|
|
|
|
আগুন নেভানোর যন্ত্র হাতে গোনা, চালানোর প্রশিক্ষণও নেই |
চিকিৎসাই বেহাল, অগ্নি নির্বাপণ নিয়ে ভাববে কে |
প্রকাশ পাল • শ্রীরামপুর |
হাতে গোনা গোটা পাঁচেক অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র আছে বটে। কিন্তু আগুন লাগলে প্রয়োজনে সেগুলি চালাবে কে, সেই প্রশ্ন শুনে ঢোক গেলেন পৌনে দু’শো বছরের প্রাচীন হাসপাতালের কর্তা।
আমরি হাসপাতালে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পরে নড়েচড়ে বসেছিল প্রশাসন। অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা ঢেলে সাজার প্রতিশ্রুতি মিলেছিল। কিন্তু বছর ঘুরে যাওয়ার পরেও শ্রীরামপুর ওয়ালশ হাসপাতালে আগুন নেভানোর ব্যবস্থা কতটা পাকাপোক্ত হল, তা নিয়ে প্রশ্ন করলে সকলেই বিব্রত। আড়ালে অবশ্য অনেকেই জানালেন, অবস্থা যা ছিল তাই। কাজের কাজ হয়নি কিছুই। অনেকে আবার বলছেন, চিকিৎসা পরিষেবাই বেহাল। এর মধ্যে আবার আগুন নেভানোর কথা ভাববে কে!
মহকুমা শহর শ্রীরামপুরের এই হাসপাতালটিতে চার তল বিশিষ্ট অন্তর্বিভাগ রয়েছে। পাশের ভবনের একতলায় ডায়েরিয়া ওয়ার্ড। দোতলায় সুপারিন্টেন্ডেন্টের অফিস। পাশের তিন তলা ভবনে বহির্বিভাগ-সহ নানা বিভাগ রয়েছে। হাসপাতালে প্রবেশের মুখে পুরনো একতলা ভবনে এক্স-রে, আল্ট্রাসোনোগ্রাফি-সহ কয়েকটি বিভাগ রয়েছে। অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র চোখে পড়বে শুধু অন্তর্বিভাগে। ওই যন্ত্র রয়েছে অপারেশন থিয়েটারেও। কিন্তু অন্য ভবনগুলিতে তা নেই। অথচ, হাসপাতালে প্রবেশের মুখে একতলা ভবনটি বেশ জীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। দ্বিতল ভবনটিও বেশ পুরনো। এই সব জায়গায় যদি কোনও কারণে আগুন লাগে, তা হলে কে নেভানোর কাজ শুরু করবে, সেই প্রশ্নের উত্তর নেই। তবে, আগে হাসপাতালে দু’একটি বিভাগের মধ্যেই চা-সহ অন্যান্য খাবার তৈরি করা হত। এখন আর তা হয় না।
দমকল সূত্রের খবর, আগুনোর মোকাবিলা করতে যে পরিকাঠামো থাকা উচিত, ওই হাসপাতালে তার কিছুই নেই। জলের রিজার্ভার এবং পাম্প থাকা উচিত। পাইপলাইনের বন্দোবস্ত থাকাও দরকার। কিন্তু এ সবের ব্যবস্থা ওয়ালশ হাসপাতালে নেই। সুপারিন্টেন্ডেন্ট বিবেকানন্দ সরকার বলেন, “আগুন মোকাবিলা নিয়ে পুজোর আগে একটা বৈঠক করেছি আমরা। আবারও করব।” তিনি বলেন, “পাঁচটা ফায়ার এক্সটিংগুইশার (অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র) আছে আমাদের।” এ কথা শুনে দমকলের এক অফিসারের প্রতিক্রিয়া, “অত বড় একটা হাসপাতালে মাত্র পাঁচটা এক্সটিংগুইশার! একটা দোকানেই তো পাঁচটা থাকে। আমার তো মনে হয়, ওয়ালশে ২৫টা এক্সটিংগুইশারও পর্যাপ্ত নয়।” ওই অফিসারের বক্তব্য, হাসপাতালের প্রতিটা তলে, প্রতিটা বিভাগে গড়ে অন্তত ২টো করে এক্সটিংগুইশার থাকা উচিত।
কিন্তু যন্ত্র থাকলেই তো হবে না, প্রয়োজনে সেগুলি ব্যবহার করবে কে? দমকল বলছে, সামান্য প্রশিক্ষণ থাকলেই ওই যন্ত্র চালানো যায়। অভিজ্ঞতা বলছে, সব পক্ষের সদিচ্ছা না থাকায় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা হয় না।
হাসপাতাল না করলেও দমকল কেন নিজেরাই উদ্যোগী হয় না? দফতরের এক অফিসারের কথায়, “আমাদের দফতরের পরিকাঠামোও বেহাল। কর্মী নেই। অফিসার নেই। এই পরিস্থিতিতে কতটা করা সম্ভব?”
গত বছর আমরি কাণ্ডের পরে যে ভাবে উদ্যোগী হয় প্রশাসন, তাতে অনেকে আশা করেছিলেন পরিকাঠামোর হতশ্রী চেহারাটা বদলাবে। মহকুমাশাসকের উপস্থিতিতে দমকলের অফিসার এবং কর্মীরা হাতেকলমে আগুন নেভানোর প্রশিক্ষণ দিতে এসেছিলেন হাসপাতাল কর্মীদের। তবে, সেখানেও বেঁধেছিল বিপত্তি। অগ্নি নির্বাপক যন্ত্রের অংশ ছিটকে রক্তাক্ত হন দমকল কর্মী। ওই দিনের পরে আর প্রশিক্ষণও হয়নি। |
|
|
|
|
|