|
|
|
|
অস্ত্রোপচার নয়, মিলছে তারিখ, মেডিক্যালের জবাব কর্মী সঙ্কট |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
কান সারাতে গিয়ে রীতিমতো প্রাণ ওষ্ঠাগত কেশপুরের শেখ তোজাম্মেলের।
গত ৮ সেপ্টেম্বর কানে ব্যথা নিয়ে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে গিয়েছিলেন তিনি। চিকিৎসকেরা জানান, কানের পর্দা ফুটো। অস্ত্রোপচার করতে হবে। অস্ত্রোপচারের দিন ঠিক হয় ২২ সেপ্টেম্বর। সেদিন গেলে চিকিৎসকেরা দিন বদলে জানান, ২৫ সেপ্টেম্বর অস্ত্রোপচার হবে। দ্রুত যন্ত্রণা মুক্তির আশ্বাস পেয়ে বাড়ি ফেরেন শেখ তোজাম্মেল। তবে খুশির রেশ টেকেনি বেশি দিন। ২৫ সেপ্টেম্বর হাসপাতালে যেতেই জানানো হয় আর একটি তারিখ, ২০ নভেম্বর। সেদিন গিয়েও অস্ত্রোপচার হয় না। মেলে অন্য এক তারিখ- ২৭ নভেম্বর। ২৭ নভেম্বরও হাসপাতালে হাজিরা দেওয়ায় সার। অস্ত্রোপচার তো দূর অস্ৎ, মিলল নতুন তারিখ। জানানো হল, পরের বছর অর্থাৎ ২০১৩ সালের ২৪ জানুয়ারি অস্ত্রোপচার হবে। এ বার ধৈর্যের বাঁধ ভাঙে তাঁর। হাসপাতালের আশ্বাসে ভরসা না করে ধরাধরি শুরু করলেন রাজনৈতিক নেতাদের। নেতারা ফোন করলেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। চাপ সৃষ্টির পর অবশেষে বৃহস্পতিবার হল সেই অস্ত্রোপচার।
কিন্তু এমন দশা কেন? নাক-কান-গলা বিভাগের প্রধান দেবাশিস বর্মন বলেন, “অপারেশন থিয়েটার কম থাকায় এই সমস্যা হয়েছে।” কিন্তু শুধুই কী অপারেশন থিয়েটারের অপ্রতুলতা নাকি চিকিৎসকদেরও গাফিলতি রয়েছে? রোগীদের অভিযোগ, বেশিরভাগ চিকিৎসকই নিয়মিত আসেন না। সপ্তাহে বড় জোর ২-৩ দিন হাসপাতালে দেখা মেলে তাঁদের। চিকিৎসকদের অবশ্য দাবি, তাঁদের কোনও গাফিলতি নেই। অপারেশন থিয়েটার না থাকলে চিকিৎসক থেকেই বা কী লাভ। অস্ত্রোপচার তো আর করা যাবে না।
প্রশ্ন হল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল যেখানে দিনে অন্তত হাজার খানেক রোগীর ভিড় সেখানে প্রয়োজনীয় সংখ্যাক অপারেশন থিয়েটার নেই কেন? মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ শুদ্ধদন বটব্যালের জবাব, “নতুন ৮টি অপারেশন থিয়েটার করা হয়েছে। কিন্তু কর্মীর অভাবে এখনও তা চালু করা যায়নি। আশা করছি, কিছু দিনের মধ্যেই চালু করা যাবে।”
প্রসূতি বিভাগের জন্য আলাদা তিনটি অপারেশন থিয়েটার রয়েছে এই হাসপাতালে। আর বাকি সব বিভাগের জন্য রয়েছে ৪টি অপারেশন থিয়েটার। তার মধ্যে একটি সব সময় ইমার্জেন্সির জন্য বরাদ্দ। ফলে বাকি তিনটি অপারেশন থিয়েটার ভরসা নাক-কান-গলা, অস্থি, শল্য, চক্ষুচারটি বিভাগের জন্য। ফলে সপ্তাহে এক-একটি বিভাগের জন্য গড়ে ২-৩ দিন অপারেশন থিয়েটার বরাদ্দ থাকে। আর তার মধ্যে কাজ চালাতে গিয়ে শুধু তারিখ বদলে যায়, অস্ত্রোপচার আর হয় না। দেবাশিসবাবুর কথায়, “এখন যা রোগীর চাপ তাতে যিনিই আসুন সবাইকে ২০১৩ সালেই দিন দিতে হবে। এছাড়া উপায় নেই।” একই কথা, শল্য বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সুকুমার মাইতিরও। তিনি বলেন, “মেডিক্যাল কলেজ হওয়ায় রোগীর চাপ বেড়েছে অনেক। কিন্তু অপারেশন থিয়েটারের পরিকাঠামো এখনও সেই জেলা হাসপাতালের মতোই। ফলে অপারেশন থিয়েটার খালি না পেয়ে সমস্যায় পড়ছি। অস্ত্রোপচারের জন্য তারিখ দেওয়া ছাড়া উপায় থাকছে না।” এমন ঘটনায় ক্ষোভ দেখা দিচ্ছে রোগীদের মধ্যে। ক্ষোভ প্রশমনের জন্য এ বার হাসপাতালে শিবির করারও পরিকল্পনা নিয়েছেন চিকিৎসকেরা। মাসে অন্তত এক দিন তিনটি অপারেশন থিয়েটারই একটি বিভাগ নেবে। যাতে একটানা ৯-১০ জনের অস্ত্রোপচার করা যায়। শুক্রবার সেই ভাবেই নাক-কান-গলা বিভাগ শিবির করে ৯ জনের অস্ত্রোপচার করেছেন।
সমস্যা মেটাতে নতুন একটি ভবনও তৈরি করা হয়েছে। সেখানে চক্ষু ও নাক-কান-গলা বিভাগের জন্য ৪টি করে ৮টি অপারেশন থিয়েটার তৈরি হয়েছে। পাশেই রয়েছে ওয়ার্ড, যাতে অস্ত্রোপচারের পরে রোগীরা সেখানে থাকতে পারেন। কিন্তু এখনও সেই ভবন চালু হয়নি। কেন? কর্তৃপক্ষের জবাব, কর্মী সঙ্কট। তবে কর্মী সঙ্কট মেটানোরও আশ্বাস দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। কিন্তু যতদিন না কর্মী সঙ্কট মিটছে ততদিন কী তাহলে তারিখের পর তারিখ নিয়েই ফিরতে হবে রোগীদের? প্রশ্নের উত্তর নেই কর্তৃপক্ষের কাছে। ‘চেষ্টা করছি’ বলেই দায় সারছেন সকলে। |
|
|
|
|
|