বন্দুকধারী রক্ষীদের কাউন্সেলিং-এ জোর দিচ্ছে কলকাতা পুলিশ
ব্যাঙ্ক, গয়নার দোকান এবং কিছু বেসরকারি সংস্থায় পাহারার দায়িত্বে থাকা বন্দুকধারী নিরাপত্তারক্ষীদের যাতে নিয়মিত ‘কাউন্সেলিং’ করানো হয়, এ বার সেটাই সুনিশ্চিত করতে চাইছে কলকাতা পুলিশ। ভবানীপুরে শুক্রবার ব্যাঙ্কের এক নিরাপত্তারক্ষীর গুলিতে জোড়া খুনের ঘটনায় উদ্বিগ্ন লালবাজারের কর্তারা এই ব্যাপারে আগামী সপ্তাহেই ব্যাঙ্ক ও কয়েকটি বেসরকারি নিরাপত্তা সংস্থার সঙ্গে বৈঠকে বসছেন।
পুলিশকর্তাদের বক্তব্য, নিরাপত্তাকর্মীদের বোঝাতে হবে যে, নেহাতই পেশার কারণে তাঁদের হাতে গুলিভর্তি বন্দুক দেওয়া হয়েছে, ব্যক্তিগত আক্রোশ মেটাতে তার অপপ্রয়োগ তাঁরা করতে পারেন না।
স্টেট ব্যাঙ্কের ভবানীপুর শাখার ক্যাশিয়ার মানব বসু ও নিরাপত্তারক্ষী রাধাকৃষ্ণ মণ্ডলকে শুক্রবার গুলি করে খুন করেন ব্যাঙ্কেরই ১৮ বছরের পুরনো নিরাপত্তারক্ষী, অবসরপ্রাপ্ত সেনানী সুনীল সরকার। খুনের পর অসম্ভব রকম শান্ত থাকলেও এখন সুনীলবাবু তাঁর কৃতকর্মের জন্য আফসোস করছেন বলে পুলিশ সূত্রে খবর। এক তদন্তকারী অফিসারের কথায়, “সুনীল রাতভর লকআপে কান্নাকাটি করেছেন। কয়েক বার বলেওছেন, ‘রাগের মাথায় এ কী ভুল করে ফেললাম। তিন-তিনটে পরিবার শেষ হয়ে গেল।’’
সুনীল সরকার
পুলিশের বক্তব্য, সহকর্মীরা, বিশেষত ওই দু’জন তাঁকে বছরের পর বছর উত্যক্ত করায় তিনি শেষমেশ ওই কাণ্ড ঘটিয়েছেন বলে সুনীল সরকার অভিযোগ করলেও এই ব্যাপারে তিনি কখনও কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ জানাননি। শনিবার আলিপুর আদালতে তোলা হলে বিচারক সুনীলকে ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।
ভবানীপুর-কাণ্ডের পর কলকাতার পুলিশ কমিশনার রঞ্জিৎকুমার পচনন্দা জানান, ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষকে নিরাপত্তাকর্মীদের প্রশিক্ষণের বিষয়ে বহু বার বলা হয়েছে। কিন্তু ত্রুটি যে রয়েই গিয়েছে শুক্রবারের ঘটনা তা দেখিয়ে দিল। কেবল নিরাপত্তারক্ষী নিয়োগই নয়, তাঁদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও কাউন্সেলিং-এর ব্যবস্থাও এ বার ব্যাঙ্ককে করতে হবে। এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সকলকে নিয়ে শীঘ্রই যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ দমন) বৈঠকে বসবেন বলে জানিয়েছেন পুলিশ কমিশনার। তাঁর কথায়, “বন্দুকধারী নিরাত্তারক্ষীদের প্রশিক্ষণ তো দূরের কথা, কোনও কোনও ক্ষেত্রে ব্যাঙ্ক-ম্যানেজারেরা তাঁদের দিয়ে চা-জলখাবার পরিবেশন, ফাইল আনানোর মতো কাজ করান। এ সব পুরোপুরি বন্ধ করতে হবে।”
শহরের ব্যাঙ্ক, গয়নার দোকান ও বেসরকারি সংস্থায় মোট ক’জন বন্দুকধারী রক্ষী রয়েছেন, তার একটি তালিকাও ভবানীপুরের ঘটনার পর তৈরি করতে উদ্যোগী হয়েছে কলকাতা পুলিশ।
যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ দমন) পল্লবকান্তি ঘোষ শনিবার বলেন, “বন্দুকধারী রক্ষী নিয়োগের সময় সংস্থাগুলি মূলত যা দেখে, তা হল, ওই ব্যক্তির বন্দুকের লাইলেন্স, তাঁর বন্দুক চালনায় প্রশিক্ষণ আছে কি না এবং তাঁর অতীত নির্ভরযোগ্য কি না। কিন্তু এক বার নিয়োগ হয়ে গেলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাঁদের আর প্রশিক্ষণ হয় না। আমরা নিয়মিত ব্যাঙ্ক ও বেসরকারি নিরাপত্তা সংস্থার সঙ্গে বৈঠক করি। বার বার তাঁদের এ ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে। কিন্তু সমস্যা মেটেনি।”
লালবাজারের আর এক কর্তার কথায়, সেনাদের বহিরাগত শত্রুর হাত থেকে দেশকে বাঁচানোর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। কিন্তু ব্যাঙ্ক বা গয়নার দোকানের পাহারায় থাকা এক জন বন্দুকধারী রক্ষীকে কাজ করতে হয় দেশেরই মানুষের সঙ্গে। তার জন্য দরকার আলাদা মানসিকতা, আলাদা প্রশিক্ষণ। ভবানীপুরের ব্যাঙ্কের রক্ষী সুনীল সরকার প্রায় ২০ বছর আগে সেনাবাহিনীতে ছিলেন। সেই প্রশিক্ষণের সঙ্গে ব্যাঙ্কে তাঁর কাজের কোনও সম্পর্কই ছিল না।”
শুক্রবার গুলি চালানোর ঠিক আগে সুনীল সরকারকে তাঁর ওই দুই সহকর্মী উত্যক্ত করেছিলেন কি না, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। তবে ঘটনার পর থেকেই সুনীলবাবু কিছু অসংলগ্ন কথা বলছেন বলে পুলিশের দাবি। দু’জনকে খুন করার পরেও তিনি ব্যাঙ্কে ডিউটি করতে চেয়েছিলেন। কেন? পুলিশের দাবি, এই প্রশ্নের জবাবে সুনীল বলেন, “ব্যাঙ্কের সুরক্ষা তো আমার দায়িত্ব। আমার পরিবর্ত আসার আগে কী করে অন্যত্র যাই?”
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.