|
|
|
|
|
ফিরে দেখা |
চার্জশিটের ন’মাস, এল না ফরেন্সিক রিপোর্ট চিরন্তন রায়চৌধুরী • কলকাতা |
|
ঢাকুরিয়ার আমরি হাসপাতালে মর্মান্তিক অগ্নিকাণ্ডে ৯৩ জনের মৃত্যুর পরে এক বছর কাটল। ৯ ডিসেম্বর
ওই দুর্ঘটনার বর্ষপূর্তি। কোথায় দাঁড়িয়ে রয়েছে হাসপাতালগুলির সুরক্ষা? আমরি-তদন্তেরই
বা কী হাল? সব নিয়ে চলছে আনন্দবাজার পত্রিকার ‘ফিরে দেখা’। |
আদালতে চার্জশিট দাখিল হয়েছে ৯ মাস আগে। কিন্তু এখনও তদন্ত পুরোপুরি শেষ করতে পারল না পুলিশ। তদন্তকারীরা বলছেন, আমরির পুড়ে যাওয়া ভবন থেকে বাজেয়াপ্ত কম্পিউটার, হার্ড ডিস্ক আর সিডি-তে কোনও রহস্য লুকিয়ে কি না, তা এখনও অজানা। কলকাতার কেন্দ্রীয় ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে ওই নথিগুলি পাঠানো হয়েছে। ন’মাসেও তার রিপোর্ট না আসায় তদন্ত পুরোপুরি গুটিয়ে দিতে পারছে না কলকাতা পুলিশ।
কেন পুলিশ ওই সব নথিপত্র আটক করেছে, জানতে চাইছেন আমরি কর্তারাও। আলিপুরের মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এ নিয়ে আর্জিও জানিয়েছেন তাঁরা। রিপোর্ট না এলে পোড়া ভবনের সংস্কারও শুরু হবে না। ওই কম্পিউটার, হার্ড ডিস্ক, সিডি-তে কী তথ্য আছে, জানেন না তদন্তকারীরা। তাঁদের একাংশের ধারণা, রোগী চিকিৎসা অথবা হাসপাতাল পরিচালন সংক্রান্ত তথ্য মিলতে পারে। দ্বিতীয় অংশই তাঁদের কাজে লাগবে বলে মত তদন্তকারীদের।
এত দিন পরেও ফরেন্সিক ল্যাবরেটরি রিপোর্ট দিল না কেন? সংস্থার অধিকর্তা চন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য বলেন, “পরীক্ষা প্রায় শেষ পর্যায়ে। এ মাসের মধ্যেই ওই রিপোর্ট দেওয়া সম্ভব বলে মনে হচ্ছে। কম্পিউটারগুলি থেকে তথ্য উদ্ধারের পদ্ধতি কিছুটা জটিল হওয়ায় সময় লাগছে।” তবে তাতে কী রহস্য লুকোনো আছে, তা সিল করা খামে আদালতে জমা দেওয়া হবে বলে জানান ফরেন্সিক কর্তারা। সরকারি আইনজীবী শক্তি ভট্টাচার্য বলেন, “আদালত নির্দেশ দিলে ফরেন্সিক রিপোর্টের প্রতিলিপি আমরি-কর্তাদের দেওয়া হবে।”
আমরি-কাণ্ডে গত মার্চে ১৬ জন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ করে গোয়েন্দা পুলিশ। ১৩০০ পাতার চার্জশিটে অন্তত ৪৫৫ জন সাক্ষীর নাম আছে। আদালত সূত্রে খবর, যে সব ধারা অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আরোপ করা হয়েছে (অনিচ্ছাকৃত খুন, অনিচ্ছাকৃত খুনের চেষ্টা, দুর্ঘটনা ঘটতে পারে জেনেও গাফিলতি), তা দায়রা আদালতের বিচার্য। ফরেন্সিক রিপোর্ট পেলে দায়রা আদালতে আমরি-মামলার বিচার শুরু হবে।
