|
আপনার সাহায্যে... |
|
এই বেশ স্ট্রেস নেই |
কী করে তা সম্ভব? এই প্রসঙ্গে আধ ডজন ভীষণ সফল এবং ভীষণ ব্যস্ত
মানুষ হদিশ দিলেন কী করে লড়াই করবেন। শুনলেন সংযুক্তা বসু |
কাজ থাকলেই থাকবে বাড়তি চাপ। থাকবে স্ট্রেস। থাকবে তা থেকে মুক্তির উপায়ও। একটু ভেবে চিন্তে কাজ করলেই হল। |
|
|
|
রবিবার বাড়িতে
রান্নাবান্না করি
ডাঃ মৃন্ময় নন্দী
শল্য চিকিৎসক |
|
আমার স্ট্রেস |
সার্জারিতে প্রতিটি কেসই স্ট্রেসফুল। বিজ্ঞানে ‘ল অফ প্রব্যাবিলিটি’ বলে একটা ব্যাপার আছে। দুজন রুগির জ্বর। তাঁদের একই ওষুধ দিলাম। ওষুধের ফল কিন্তু একই রকম নাও হতে পারে। তখনই স্ট্রেসের শুরু। কোনও কোনও সময় সমস্ত চিকিৎসা ঠিক করার পরও দেখা গেল রুগির অবস্থা খারাপ হয়ে গেল। কখনও রুগির মুখের ওপর নিজের অক্ষমতার কথাও বলতে হয়। তখন ডাক্তার হিসেবে যে কত কষ্ট পাই বলে বোঝাতে পারব না। এও খুব স্ট্রেস। |
আমার মুক্তি |
পনেরো কুড়ি মিনিট ধ্যান করি। প্রাণায়াম করি আরও পনেরো মিনিট। জটিল কেস হলে সহকর্মী ডাক্তারদের সঙ্গে আলোচনা করি। সব থেকে মানসিক চাপ হয় কোনও রুগির অপ্রত্যাশিত মৃত্যু হলে। তখন বেশি করে কাজে ডুবে যাই।
রবিবার রান্নাবান্না করি। স্ট্রেস থেকে পালাবার জন্য কখনও মোবাইল বন্ধ করি না। কারণ কোন রুগির কখন খারাপ আবস্থা হল সেটা না জানলে আরও স্ট্রেস বাড়বে। আমার বাবা, স্ত্রী, ছেলে, মেয়ে সকলেই ডাক্তার। তারা বোঝে। মানিয়ে নেয়। এমনও হয়েছে মেয়ের জন্মদিনে লোকজন নেমন্তন্ন করে নিজেই হাজির থাকতে পারিনি। এমন পরিস্থিতির মধ্যেও স্ট্রেস আছে। |
টোটকা |
১)ডাক্তারিতে অন্তর্দ্বন্দ্ব আসবেই। যুক্তি দিয়ে অনেক কিছুর ব্যাখ্যা মিলবে না। সেটা মানতে হবে।
২) নিজস্ব হবির চর্চায় স্ট্রেস কমে।
৩) কাজই সবচেয়ে বড় আশ্রয়। কাজ যেমন স্ট্রেস দেয়, স্ট্রেস কাটায়ও। |
|
|
|
বউয়ের সঙ্গে রাতে
বসে দুটো সিরিয়াল দেখি
সঞ্জীব গোয়েন্কা
শিল্পপতি |
|
আমার স্ট্রেস |
অনেকগুলো কোম্পানি নিয়ে ব্যবসা। তার মধ্যে সিইএসসি বিরাট ব্যাপার। চব্বিশ ঘণ্টা প্রত্যেকটা বাড়িতে বিদ্যুৎ পৌঁছোনো নিয়ে খুবই উৎকণ্ঠায় থাকি। তার পর স্কুলের বা বোর্ডের পরীক্ষা চলার সময় বা কোনও বড় ফুটবল টুর্নামেন্ট থাকলে, বিদ্যুৎ সংযোগ যাতে ঠিক থাকে তা নিয়ে আরেক রকম স্ট্রেস। এ ছাড়াও আছে ব্যক্তিগত জীবনের স্ট্রেস। |
আমার মুক্তি |
কাজের স্ট্রেসের মোকাবিলা করতে সিনিয়র কলিগদের সঙ্গে কথা বলি। সকালবেলায় ঘরে সাউন্ড সিস্টেমে বৈদিক মন্ত্র চলে। তাতে মনে এক ধরনের সাহস, নিরাপত্তা বোধ তৈরি হয়। অফিসেও সাউন্ড সিস্টেমে গায়ত্রী মন্ত্র চলে। যোগাসন করি। স্ত্রী প্রীতি-ও এই ধরনের সমস্যায় দারুণ সাহায্য করে। ও স্পঞ্জের মতো আমার দুশ্চিন্তাগুলো শুষে নেয়। স্ট্রেস থেকে বেরতে পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোটা খুব দরকারি। রাতের খাওয়াটা একসঙ্গে খাই। আমার বউ খুব হিন্দি সিরিয়ালের ভক্ত। ওর সঙ্গে রাতে বসে দুটো সিরিয়াল দেখি। |
