পেনশন-বিমায় বিজেপিকে সঙ্গে চান মনমোহন
ফডিআই ভোটাভুটির ভরবেগ পুঁজি করে ব্যাঙ্কিং, পেনশন ও বিমা বিলের মতো সংস্কারের বাকি কর্মসূচিতে এ বার ধাক্কা দিতে চাইছেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। তবে বিজেপি-র সঙ্গে বিরোধের আবহে নয়, বরং সুষমা-জেটলিদের সঙ্গে সমঝোতা করে সে পথে এগোতে চান তিনি।
লোকসভার পর গত কাল রাজ্যসভায় এফডিআই ভোটে জিতেছে সরকার। তার মাধ্যমে কিছুটা হলেও সংসদে রাজনৈতিক কর্তৃত্ব ফিরে পেয়েছে কংগ্রেস। সেই পরিবেশে সোমবার লোকসভায় কম্পিটিশন বিল ও ব্যাঙ্কিং বিল যেমন পেশ করতে চলেছে সরকার, তেমনই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে পেনশন ও বিমা বিল নিয়ে বিজেপি-র সঙ্গে আলোচনায় নেমেছেন চিদম্বরম-কমল নাথরা। পাশাপাশি জেডিইউ এবং বিজেডি-র মতো আঞ্চলিক দলের সঙ্গেও আলোচনা শুরু করেছেন সরকারের নেতারা।
ব্যাঙ্কিং বিলে সম্মতি দেওয়ার বিষয়টি বিজেপি ঘরোয়া ভাবে জানিয়ে দিয়েছে। কিন্তু পেনশন-বিমা বিল নিয়ে অবস্থান স্পষ্ট করেনি। সেই সঙ্গে কোম্পানি বিল, ফরওয়ার্ড চুক্তি বিলের মতো বিষয়ে বিজেপি-র ভূমিকা তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠতে চলেছে। কারণ এ সবের প্রতিটিতেই মতাদর্শগত আপত্তি রয়েছে বামেদের। আর তৃণমূল এখন সবেতেই কেন্দ্র বিরোধিতা করছে। আবার এফডিআই-এর মতো সংস্কারের প্রতিটি বিষয়ে মায়া-মুলায়মের শরণাপন্নও হতে চায় না কংগ্রেস। তাতে নিত্য নতুন ‘মূল্য চোকানোর’ আশঙ্কা রয়েছে। বিজেপি-র সহযোগিতা সে দিক থেকেই প্রাসঙ্গিক।
বিল বৃত্তান্ত
বিল কী অবস্থা বিজেপির অবস্থান
ব্যাঙ্কিং আইন সম্মতি সোমবার পেশ সংশোধন রয়েছে
পেনশন নতুন খসড়া মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত আলোচনা চলছে
বিমা নতুন খসড়া মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত আলোচনা চলছে
জমি আগামী সপ্তাহে সম্ভবত অনুমোদন বিল দেখে সিদ্ধান্ত
বস্তুত, গত সাড়ে তিন বছর ধরে সংসদে এতটাই নেতিবাচক পরিস্থিতির শিকার ছিল ইউপিএ, যে প্রধানমন্ত্রী ধরেই নিয়েছিলেন, সংসদের মাধ্যমে সংস্কার কর্মসূচি এগোনো মুশকিল। বিরোধীরা তো বটেই, শরিক তৃণমূল প্রতি পদে বাধা দিচ্ছিল। কিন্তু এফডিআই সাফল্যের পর সেই মনমোহনই বুঝতে পারছেন, তৃণমূল জোট ছাড়ায় শাপে বর হয়েছে। সংসদে সংস্কারের কর্মসূচি আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে চিদম্বরমরা এখন বিজেপি নেতৃত্বকে বোঝাচ্ছেন, পেনশন ও বিমা বিল পাশ করাতে সাহায্য করলে তার কৃতিত্ব বিজেপি-ও নিতে পারবে। তা ছাড়া পেনশন ও বিমা বিলের ভাবনা এনডিএ জমানাতেই শুরু হয়েছিল।
তবে রাজনীতির কারবারিদের মতে, শুধু দেশের অর্থনীতির প্রয়োজনীয়তা নয়, বিজেপি রাজনৈতিক কার্যকারণ বিশ্লেষণ করেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। সেই সঙ্গে দেখে নিতে চাইবে, মায়া-মুলায়ম-সহ বাকিরা সংসদে কী অবস্থান নিচ্ছেন। তাঁরা যদি দেখেন, এ সব বিল পাশ করাতে গিয়ে সরকার বিপাকে পড়ছে, তা হলে সহযোগিতা না-ও করতে পারেন।
