পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূলকে ধাক্কা দিতে পাঁচটি জেলাকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে সিপিএম। জেলাগুলি হচ্ছে উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, নদিয়া, পুরুলিয়া ও বীরভূম।
আলিমুদ্দিন মনে করছে, ওই পাঁচ জেলায় সর্বশক্তি নিয়ে ঝাঁপাতে পারলে কয়েকটি জেলা পরিষদ বামফ্রন্ট জিততে পারে। রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের কথায়, “বিধানসভায় বিপর্যয়ের পরে যে জেলাগুলিতে সাংগঠনিক ভাবে কিছুটা শক্তি অর্জন করতে পেরেছি, পাশপাশি বাম-বিরোধী ভোট ভাগ হচ্ছে, সেখানেই বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।” হলদিয়া পুরভোটে জেতা এবং এবিজি বিতাড়ন-কাণ্ডের পরে পূর্ব মেদিনীপুর সম্পর্কেও দলের একাংশ আশাবাদী। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ‘সন্ত্রাস’ উপেক্ষা করে সেখানে কত আসনে বামেরা প্রার্থী দিতে পারবে, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া ওই পাঁচ জেলায় কমবেশি কংগ্রেসের শক্তি আছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনা বাদে অন্যত্র কংগ্রেসের বিধায়কও আছে। দুই ২৪ পরগনা ও নদিয়ার কর্মিসভায় সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু বলেছেন, ‘তৃণমূলের রামধনু জোট ভেঙে গিয়েছে। সেই সুযোগ নিতে হবে।’ ওই পাঁচ জেলার গ্রামীণ এলাকায় তফসিলি জাতি, উপজাতি ও মুসলিম ভোটের প্রাধান্য বেশি। বস্তুত, এক দিকে, বাম-বিরোধী ভোটের বিভাজন, অন্য দিকে সামাজিক ভাবে পিছিয়ে পড়া মানুষের ক্ষোভকে কাজে লাগাতে চায় সিপিএম। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের কথায়, “তৃণমূলের উপরে আশা করে ভোট দিলেও সমাজের এই অংশের মানুষ গত দেড় বছরে সবচেয়ে বেশি উপেক্ষিত হয়েছেন।” প্রচারের বিষয়টি নিজে দেখছেন বিমানবাবু। তফসিলি নেতা কান্তি বিশ্বাস ও বোলপুরের সাংসদ রামচন্দ্র ডোমকেও দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
বিধানসভা নির্বাচনে পুরুলিয়া জেলায় বামেরা কংগ্রেস-তৃণমূল জোটের থেকে ৫টি আসন কম পেলেও ভোট কম পেয়েছিল মাত্র ১%। তখন কিষেণজির নেতৃত্বে মাওবাদীরাও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে মুখ্যমন্ত্রী পদে বসাতে তৎপর ছিল। এখন পরিস্থিতি ভিন্ন। আবার বীরভূম জেলায় কংগ্রেসকে সঙ্গে নিয়ে গ্রামীণ এলাকায় বামেদের থেকে তৃণমূল জোট মাত্র ২% ভোটে এগিয়ে ছিল। এ বার কংগ্রেস তৃণমূলের বিরুদ্ধে। বিজেপির ভোটও বাড়বে। এই হিসাব মাথায় রেখে এগোচ্ছে সিপিএম।
আলিমুদ্দিন আরও মনে করছে, নদিয়া ও উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাট মহকুমায় বাম-বিরোধী ভোটে ভাল ভাগ বসাবে কংগ্রেস। দুই জেলায় বিজেপি-ও তৃণমূলের ভোট কাটবে। তেহট্টের ঘটনার পরে সেই প্রবণতা আরও বেড়েছে। উত্তর ২৪ পরগনার জেলা সম্পাদক গৌতম দেবের কথায়, “মমতা যদি লোকসভা-বিধানসভার সঙ্গে পঞ্চায়েতে ভোটের হিসাব কষতে যান, বিরাট ভুল করবেন। আমরা জয়ের লক্ষ্যেই কর্মীদের প্রত্যেক বাড়ি যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছি।”