টোটকা |
১) প্রিয়জনের সঙ্গে শুধু দুশ্চিন্তা নয়, আনন্দও ভাগ করে নিন।
২) বাড়িতে ছোটখাটো অনুষ্ঠান করে আনন্দ তৈরি করে নিন।
৩) স্ট্রেস কমাতে হলে সিনেমা দেখুন। সিরিয়ালও দেখতে পারেন। |
|
|
|
যুদ্ধ করতে হবে,
তবে স্ট্রেস কমবে
চিন্ময় গুহ
প্রাক্তন উপাচার্য, রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় |
|
আমার স্ট্রেস |
প্রতিদিন খবরের কাগজের পাতা খুলে নানা অসামাজিক ঘটনার বর্ণনা পড়ে যে কোনও শিক্ষিত অনুভূতিশীল মানুষের স্নায়বিক চাপ হয়। হয়তো এগুলোর সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত জীবনের কোনও যোগাযোগ নেই। কিন্তু আমি, আমার পরিবার এই সমাজের অংশ। এ প্রসঙ্গে একটা ঘটনা বলি, রবীন্দ্রভারতীর সমস্ত বিভাগীয় প্রধানদের সঙ্গে আলোচনা করে আমি অনলাইন ভর্তির ব্যবস্থা চালু করি। ভর্তি নিয়ে দুর্নীতি দূর করার জন্যই এই ব্যবস্থাটা নেওয়া। এতে অধিকাংশই সাধুবাদ জানায়। কারও কারও বিরাগভাজন হই। কয়েকজন উদ্ধত ছেলে এসে অফিসে ভাঙচুর করে। সেও এক ধরনের স্ট্রেস। |
আমার মুক্তি |
যেহেতু আমি ভিমরুলের চাকে হাত দিয়েছি প্রবল সমস্যা হতই। দমে যাইনি। ওই রকম তুলকালাম মুহূর্তে মনে পড়ে গেল রবীন্দ্রনাথের কথা। উনি লিখছেন, ‘‘দৃশ্যমান গুঁড়ি যতটা মাটি জুড়ে থাকে, তার অদৃশ্য শিকড় তার চেয়ে অনেক বেশি মাটি অধিকার করে থাকে বলেই গাছটা রসের যোগান পায়।’’ আমাদের কাজও গাছের মতো। স্ট্রেস হলেই আমি আমার লক্ষ্য আর আদর্শের কথা ভাবি। বিশ্বাস করি যুদ্ধক্ষেত্রে যাঁরা আছেন তাঁদের স্ট্রেস, যুদ্ধক্ষেত্র থেকে যাঁরা পালিয়ে যান, তাঁদের চেয়ে কম। আমার ক্ষেত্রে স্ট্রেস কাটানোর একটা ব্যক্তিগত উপায় আছে। ফরাসি সাহিত্য। ২০০৩ সাল থেকে ২০১২-র গোড়া পর্যন্ত ‘দেশ’ পত্রিকায় গ্রন্থ সমালোচনা বিভাগে সম্পাদনার কাজ করেছি। সেটা ছিল স্ট্রেস কাটানোর অপূর্ব সুযোগ। |
টোটকা |
১) আত্মকেন্দ্রিকতা ছাপিয়ে গিয়ে অন্যের কথা ভাবলে স্ট্রেস কমে
২) সবার ক্ষেত্রে বিদ্যা ও জ্ঞানের জগতের পরিধি বড় নাও হতে পারে। গান শুনেও আনন্দ পাওয়া যায়।
৩) স্ট্রেস মানে যুদ্ধক্ষেত্র। যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালালে স্ট্রেস বাড়ে। |
|
|
|
আধ ঘণ্টা স্কোয়াশ
কিংবা টেনিস খেলি
রণজিৎ কুমার পচনন্দা
পুলিশ কমিশনার, কলকাতা |
|
আমার স্ট্রেস |
দিনরাত এত ব্যস্ত থাকি যে নিজের স্ট্রেস নিয়ে ভাবনার সময় নেই। বাড়ির লোকজনও এই পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছে। যা কিছু ভাবি, চিন্তা করি তা কলকাতার পুলিশবাহিনীর জন্য। তাঁরা যাতে ভাল থাকেন। পুলিশের উল্টোপাল্টা সময়ে ডিউটির সময় নির্ধারিত হয়। সে এক ঝকমারি। |
