|
|
|
|
|
‘আমরি’র ঘটনা মাথায় রেখেও
থেকে গেল আগুনের ঝুঁকি সীমান্ত মৈত্র • বনগাঁ |
|
মাঝখানে ব্যবধান একটা বছরের। ২০১১ সালের ৯ ডিসেম্বর কলকাতার ঢাকুরিয়ায় আমরি হাসপাতালে ঘটেছিল ভয়ঙ্কর অগ্নিকাণ্ড। মারা গিয়েছিলেন ৯৩ জন। দুর্ঘটনার পর প্রশ্ন উঠেছিল হাসপাতালের সুরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে। অত্যাধুনিক ওই হাসপাতালে এমন দুর্ঘটনায় জেলার হাসপাতালগুলির সুরক্ষা ব্যবস্থা কেমন প্রশ্ন ওঠে তা নিয়েও। জেলা হাসপাতাল, মহকুমা হাসপাতালগুলিতে নজরদারিতে চোখে পড়েছিল অগ্নি-সুরক্ষা নিয়ে বেশ কিছু অসঙ্গতি। আমরি কাণ্ডের এক বছর পরেও জেলা ও মহকুমা হাসপাতালগুলির সেই অবস্থা খুব একটা বদলায়নি। কোথাও অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র থাকলেও সেগুলি চালানোর মতো উপযুক্ত কর্মী নেই। কোথাও প্রয়োজনের তুলনায় অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র একেবারেই কম। কোথাও আবার যন্ত্র থাকলেও তা বেশ পুরনো। |
বনগাঁ মহকুমা হাসপাতাল। মহিলা ওয়ার্ডে নেই একটিও অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র। ছবি: পার্থসারথি নন্দী। |
আমরি কাণ্ডের এক বছর পার হওয়ার প্রসঙ্গেই উত্তর ২৪ পরগনরা বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে অগ্নি নির্বাপণ সংক্রান্ত সুরক্ষা ব্যবস্থা দেখতে গিয়েছিলেন এই প্রতিবেদক। মহকুমার গুরুত্বপূর্ণ এই হাসপাতালে শয্যা সংখ্যা বর্তমানে ২৫০। দূর-দূরান্ত থেকে বহু মানুষ এখানে আসেন। শয্যাসংখ্যার তুলনায় রোগী ভর্তির সংখ্যা ও বেশি। ফলে স্থান সঙ্কুলান নিয়ে সমস্যা হয়। পরিস্থিতি এমন যে, রোগীদের মেঝেয় রেখে চিকিৎসা ব্যবস্থা করতে হয়। বিশেষ করে মহিলা ও পুরুষ মেডিসিন বিভাগের অবস্থা ভয়াবহ। ‘ভিজিটিং আওয়ার’-এ অবস্থা চরমে পৌছয়। সে সময় রোগীর আত্মীয়েরা ওয়ার্ডে ঢুকলে তাঁদের অপেক্ষা করার জায়গাও থাকে না। ওই সময়ে কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে কী অবস্থা হতে পারে তা ভেবেই চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে আসা রোগী ও তাঁর বাড়ির লোকজন আতঙ্কে থাকেন। বৃহস্পতিবার হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেল পুরুষ বিভাগ, মেডিসিন স্টোর রুম, রেকর্ড রুম কোথাও কোনও অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র নেই। মেডিসিন স্টোরে এক কর্মী বসে সিগারেট খাচ্ছেন, এমন দৃশ্যও চোখে পড়ল।
যদিও জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের বক্তব্যে ফুটে উঠল পুরোপুরি ভিন্ন ছবি। মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক রাসবিহারী দত্ত বললেন, “এই মুহূর্তে মহকুমা বা স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নতুন করে কোনও আগুন নেভানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে না। আগেই সমস্ত ব্যবস্থা হয়েছে।” গোটা হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেল আগুন নেভানোর জন্য রয়েছে মাত্র কয়েকটি অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র। অথচ এর আগে আগে বেশ কয়েকবার অপারেশন থিয়েটারে আগুন লেগেছিল। যে জন্য বেশ কিছুদিন তা বন্ধও রাখা হয়। কয়েক মাস আগে একনি রাতে শর্ট সার্কিট থেকে আগুন লাগে। স্থানীয় মানুষই আগুন নেভানোর ব্যবস্থা করেন। ওই ঘটনায় সেদিন রাতে ঘটনাস্থলে উপস্থিত বনগাঁ শহর কংগ্রেস সভাপতি কৃষ্ণপদ চন্দ বলেন, “ওই রাতে সাতটি অগ্নি নির্বাপক যন্ত্রের একটিতে গ্যাস ছিল। তা দিয়ে কোনওরকমে আগুন নেভানো হয়।” তাঁর অভিযোগ, আমরি-কাণ্ডের পরেও এই হাসপাতালে আগুন নেভানোর ব্যবস্থা করা হয়নি। অথচ এখানেই বেশ কয়েকবার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।”
