মার্গ সঙ্গীতের বিশিষ্ট কণ্ঠশিল্পী মানস চক্রবর্তী সত্তরে উপনীত। এবং তাঁরই সত্তরতম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে মহা সমারোহে উদযাপিত হল ‘সাত দশক তবু বসন্ত’ পারম্পরিকের প্রয়াসে সায়েন্স সিটিতে। শুরুতেই কোটলি ঘরানার শিষ্য প্রশিষ্যদের উপস্থাপনা গুরু সংহিতা। যার রচয়িতা স্বয়ং মানস। সূচনায় একের পর এক রাগ ভৈরব, ভৈরবী, বিভাস, দেশী, বৃন্দাবনী সারং, ধানী, পূর্বি, ইমন, বেহাগ, রূপমঞ্জরী, মল্লার ও কাফিতে আশ্রিত ধ্রুপদ-বন্দিশ-খেয়াল-চতুরঙ্গ, সর্বোপরি একটি ভজন পরিবেশিত হয়। অনুষ্ঠানটিতে উল্লেখযোগ্য প্রতিভার স্বাক্ষর রাখেন সোমা চক্রবর্তী, সাহানা মজুমদার, মৌপালী চৌধুরী, পুলহ সরকার, দীপঙ্কর ভাস্কর, শুভাশিস মুখোপাধ্যায়, বিভাস সাংহাই, বিপ্লব ভট্টাচার্য, অনির্বাণ চক্রবর্তী। গুরু সংহিতায় মঞ্চ পরিচালনায় ছিলেন রুচিরা পাণ্ডা। এক দীর্ঘ বিরতির পর মঞ্চে উপবিষ্ট হলেন শিবকুমার শর্মা। নির্বাচিত রাগ ইমন। আলাপ, জোড়, মও তাল ও ত্রিতালে গত। অপূর্ব স্বরসঙ্গতি ও ছন্দোময় গায়কীর ধারায় ইমন উন্মোচিত হয়। পরবর্তী নিবেদন ভিন্ন ষড়জে একটি ধুন। যোগ্য সহযোগিতায় যোগেশ সামসি বিবিধ ও সাথ সঙ্গতের সুন্দর স্বাক্ষর রাখেন। |
দ্বিতীয় পর্যায়ের শুরুতেই সংবর্ধনা ও শ্রদ্ধাজ্ঞাপন অনুষ্ঠান। সাত দশকের এখনও বসন্তের মননে সৃষ্টিশীল মানস চক্রবর্তীকে এই দিন সম্মান ও শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন প্রখ্যাত বিরজু মহারাজ, শিবকুমার শর্মা, যোগেন চৌধুরী, অজয় চক্রবর্তী, অরুণ ভাদুড়ি, দীননাথ মিশ্র, আনন্দগোপাল বন্দ্যোপাধ্যায় সহ বিশিষ্ট গুণিজন ও বিভিন্ন সঙ্গীত সংস্থা। এর পর সঙ্গীত পরিবেশনে উপবিষ্ট হলেন সপ্তদশ বর্ষের স্বচ্ছ উদযাপনের রাগিণী বিহঙ্গিনীর উপচার নিয়ে মানস। বিলম্বিত ঝাঁপতালে ধরলেন ‘কাহে যো মুখ মোড় মোড় কে’, তালের সম থেকে মুখড়া সাজিয়ে। বিভিন্ন স্বরসঙ্গতির উপস্থাপনায় কখনও বেহাগ, কখনও আনন্দী কল্যাণ উঁকিঝুঁকি দিলেও এক অন্য রস ও রাগরূপের স্বাতন্ত্র্য নিয়ে মূর্ত হয়ে উঠল বিহঙ্গিনী। রাগ রূপায়ণে শুদ্ধ মধ্যমের ন্যাস ও শেষে পা মা গারে সা অভাবনীয় বিরতিতে সুরমাধুর্য সৃষ্টি করেন শিল্পী। এর পর আর একটি বন্দিশ শুনিয়ে মানস ‘মিশ্র মান্ড’-এ একটি রাজস্থানি ফাগ পরিবেশন করেন। তবলায় ছিলেন সমর সাহা ও হারমোনিয়ামে রঞ্জন মুখোপাধ্যায়। দু’জনেই সমান কুশলতায় যোগ্য সঙ্গতে অনুষ্ঠানটি পরিপূর্ণ করে তোলেন। ওই দিনের শেষ শিল্পী বিরজু মহারাজ ও শাশ্বতী সেন এই দিনের মুখ্য আকর্ষণ। সূচনায় বরঞ্চ ছবি শ্যামসুন্দর কৃষ্ণ সৌন্দর্যে দৃপ্ত ও নান্দনিকতায় মূর্ত হয়ে উঠল। এই বয়সেও হার মানিয়ে দেন বিরজু মহারাজ দেহসৌষ্ঠব, হস্তমুদ্রা ও পায়ের কাজ, নানা গিনতি, তেহাই ও বিখ্যাত ‘কুক্কু’ বোল যখন জীবন্ত হয়ে ওঠে তাঁর পরিবেশনায়। পরবর্তী নিবেদন ‘যানে দে মৈকা’। একা একাই অন্তরা গেয়ে ও নৃত্যায়িত করে নায়িকার অভিব্যক্তি ফুটিয়ে তুললেন। পরবর্তী সময়ে শিষ্যা শাশ্বতী সেন নিবেদন করলেন মহারাজজির পবনের নানা রূপ সাবলীল দক্ষতায়। তবলা সহযোগিতায় শুভঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় মহারাজ ও শ্রোতাদের তৃপ্ত করে তারিফ আদায় করেন। দেবাশিস বসুর সঞ্চালনা সুখদায়ক। |