সুজাতা।
আইআইটি-জীবনের পরে কর্পোরেট-জগত ও দিল্লিতে সাংবাদিকতায় দীর্ঘদিন জড়িয়ে থাকার পরে সদ্য প্রথম উপন্যাস লিখে
শেষ করেছেন সন্দীপন দেব। তিনি বললেন, “ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের কৃৎকৗশল জানা থাকলে, লেখালেখিতেও বিশেষ সুবিধা হয়। মগজে ফ্লো-চার্ট সাজিয়ে রেখে বেশ গোছালো, যুক্তি-ঠাসা
হয় গদ্য।”
শুধু বিজ্ঞান-প্রযুক্তির চর্চায় নয়, আইআইটি-তে দেশের সেরা প্রতিভাদের সান্নিধ্যে সৃজনশীলতার নানা দিক খুলে যায় বলে মনে করেন আদিত্য ঝা। অ্যানিমেশন চলচ্চিত্র নির্মাতা সংস্থার এই সিইও-র কথায়, “আইআইটি-তে ঢুকে চার পাশে গুণী ছেলেমেয়ের ভিড়ে সবার আগে নিজের বোকা-বোকা গর্ব চুরমার হয়ে যায়। বুঝতে পারি, কত কিছু শেখার বাকি আছে।”
ক্রিকেট খেলতে খেলতে বা মজাদার সব দুষ্টুমির ফাঁকে গণিত-বিজ্ঞানের কঠিন সব ফর্মুলা মিলিয়ে দেওয়ার নানা গল্প উঠে আসে প্রাক্তনীদের আড্ডায়। কম্পিউটার সায়েন্সের পড়ুয়া স্থাপত্যবিদ্যার ক্লাস করছেন, এমন নমুনাও অজস্র।
আইআইটিয়ানরা মনে করিয়ে দিলেন, একটা পর্যায়ে সব ধরনের জ্ঞানই মিলে-মিশে যায়। জরুরি শুধু বাঁধা গতের বাইরে গিয়ে ভাবতে পারার স্পর্ধাটা। |
|
|
|
|
|