দক্ষিণ ২৪ পরগনায় গত পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূলের জোটসঙ্গী এসইউসি এ বার তৃণমূলের বিরুদ্ধে প্রার্থী দেবে। কংগ্রেসেরও নিজস্ব ভোট রয়েছে ৬%-৭%। বিভিন্ন সরকারি প্রকল্প ঘিরে তৃণমূল পরিচালিত জেলা পরিষদের বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভ রয়েছে। আয়লা বিধ্বস্ত এলাকায় ত্রাণ ও পুনর্গঠনের কাজ নিয়েও অনেকে ক্ষুব্ধ। এত গুলি ‘ফ্যাক্টর’কে কাজে লাগিয়েই জেতার কথা ভাবছে সিপিএম। বিধায়ক রেজ্জাক মোল্লা যতই আলিমুদ্দিনের নেতাদের বিরুদ্ধে কথা বলুন, তাঁকে বুঝিয়ে পঞ্চায়েত ভোটের কাজে লাগানোর জন্য সচেষ্ট হয়েছেন জেলা সম্পাদক সুজন চক্রবর্তী। বিমানবাবুর নির্দেশে বাসন্তী, গোসাবায় ৩৪ বছর ধরে চলা আরএসপির সঙ্গে বিবাদ মিটিয়ে নিতে তৎপর জেলা সিপিএম।
বিধানসভা ভোটের ফল মাথায় রেখেই কিন্তু মমতা-সহ তৃণমূল নেতৃত্ব ভাবছেন, দক্ষিণবঙ্গের সব ক’টি জেলা পরিষদ তাঁরাই জিতবেন। তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আগে ভোটে এক দিকে সিপিএম থাকত। অন্য দিকে সকলে। বিরোধী ভোট ভাগের সুযোগ নিয়ে সিপিএম জিতত। এখন এক দিকে তৃণমূল। অন্য দিকে বাকিরা। বিরোধী ভোট ভাগ হলে তৃণমূলেরই সুবিধা।” তাঁর দাবি লোকসভা, বিধানসভার মতো এ বারও আলিমুদ্দিনের হিসাব মিলবে না।
তবে ১৯৭৮ সাল থেকে এক টানা বামেদের দখলে থাকা বর্ধমান, হুগলি, পশ্চিম মেদিনীপুর, হাওড়া ও বাঁকুড়া জেলা যে এ বার দখলে রাখা কঠিন হবে, আলিমুদ্দিনের নেতারা তা এখনই বুঝেছেন। যদিও সিপিএমের বাঁকুড়া জেলা সম্পাদক অমিয় পাত্র ও বর্ধমান জেলা সম্পাদক অমল হালদারের দাবি, তৃণমূলের ‘সন্ত্রাস’ রুখতে পারলে এই দুই জেলাতেও জেলা পরিষদ জেতা সম্ভব। যে পাঁচ জেলায় বিশেষ
গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে, সেখানে ‘সন্ত্রাস’ উপেক্ষা করেও বামেরা প্রার্থী দিতে পারবে বলে জেলার নেতারা আলিমুদ্দিনকে জানিয়েছেন।
|
সূর্য ওঠার আগে দিন শুরুর ডাক বিমানের |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
সূর্য ওঠার আগে পার্টি কর্মীদের দিন শুরুর পরামর্শ দিলেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু। আর তা করতে গিয়ে তিনি রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘের উদাহরণ টেনে আনলেন। শুক্রবার নজরুল মঞ্চের কর্মিসভায় বিমানবাবু বলেন, “আরএসএসের কর্মীরা ভোর সাড়ে চারটের সময়ে উঠে শাখার কাজে যোগ দিতে যায়। আর সিপিএমের কর্মীরা সকাল ৭টার সময়ে ঘুম থেকে ওঠে।” বিমানবাবু নিজে ঘুম থেকে ওঠেন ভোর পাঁচটায়। কর্মীদের হিন্দু মৌলবাদী শক্তি সম্পর্কে সতর্ক করার পাশপাশি বিমানবাবু বলেন, “শিঙে ফুঁকে দল করলে হবে না। উত্তর ২৪ পরগনা, বীরভূম-সহ বিভিন্ন জেলায় বিশাল জমায়েত হচ্ছে। কিন্তু কলকাতা জেলার বেশির ভাগ কর্মী এখনও গা-ঝাড়া দিয়ে উঠতে পারেনি।” |