আমরির বোর্ড অফ ডিরেক্টর্সের ১৫ জন সদস্যের মধ্যে ১২ জনের নাম ছিল চার্জশিটে। অন্য তিন সদস্য রাজ্য সরকারের প্রতিনিধি। তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগই আনেনি পুলিশ। তদন্তকারীদের ব্যাখ্যা, আমরির দৈনন্দিন ব্যাপারে সরকারি প্রতিনিধিদের ভূমিকা না থাকায় তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়নি। ১৬ জন অভিযুক্তের মধ্যে ১৩ জনকে পুলিশ গ্রেফতার করে। পরে তাঁরা আলিপুর আদালত এবং হাইকোর্ট থেকে জামিন পান। অন্য ৩ জন দীর্ঘদিন ফেরার থাকার পরে আগাম জামিন নেন।
তদন্ত চলাকালীন বারবারই বিতর্ক তৈরি হয়েছে। অকারণে হাসপাতাল-কর্তাদের জেলে আটকে রাখা হয়েছে, এই অভিযোগ তোলেন অভিযুক্তদের আইনজীবীরা। জেরার সময়ে আমরি-কর্তাদের উপর মানসিক নির্যাতনের নালিশও জানানো হয়। পুলিশের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে ফিকি। নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর লোকেদের গ্রেফতার করা নিয়ে দেশের শিল্পপতিদের কাছে ভুল বার্তা যাচ্ছে বলে তারা মন্তব্য করে। ৯৩ বছরের চিকিৎসক মণি ছেত্রীর গ্রেফতার নিয়েও চিকিৎসক মহল বিভক্ত হয়ে যায়। তাঁকে জামিন দেওয়ার জন্য চাপ আসছিল বিভিন্ন মহল থেকে। শেষ পর্যন্ত অবশ্য অভিযুক্তেরা সবাই-ই জামিন পেয়ে গিয়েছেন।
|
যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ |
অভিযুক্ত |
পদ |
কবে গ্রেফতার |
কবে জামিন |
শ্রবণ তোদি |
ডিরেক্টর (চেয়ারম্যান, শ্রাচী) |
৯/১২/২০১১ |
১২/০৪/২০১২ |
রাধেশ্যাম গোয়েন্কা |
ডিরেক্টর (চেয়ারম্যান, ইমামি) |
৯/১২/২০১১ |
২৮/০৩/২০১২ |
রবি তোদি |
ডিরেক্টর |
৯/১২/২০১১ |
২/০৪/২০১২ |
রাধেশ্যাম অগ্রবাল |
ডিরেক্টর |
৯/১২/২০১১ |
১৭/০২/২০১২ |
দয়ানন্দ অগ্রবাল |
ডিরেক্টর, আর্থিক উপদেষ্টা |
৯/১২/২০১১ |
১০/০৪/২০১২ |
মণীশ গোয়েন্কা |
ডিরেক্টর |
১০/১২/২০১১ |
২/০৪/২০১২ |
প্রশান্ত গোয়েন্কা |
ডিরেক্টর |
১০/১২/২০১১ |
২৮/০৩/২০১২ |
সঞ্জীব পাল |
জেনারেল ম্যানেজার (রক্ষণাবেক্ষণ) |
১২/১২/২০১১ |
১০/০৪/২০১২ |
সত্যব্রত উপাধ্যায় |
ভাইস প্রেসিডেন্ট (রক্ষণাবেক্ষণ) |
১২/০১/২০১২ |
১৬/০৩/২০১২ |
পৃথা বন্দ্যোপাধ্যায় |
ভাইস প্রেসিডেন্ট (প্রশাসন) |
২৩/০১/২০১২ |
২/০৪/২০১২ |
সাজিদ হোসেন |
নাইট অ্যাডমিনিস্ট্রেটর |
২৩/০১/২০১২ |
৪/০৫/২০১২ |
মণি ছেত্রী |
ম্যানেজিং ডিরেক্টর, আমরি |
২৭/০১/২০১২ |
২/০২/২০১২ |
প্রণব দাশগুপ্ত |
ম্যানেজিং কমিটির সদস্য |
২৭/০১/২০১২ |
২৩/০২/২০১২ |
প্রীতি সুরেখা |
ডিরেক্টর |
গ্রেফতার হননি |
১৮/০৫/২০১২ (আগাম) |
আদিত্যবর্ধন অগ্রবাল |
ডিরেক্টর |
গ্রেফতার হননি |
২/০৭/২০১২ (আগাম) |
রাহুল তোদি |
ডিরেক্টর |
গ্রেফতার হননি |
২/০৭/২০১২ (আগাম) |
|
|
|
|
|
|