ঘুরল বছর
আমরি দেখেও শেখেনি মেডিক্যাল
জায়গায় জায়গায় ঝুলছে বিদ্যুতের তার। তারের সংযোগস্থলের বাক্সও খোলা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই। শর্ট সার্কিট থেকে আগুন লাগার মতো ঘটনা ঘটে বছরের নানা সময়ে। তবু হুঁশ ফেরেনি বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের।
গত বছর ৯ ডিসেম্বর কলকাতায় আমরি হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ডের পরে জেলার হাসপাতাল, নার্সিংহোমগুলির অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা নিয়ে নড়েচড়ে বসেছিল জেলা স্বাস্থ্য দফতর ও দমকল। হাসপাতাল ও বিভিন্ন নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছিল। কিন্তু মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের তরফে দমকলের কাছে অগ্নি নির্বাপণ সংক্রান্ত লাইসেন্স বা ‘নো-অবজেকশন সার্টিফিকেট’ চেয়ে কোনও দিন আবেদনই করা হয়নি বলে অভিযোগ দমকলের বর্ধমানের ওসি তপনকুমার মুখোপাধ্যায়ের। যদিও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তা মানতে নারাজ।
বাঁ দিকে, শিশু বিভাগের সামনে ও ডান দিকে, জরুরি বিভাগে উদিত সিংহের তোলা ছবি।
মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে দেখা গিয়েছে, শিশু বিভাগ, জরুরি বিভাগ-সহ প্রায় সর্বত্রই বিপজ্জনক ভাবে ঝুলছে তার। তারের সংযোগস্থলের বাক্সও বেশির ভাগ জায়গায় খোলা। যে কোনও সময়ে শর্ট সার্কিটের মতো ঘটনা ঘটতে পারে সেখানে। ২০১১-এর ১৭ জুলাই শিশু ওয়ার্ডে একটি স্যুইচ বোর্ডে আগুন লেগে ধোঁয়া বেরোয়। শিশুদের নিয়ে দলে দলে ওয়ার্ড ছাড়েন মায়েরা। এর পরে দমকলের তরফে অগ্নি নির্বাপণের জন্য মোট সাত দফা ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তা মানেননি বলে পরে অভিযোগ তুলেছিল দমকল। দমকলের ওসি তপনবাবু শুক্রবার বলেন, “শুনতে অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল আজও কোনও অগ্নি নির্বাপণ সংক্রান্ত লাইসেন্স বা আমাদের ‘নো-অবজেকশন’ চেয়ে আবেদন করেনি। বছরে দু’তিন বার হাসপাতালের নানা ওয়ার্ডে আগুন লাগে। কখনও শর্ট সার্কিট, কখনও খোলা বিদ্যুতের বাক্সে চার্জে বসানো মোবাইল থেকে আগুন লেগেছে। বারবার পুরনো তার পাল্টাতে ও নতুন বিদ্যুতের বাক্স বসাতে বলা হয়েছে। কিন্তু ওরা কোনও পদক্ষেপ করেছে কি না, আমাদের জানায়নি।”
শুধু মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল নয়, বর্ধমানের বহু নার্সিংহোমেও অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা এখনও সন্তোষজনক নয় বলে জানিয়েছেন দমকলের ওসি। তাঁর কথায়, “অনেক নার্সিংহোম রয়েছে যেখানে আগুন লাগলে রোগী বা কর্মীরা পালাতেও পারবেন না। অনেক নার্সিংহোমে খোলা ইথারের জারের কাছে ধূমপান করতে দেখে অনেককে ধমকও দিয়েছি।” তবে তাঁর মতে, আগের তুলনায় শহরের নার্সিংহোমগুলি অনেকটা সচেতন হয়েছে। আগুন লাগলে রোগীদের সরানোর জন্য গলিপথ তৈরি, প্রতি বছর অগ্নি নির্বাপণের লাইসেন্স নবীকরণের আবেদন জানানো-সহ নানা পদক্ষেপ করেছেন বেশ কিছু নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ।
বর্ধমান মেডিক্যালের অগ্নিসুরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল ফেডারেশন অফ গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশন’ও। সংগঠনের এই হাসপাতালের ইউনিয়নের সম্পাদক সমীর চক্রবর্তীর দাবি, বারবার জানানো সত্ত্বেও পুরনো তার বা খোলা বিদ্যুতের বাক্সগুলি পাল্টাননি কর্তৃপক্ষ। সেই অবস্থাতেই এত বড় হাসপাতালের বিদ্যুৎ সরবরাহ হচ্ছে। ফলে যে কোনও সময়ে যে কোনও জায়গায় আগুন লাগতে পারে বলে তাঁর আশঙ্কা। তিনি জানান, হাসপাতালের নিজস্ব একটি বিদ্যুৎ বণ্টন ব্যবস্থা তৈরি এবং এখানকার কর্মীদের অগ্নি নির্বাপণ সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ দেওয়ার কথা ছিল। সে সব আজও হয়নি বলে সমীরবাবুর অভিযোগ।
হাসপাতালের কর্মীদের অবশ্য দাবি, আগের তুলনায় অগ্নিকাণ্ডের সম্ভাবনা অনেকটা কমেছে। কারণ, আগে হাসপাতালের বাতানুকূল যন্ত্র ঘিরে শ্যাওলা জমে থাকত, গাছপালাও গজিয়ে উঠত। এখন সে সব নেই। আউটডোর ভবনের নীচে আগে বিদ্যুতের প্রচুর খোলা তার ছিল। সে সব পাল্টানো হয়েছে বলে তাঁদের দাবি।
বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুপার অসিতবরণ সামন্তের অবশ্য দাবি, তাঁর যত দূর মনে পড়ে, দমকলের কাছ থেকে ‘নো-অবজেকশন’ শংসাপত্র নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, “পূর্ত দফতরের বিদ্যুৎ বিভাগ ও দমকল একটি তিন কোটি টাকার প্রকল্প তৈরি করেছে। তা স্বাস্থ্য দফতরের অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন মিললে হাসপাতালের বিদ্যুৎ ব্যবস্থার অনেক কিছুই বদলানো সম্ভব হবে।”
যত দিন তা না হচ্ছে, আগুনের আতঙ্ক নিয়ে রোগ সারাতে যাওয়াই ভবিতব্য বর্ধমান মেডিক্যালে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.