|
|
|
|
১০টা বাজলেই দোকান বন্ধ, মেলে না ওষুধ |
সৌমেন দত্ত • কাটোয়া |
বুধবার রাত। ভাগীরথী পেরিয়ে এক প্রসূতিকে কাটোয়া শহরের বেসরকারি নার্সিংহোমে ভর্তি করিয়েছিলেন নদিয়ার কালিগঞ্জের বাসিন্দা সনাতন ভট্টাচার্য। জরুরি ওষুধ কিনে আনার জন্য বলেছিলেন চিকিৎসক। কিন্তু গোটা শহর ঘুরেও একটাও ওষুধের দোকান খোলা পাননি সনাতন।
এমন ঘটনা কাটোয়া শহরের নিত্যদিনের। রাতে সামান্য পেট ব্যাথার ওষুধও মেলা ভার। কার্যত রাত ১০টার পরই বন্ধ হয়ে যায় শহরের সব ওষুধের দোকান। বাসস্ট্যান্ড, স্টেডিয়াম সংলগ্ন এলাকা বা বর্ধমান-কাটোয়া রোড এলাকার বাসিন্দাদের সমস্যা আরও তীব্র। ওই এলাকার বাসিন্দা, রেলকর্মী রজতাভ রায়ের কথায়, “কয়েক সপ্তাহ আগে আমার এক আত্মীয় বুকে ব্যাথা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। সারা রাত গোটা শহর ঘুরেও কোনও ওষুধ পাওয়া যায়নি। পরে পরিচিত এক জন ওষুধ ব্যবসায়ীকে ঘুম থেকে তুলে দোকান খুলিয়ে ওষুধ নেওয়া হয়।”
কিন্তু যাদের পরিচিত কেউ নেই, তাঁদের অবস্থা তাহলে কী? তাঁদের হেনস্থার কথা মেনে নিয়েছেন চিকিৎসক মহল। কাটোয়া শহরের বিশিষ্ট চিকিৎসক বিকাশ মুখোপাধ্যায় বলেন, “রাতে আমাদের খুব ঝুঁকি নিয়েই পরিষেবা দিতে হয়।” চিকিৎসকদের একাংশের মতে, রাতে শহরের হাসপাতাল বা নার্সিংহোমগুলিতে কোনও রোগী ভর্তি হলে কার্যত তাদের ‘ঠেকা’ দিয়ে রাখতে বাধ্য হন তাঁরা। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক চিকিৎসকের কথায়, “বাড়িতে একটা ওষুধ খেলেই যেখানে রোগীদের সুস্থ হয়ে ওঠার কথা, সেখানে বিকল্প ওষুধের আশায় রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হচ্ছে।”
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কাটোয়া শহরের পরিধি যেমন বেড়েছে, তেমনই বেড়েছে শহরের উপর নির্ভরশীল মানুষের সংখ্যা। শহরের ১৯টি ওয়ার্ডে ৮০ হাজার বাসিন্দা ছাড়াও মহকুমার ৫টি ব্লক, পাশের নদিয়া, মুর্শিদাবাদ ও বীরভূমের একাংশের মানুষজন স্বাস্থ্য পরিষেবার জন্য এই শহরের উপর নির্ভরশীল। তাই শহরের ভিতর ২৪ ঘণ্টাই ওষুধের দোকান খোলা রাখার দাবি জানিয়েছে বিভিন্ন সংস্থা। এমনকী চিকিৎসকেরাও মহকুমা প্রশাসনের কাছে আগেও রাতে ওষুধের দোকান খুলে রাখার জন্য দাবি জানিয়েছেন। কিন্তু প্রশাসন উদ্যোগী হয়নি বলে অভিযোগ।
ওষুধ ব্যবসায়ীদের সংগঠন, ‘বেঙ্গল কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট অ্যাসোসিয়েশন’ (বিসিডিএ) সূত্রে জানা গিয়েছে, শহরে খুচরো ওষুধের দোকান রয়েছে ৭৮টি। কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালের চিকিৎসক প্রণব ঘোষ বলেন, “রোগীর আত্মীয়দের কথা ভেবে মহকুমাশাসককে উদ্যোগী হতে বলেছিলাম।” কাটোয়ার কংগ্রেস বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “কয়েক বছর আগে বিসিডিএ-র কাছে প্রস্তাব দিয়েছিলাম ‘রোটেশন’ পদ্ধতিতে অন্তত একটি করে দোকান সারারাত খুলে রাখার জন্য। আবার বিসিডিএ-র সঙ্গে কথা বলব।”
বিসিডিএ-র কাটোয়া শাখার সম্পাদক শমীন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “প্রশাসন প্রস্তাব দিলে আমরা এই নিয়ে সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করব। একই সঙ্গে প্রশাসনকে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।” |
|
|
|
|
|