|
|
|
|
আমরি-কাণ্ডের বছর পার |
পূর্বে শিকেয় পরিদর্শন, অগ্নিনির্বাপণ
বিধি না-মেনেই চলছে নার্সিংহোম |
আনন্দ মণ্ডল • তমলুক |
এক বছর আগে কলকাতার ঢাকুরিয়ায় আমরি হাসপাতালের স্মৃতি মুছে যায়নি মন থেকে। ওই অগ্নিকাণ্ডের পর নড়ে বসেছিল স্বাস্থ্য দফতর তথা রাজ্য সরকার। কলকাতার পাশাপাশি জেলার সরকারি হাসপাতাল ও বেসরকারি নার্সিংহোমগুলির অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থার উপর নজরদারি চালাতে উদ্যোগী হয়েছিল জেলা প্রশাসন। কিন্তু বছর পেরোলেও সেই তিমিরেই পূর্ব মেদিনীপুরের হাসপাতাল ও নার্সিংহোমগুলির অগ্নি-সুরক্ষা।
নিয়ম অনুযায়ী, অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা সংক্রান্ত দমকলের ‘নো অবজেকশন’ ছাড়া হাসপাতাল-নার্সিংহোমের লাইসেন্স নবীকরণ করার কথা নয়। কিন্তু জেলার অধিকাংশ নার্সিংহোম দমকলের ছাড়পত্র নেয়নি বলে অভিযোগ। পূর্ব মেদিনীপুর ডিভিশনাল ফায়ার অফিসার তরুণ সিংহ বলেন, “অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা গড়ার জন্য এক বছর সময় দিয়ে শর্ত সাপেক্ষে অস্থায়ী ভাবে দমকলের ছাড়পত্র দেওয়া হয়। কিন্তু লাইসেন্স নবীকরণের জন্য বা চূড়ান্ত ছাড়পত্রের জন্য অধিকাংশ নার্সিংহোম প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করেনি।” জেলা স্বাস্থ্য দফতরের হিসেব অনুযায়ী, পূর্ব মেদিনীপুরে নার্সিংহোমের সংখ্যা ১৪৪টি। সমস্যার কথা স্বীকার করেছেন পূর্ব মেদিনীপুর নার্সিংহোম ওনার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের জেলা সম্পাদক কানাই দাস। কানাইবাবু বলেন, “জেলার কয়েকটি নার্সিংহোম পরিকাঠামো তৈরি করে দমকলের চূড়ান্ত ছাড়পত্র পেয়েছে। তবে অধিকাংশই পায়নি। তবে নার্সিংহোমগুলির অধিকাংশ অস্থায়ী ছাড়পত্র (প্রভিশনাল সার্টিফিকেট) পেয়েছে।” তিনি আরও বলেন, “পরিকাঠামোর জন্য প্রয়োজন প্রায় দু থেকে আড়াই লক্ষ টাকা। অধিকাংশ নার্সিংহোমের আর্থিক সামর্থ্য নেই। তা সত্ত্বেও নিরাপত্তার জন্য অগ্নি নির্বাপণের ব্যবস্থা গড়ে তুলতে জোর দিয়েছি।”
আমরি কাণ্ডের পর দিনই পূর্ব মেদিনীপুরে সভাধিপতি, সহ-সভাধিপতি, অতিরিক্ত জেলাশাসক, মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ও দমকল আধিকারিককে নিয়ে তৈরি হয়েছিল পাঁচ সদস্যের পরিদর্শন কমিটি। কমিটির অন্যতম সদস্য তথা জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি মামুদ হোসেন বলেন, “কমিটি গড়ার পর প্রথমে তমলুক, কাঁথি, হলদিয়া হাসপাতাল ছাড়াও জেলার কয়েকটি নার্সিংহোমে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা খতিয়ে দেখা হয়েছিল। দেখা গিয়েছিল অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ব্যবস্থা নেই। এরপর জেলায় দমকল দফতরের ডিভিশনাল অফিস চালু হয়েছে। তাতে অনুমোদন পেতে সুবিধা হচ্ছে।”
কিন্তু হাল ফিরেছে কই?
জেলা দমকল দফতরের এক পদস্থ আধিকারিক জানান, নার্সিংহোমগুলিতে অগ্নিনির্বাপণের ন্যূনতম ব্যবস্থা হিসেবে কম পক্ষে দুটি সিঁড়ি, যথেষ্টসংখ্যক ফায়ার এক্সটিংগুইশার, ছাদে জলের ব্যবস্থা, নীচ থেকে উপরে জল তোলার ব্যবস্থা বাধ্যতামূলক। কিন্তু অধিকাংশ নার্সিংহোমই তা মানছে না।
জেলার নার্সিংহোমগুলির পরিকাঠামো থেকে পরিষেবা নজরদারির দায়িত্ব যে স্বাস্থ্য দফতরের হাতে, দায় এড়াচ্ছে তারাও। পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক কালীদাস দত্তের সাফ কথা, “নার্সিংহোমে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা রয়েছে কি না তা আমার দেখার বিষয় নয়। এ নিয়ে আমাকে কিছু জিজ্ঞাসা করবেন না।”
ভয়াবহ আমরি-কাণ্ডের এক বছর পরও হুঁশ ফিরল না প্রশাসনের। |
|
|
|
|
|