২০১০-এ একদিন রাতে শিশু বিভাগে এবং ট্রান্সফর্মারে আগুন লেগে যায়। অক্সিজেন মাস্ক লাগানো অবস্থায়, স্যালাইনের বোতল হাতে রোগীরা বাইরে বেরিয়ে আসেন। বনগাঁর তৎকালীন বিধায়ক গোপাল শেঠ হাসপাতালে গিয়ে ট্রান্সফর্মারের লাইন কেটে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। গোপালবাবু বলেন, “ওই সময় জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছে আগুন নেভানোর উপযুক্ত পরিকাঠামো তৈরির দাবি জানিয়েছিলাম।” হাসপাতালের সুপার গয়ারাম নস্কর বলেন, “হাসপাতালে তিনশো শয্যার অনুমোদন রয়েছে। কিন্তু তা চালু করার জন্য উপযুক্ত পরিকাঠামোই নেই।” তিনি জানান, প্রতিটি ওয়ার্ডের সামনে দু’টি অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র বসানো হয়েছে। পাশাপাশি জলের ট্যাঙ্ক থেকে পাইপ লাইনের মাধ্যমে জল এনে আগুন নেভানোর জন্য দরকার উপযুক্ত সরঞ্জাম।” স্থানীয় বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস বলেন, “স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রীর কাছে হাসপাতালে উন্নত অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা চালু করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।” |
হাবরা স্টেট জেনারেল হাসপাতাল। মহিলা ওয়ার্ডের বাইরে একটি মাত্র অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র। ছবি: শান্তনু হালদার। |
একই ছবি দেখা গেল অশোকনগর স্টেট জেনারল হাসপাতালেও। বেশ কয়েকবছর আগে হাসপাতালের শয্যায় বসে ধূমপান করতে গিয়ে আগুনে পুড়ে মারা যান এক রোগী। আগুন নেভানোর উন্নত ব্যবস্থা না থাকায় তা দ্রুত নেভানো সম্ভব হয়নি বলে অভিযোগ। ওই ঘটনার পরেও হাসপাতালের আগুন নেভানোর ব্যবস্থার উন্নতি হয়নি। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, আগুন লাগলে হাবরা থেকে দমকল যেতে অনেক সময় লাগে। ততক্ষণে যা ক্ষতি হওয়ার হয়ে যায়। হাসপাতালে মাত্র কয়েকটি অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র রয়েছে। যদিও সেগুলি বেশ পুরনো। তবে সম্প্রতি সেগুলি ঠিক করা হয়েছে বলে দাবি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। সুপার ময়ূখ গোস্বামী বলেন, “আরও কিছু যন্ত্র প্রয়োজন। কী ভাবে আগুন নেভানোর ব্যবস্থা উন্নত করা যায় তার একটি পরিকল্পনা চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে পূর্ত দফতরে।”
তবে খানিক উন্নতি হয়েছে হাবরা স্টেট জেনারেল হাসপাতালের অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থার। মাস ছয়েক আগেও সেখানে কোনও অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র ছিল না। এখন গোটা হাসপাতালে সাতটি যন্ত্র রয়েছে। হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত সুপার সাত্যকি হালদার বলেন, “প্রতিটি ওর্য়াডেই অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র রয়েছে। সেগুলি ব্যবহারের প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছে কর্মীদের।” |
(চলবে) |
|
|
|
|
|