সিন্ডিকেটরাজ কোনও মতেই বরদাস্ত করা হবে না। দলের অন্দরে ফের কড়া নির্দেশ দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কোথাও সিন্ডিকেটের দাপট মাথা চাড়া দিলেই পুলিশ ও প্রশাসন তার মোকাবিলা করবে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
রাজারহাট-নিউ টাউন এলাকায় গত কয়েক বছরে সিন্ডিকেটরাজের দৌরাত্ম্যের একাধিক ঘটনা ঘটেছে। দিন চারেক আগে নিউ টাউনের লস্করহাটি এলাকায় তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার ভবন তৈরির জন্য সিমেন্টের বরাত পাওয়া সংস্থার এক প্রতিনিধিকে স্থানীয় ইমারতি দ্রব্যের সরবরাহকারীদের একাংশ মারধর করে বলে অভিযোগ। মুখ্যমন্ত্রী এই কথা জেনেই সিন্ডিকেটরাজ দমনে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। রাজারহাট-নিউ টাউন এলাকার সাংসদ কাকলি ঘোষদস্তিদার ও বিধায়ক সব্যসাচী দত্তকে তিনি টেলিফোনে এই কথা জানিয়েছেন।
নিউ টাউনে ওই গোলমালের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গেলে সব্যসাচীবাবুর আপ্ত সহায়ক ও ওই নির্মাণকারী সংস্থার এক প্রতিনিধিও আক্রান্ত হন। এর পরে ঘটনাস্থলে সব্যসাচীবাবু যান। পৌঁছয় পুলিশও। ওই ঘটনায় দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদের খোঁজে তল্লাশি চলছে বলে বিধাননগর কমিশনারেটের পুলিশ-কর্তারা জানান।
পুলিশের একটি সূত্রের খবর, লস্করহাটির ওই নির্মাণ সংস্থায় অধিকাংশ ইমারতি দ্রব্য সরবরাহ করছিলেন স্থানীয় সরবরাহকারীরা। পাশাপাশি ঠিকাদারি সংস্থা একটি সিমেন্ট সংস্থাকে বরাত দেয়। ৬ ডিসেম্বর সেই সিমেন্ট সংস্থার মালভর্তি ট্রাক ঢুকলে হামলা হয়। তৃণমূলের স্থানীয় সূত্রে খবর, প্রথমে একটি গোষ্ঠী ওই ঠিকাদারি সংস্থায় গিয়ে ইমারতি দ্রব্য সরবরাহের দাবি জানায়। সে খবর পৌঁছয় অপর গোষ্ঠীর কাছে। তা নিয়ে দুই গোষ্ঠীর গোলমাল হয়। তার পরেই লস্করহাটিতে ওই ঠিকাদারি সংস্থার প্রতিনিধিদের মারধরের ঘটনাটি ঘটে।
বার বার এমন অশান্তির ঘটনা ঘটায় সব্যসাচীবাবুর সঙ্গে আলোচনা করে সিন্ডিকেটরাজ দমনে পদক্ষেপ করতে কাকলিদেবীকে এ দিন ফোনে নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। একই ভাবে সব্যসাচীবাবুকেও তিনি কাকলিদেবীর সঙ্গে যোগাযোগ করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। দলীয় সূত্রে খবর, মুখ্যমন্ত্রী উত্তর ২৪ পরগনার নেতৃত্বকে স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছেন যে, এমন ঘটনায় দলের কেউ যুক্ত হয়ে থাকলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নিউ টাউনে সে দিনের ঘটনার পরে হিডকো কর্তৃপক্ষ, পুলিশ-প্রশাসন ও স্থানীয় বিধায়ক এক বৈঠকে বসে সিন্ডিকেটরাজ বরদাস্ত না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। বৈঠকে স্থির হয়, কেউ শান্তিপূর্ণ ভাবে আবেদন করতে পারেন। কিন্তু জোরাজুরি করলে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে। তবে যাঁরা একেবারে নিম্নবিত্ত, তাঁদের কিছু কাজ দেওয়ার বিষয়টি সহানুভূতির সঙ্গে বিবেবচনা করা যেতে পারে। এর পর সিন্ডিকেটরাজ দমনে আবারও কড়া নির্দেশ এল খোদ দলনেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে।
এই প্রসঙ্গে বিধায়ক সব্যসাচী বাবু বলেন, “জমিহারারা সামর্থ্য অনুযায়ী কাজ করুক। কিন্তু সিন্ডিকেটের নামে গুন্ডারাজ বরদাস্ত করা হবে না। এই কাজে যুক্ত দলীয় কিংবা অন্য দলের কর্মী কাউকেই রেয়াত করা হবে না। পুলিশ ব্যবস্থা নেবে। গুন্ডারাজ দমনে সব ধরনের প্রতিরোধ করা হবে।”
সাংসদ কাকলিদেবীও বলেন, “সিন্ডিকেটের নামে দুষ্কৃতীমূলক কাজ বরদাস্ত করা হবে না। এমন নির্দেশ প্রথম থেকেই দলে ছিল। আমি অবশ্য ঘটনাটি পুরো জানি না, দিল্লিতে ছিলাম। ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” |