|
|
|
|
|
আগুন নেভাতে কী কী লাগে,
তালিকা তৈরি নেই বাঁকুড়ায়
রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় • বাঁকুড়া |
|
বছর ঘুরেছে। এখনও দমকল বিভাগের ছাড়পত্র পেতে যে পরিকাঠামো গড়ার কথা, তার হিসেবটাই তৈরি করে উঠতে পারেননি বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
এক বছর আগে ৯ ডিসেম্বর কলকাতার ঢাকুরিয়ার আমরি হাসপাতালে মর্মান্তিক অগ্নিকাণ্ডে ৯৩ জন প্রাণ হারিয়েছিলেন। তার পরে রাজ্যের সব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও জেলা সদর হাসপাতালগুলিতে পরিদর্শন করে দমকল। তারা একাধিক সুপারিশও করে। বাঁকুড়া মেডিক্যালও তার ব্যতিক্রম নয়। আমরি-কাণ্ডের পরেই এই হাসপাতাল পরিদর্শনে এসেছিলেন বাঁকুড়া দমকল বিভাগের ওসি সুপ্রিয় মণ্ডল। বছর পেরিয়েও হাসপাতালের পরিকাঠামোর উন্নতি না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে তিনি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অবশ্য এর জন্য পূর্ত দফতরকেই দুষছে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যাচ্ছে, গত বছর ডিসেম্বরেই বাঁকুড়া মেডিক্যালে অগ্নিনির্বাপক পরিকাঠামো গড়ার সিদ্ধান্ত হয়। ঘটনা হল, গত এক বছরে প্রায় ২৫টি অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র কেনা ছাড়া আর কিছুই সে ভাবে হয়নি। তবে এত বড় এবং দক্ষিণবঙ্গের এত গুরুত্বপূর্ণ হাসপাতালের জন্য ওই ক’টি অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র আদৌ যথেষ্ট নয় বলে জানাচ্ছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষই। হাসপাতালের এক আধিকারিক জানান, ১৬টি ওয়ার্ডের মধ্যে গোটা ছয়েক ওয়ার্ডে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র নেই। বিষয়টি মেনে নেন হাসপাতাল সুপার পঞ্চানন কুণ্ডু বলেন, “এক বছর আগে আমরা হাসপাতালের নিজস্ব তহবিল থেকে কয়েকটি অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র কিনেছিলাম। সেগুলি অবশ্য যথেষ্ট নয়।”
আমরি-কাণ্ডের এক বছর পরেও হাসপাতালে অগ্নিনির্বাপক পরিকাঠামো গড়ে দমকল বিভাগের ছাড়পত্র পাওয়া গেল না কেন?
পঞ্চাননবাবুর বক্তব্য, দমকলের ছাড়পত্রের জন্য প্রাথমিক ভাবে একটি আবেদন করতে হয়। সেই আবেদনপত্রে হাসপাতালের গঠন সংক্রান্ত নানা তথ্য দিতে হয়, যেটি পূর্ত দফতরের করার কথা। সুপারের অভিযোগ, “আমরা ওই আবেদনপত্রটি পূর্ত দফতরের কাছে আগেই পাঠিয়ে দিয়েছি। ওরা আবেদনপত্রটি পূরণ করছে না।” তিনি জানান, আবেদনপত্রটি দমকল বিভাগে জমা দেওয়ার পর দমকল কর্তৃপক্ষ হাসপাতাল পরিদর্শনে এসে কী কী পরিকাঠামো গড়া দরকার তা জানাবে। তার পরেই সেই পরিকাঠামো গড়ার হিসেব বানিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ স্বাস্থ্য ভবনে পাঠাবেন। মোদ্দা কথায়, পরিকাঠামো গড়ার কাজ এখনও বিশ বাঁও জলে।
সুপারের নিজেরই কথায়, “পূর্ত দফতর আবেদনপত্রটি পূরণ না করায় পুরো প্রক্রিয়াটিই থমকে গিয়েছে।” বিষয়টি নিয়ে পূর্ত দফতরের কর্তারা অবশ্য মুখ খুলতে চাননি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দফতরের এক আধিকারিক বলেন, “আবেদনপত্রটিতে কিছু তথ্য চাওয়া হয়েছে, যা আমাদের কাছে নেই। সেই তথ্য অনুসন্ধান করে যত দ্রুত সম্ভব আবেদনপত্রটি পূরণ করে দেওয়ার চেষ্টা করছি।”
গত ডিসেম্বরে বাঁকুড়া দমকল বিভাগ মেডিক্যাল কলেজ পরিদর্শনে এসে ওয়ার্ডের ভিতরে হিটার ব্যবহার ও দাহ্য পদার্থ হাসপাতালের বাইরে রাখার নির্দেশ দেয়। পাশাপাশি হাসপাতাল ভবনের স্যুইচবোর্ডগুলির তার ঢাকা দেওয়ারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। সুপার বলেন, “ওয়ার্ডের মধ্যে হিটার ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছি। দাহ্য পদার্থও ডাঁই করে রাখা হয় না। স্যুইবোর্ড ও বৈদ্যুতিন তার ঢেকে ফেলা হয়েছে। বাঁকুড়া দমকল কেন্দ্রের ওসি-র ক্ষোভ, “অগ্নিনির্বাপক পরিকাঠামো গড়তে বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ সে ভাবে এখনও সক্রিয় নয়। অবিলম্বে তাঁদের সচেতন হওয়া দরকার।”
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, অগ্নিনির্বাপক পরিকাঠামো গড়ার জন্য বৃহস্পতিবার দমকল বিভাগ, পূর্ত দফতর ও স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকদের নিয়ে একটি কমিটি গড়া হয়েছে। শীঘ্রই তাঁরা রাজ্যের মেডিক্যাল কলেজগুলি পরিদর্শনে যাবেন। কিন্তু বাঁকুড়া মেডিক্যালে এসে তাঁরা কী দেখবেন? |
|
|
|
|
|