কংগ্রেসের সঙ্গে আলোচনায় আপাতত পেনশন ও বিমা বিল নিয়ে কিছু প্রশ্ন তুলেছে বিজেপি। তাদের দাবি, বিমা ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নির ঊর্ধ্বসীমা বর্তমানের ২৬ শতাংশের বেশি বাড়ানো চলবে না। দ্বিতীয়ত, পেনশনের টাকা বাজারে খাটালে গ্রাহকদের ন্যূনতম ফেরত পাওয়ার ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করতে হবে। এই সংক্রান্ত আরও কিছু খুঁটিনাটি বক্তব্য রয়েছে সুষমা-জেটলি-যশবন্ত সিনহাদের।
পেনশনের ক্ষেত্রে ন্যূনতম ফেরতের দাবি অবশ্য সরকার মেনে নিয়েছে। কিন্তু চিদম্বরমরা চাইছিলেন, বিমা ক্ষেত্রে বিদেশি লগ্নির ঊর্ধ্বসীমা বাড়িয়ে ৪৯ শতাংশ করা হোক। বিমা ক্ষেত্রে যত পরিমাণ বিদেশি লগ্নিতে ছাড়পত্র দেওয়া হবে, পেনশন খাতে ততটাই ছাড়পত্র পাবে বিদেশি লগ্নি। তবে বিজেপি-র দাবি বিবেচনা করে এখন মধ্যপথ বের করার চেষ্টা করছে সরকার। অর্থ মন্ত্রক সূত্রে বলা হচ্ছে, কেন্দ্রের নতুন প্রস্তাব, বিমা ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নির ঊর্ধ্বসীমা ২৬ শতাংশই থাকুক। সেই সঙ্গে আরও ২৩ শতাংশ বিদেশি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া হোক। কেন্দ্রের এই শর্তে বিজেপি গররাজি নয় বলেই খবর। সে ক্ষেত্রে পেনশন খাতেও প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নির ঊর্ধ্বসীমা দাঁড়াবে ২৬ শতাংশ।
এই অবস্থায় বিজেপি-র একাংশ নেতা এ-ও মনে করছেন যে, সরকারের প্রস্তাব মন্দ নয়। সংস্কারের এই সব প্রস্তাবে বাদ সাধলে বিজেপি স্ববিরোধিতা করবে। এমনিতেই এফডিআইয়ের বিরোধিতা করে মধ্যবিত্তের ভোট হারানোর একটা শঙ্কা তৈরি হয়েছে। তা ছাড়া ভবিষ্যতে বিজেপি যদি কোনও দিন ক্ষমতায় আসে, তা হলেও পেনশন-বিমা বিল পাশ করাতে পারবে না। কারণ, তখন সব থেকে বেশি বাধা দেবে আরএসএস। তার থেকে এগুলি এখনই পাশ হয়ে যাওয়া ভাল। এমনকী, দলের একটি সূত্র বলছে, অরুণ জেটলির মতো নেতারা এ-ও মনে করেন, বিমা ক্ষেত্রে ৪৯ শতাংশ প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নির প্রস্তাবে রাজি হয়ে যাওয়া উচিত। কিন্তু চিদম্বরমের ঠান্ডা লড়াইয়ে তাতে বাদ সাধছেন যশবন্ত সিনহা।
বিপরীতে সংস্কারের কর্মসূচি এগোনোর ব্যাপারে আশায় বুক বাঁধছে কংগ্রেস। কারণ, সংস্কারে গতি এলে মন্দা ঘুচতে পারে। সে ক্ষেত্রে লোকসভা ভোটে যাওয়ার আগে আগামী বাজেটে আমআদমির জন্য নতুন ঘোষণার সুযোগ পাবে সরকার। সরকারের এক শীর্ষ নেতার কথায়, সব বিষয়েই যে বিজেপি সাহায্য করবে, সেই আশা কংগ্রেসের নেই। সে জন্য নবীন পট্টনায়ক, নীতীশ কুমার, জয়ললিতার সঙ্গেও যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।
এই সব চেষ্টার পর এ যাত্রায় অন্তত ব্যাঙ্কিং, বিমা ও পেনশন বিল পাশ করা গেলে অনেকটাই লক্ষ্যপূরণ হবে। রইল বাকি জমি বিল। সেই বিলের চূড়ান্ত খসড়া সম্ভবত আগামী সপ্তাহে মন্ত্রিসভার চূড়ান্ত অনুমোদন পাবে। কংগ্রেস নেতাদের মতে, যে হেতু বর্তমান জমি বিলটির সঙ্গে বাম, মুলায়ম, মায়াবতীদের জমি-নীতির বিশেষ ফারাক নেই, তা পাশ করাতে বিশেষ অসুবিধা হবে না।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.