আমার মুক্তি |
আমরা একটা পরিবারের গুরুদায়িত্বে আছি। সেজন্য পুলিশবাহিনীর উন্নতির জন্য আমাদের কিছু পদক্ষেপ করতে হয়েছে। সেটা আমাদের স্ট্রেস রিলিফ। যেমন প্রত্যেক ইউনিটের একটা করে সৈনিক সভা চালু করেছি। ডেপুটি কমিশনার, অ্যাসিসট্যান্ট পুলিশ কমিশনার সেই সৈনিক সভায় পুলিশদের সমস্যা শোনেন। সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেন। প্রত্যেক দিন সকালে শরীর তরতাজা রাখার জন আধঘণ্টা স্কোয়াশ কিংবা টেনিস খেলি। সপ্তাহে দু’ দিন যোগব্যায়াম করি। |
টোটকা |
১) পরিশ্রম করলে স্ট্রেস থাকবে না।
২) কোনও খেলা বা যোগব্যায়াম রোজকার রুটিনে থাকা চাই।
৩) ‘পজিটিভ’ চিন্তা ভাবনা করলে স্ট্রেস অনেকটা কমে। |
|
|
|
হোমওয়ার্ক করা
থাকলে স্ট্রেস কম হয়
সর্বেশ গুপ্তা
পাইলট |
|
আমার স্ট্রেস |
সুনামির সময় আমাকে পোর্ট ব্লেয়ারে ল্যান্ড করতে হয়েছিল। চারিদিকে কোনও লোক নেই, বিমানবন্দর প্রায় খালি। তখন শুধু মাথা ঠান্ডা রেখে, সমস্ত আবেগ দূরে সরিয়ে রেখে যন্ত্রের মতো কাজ করে গিয়েছি। এই যে এত বড় একটা মেশিন চালাই সেটা কম স্ট্রেস! এ ছাড়া জেটল্যাগের সমস্যা, প্লেন ল্যান্ডিং করা, প্লেন টেক অফ করার প্রতিটি মুহূর্তও খুব কঠিন। |
আমার মুক্তি |
পাইলটের জীবনে স্ট্রেস থাকবেই। অবশ্য কিছু জিনিস আছে, যেগুলো নিজের কন্ট্রোলে রাখা যায়। যেমন, যেদিন উড়ব, তার আগের দিনের রাতের রুটিন। আবহাওয়া কেমন থাকবে, সঙ্গে যে ট্রেনি পাইলট থাকবেন, তাঁকে কী ট্রেনিং দেব, এগুলো আগের দিন রাতে ঠিক করা থাকলে শান্ত মনে ককপিটে বসা যায়। ফ্লাইটের পর যে পনেরো ঘণ্টা ছুটি পাই, সেটাকে ভালভাবে ব্যবহার করি। এই সময়টা বিশ্রাম নেওয়ার পাশাপাশি অনেকটা সময় ছেলেদের সঙ্গে কাটাই। |
টোটকা |
১) টাইম ম্যানেজমেন্ট ঠিক থাকলে স্ট্রেস কমে।
২) যত মিথ্যে কম বলা যায় ততই স্বাস্থ্যকর।
৩) যে পরিস্থিতিই আসুক খুশিতে থাকার চেষ্টা করলে স্ট্রেস থেকে দূরে থাকা যায়। |
|
|
|
সুইচ অন সুইচ অফের
নিয়মটায় অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছি
শতাব্দী রায়
অভিনেত্রী |
|
আমার স্ট্রেস |
রাজনীতি, অভিনয়, সিনেমা পরিচালনা, লেখালেখি অনেক রকম কাজ করি তো। খুব ব্যালান্স করে কাজের পরিকল্পনা করলেও মাঝে মাঝে সব যেন জড়িয়ে গিয়ে অস্থির লাগে। ডিসিপ্লিন নষ্ট হলে স্ট্রেস সাংঘাতিক হয়ে দাঁড়ায়। তখন বুঝতে পারি কবিতা লিখতে পারছি না বলে মনের মধ্যে ঝড় বইছে। পার্লামেন্টে কথা বলাতেও স্ট্রেস আছে। চারটে বাংলা ছবি বানিয়েছি, ভাল চলেনি। তার জন্যও স্ট্রেস হয়েছে। |
আমার মুক্তি |
ছবি না চলায় যে স্ট্রেস হয়েছে তা পরের কোনও আনন্দের কাজে ভুলে গিয়েছি। ভেবেছি পরের বার আরও ভাল ছবি বানাবার চেষ্টা করব। একটা বড় ব্যাপার হল আমাকে দশটা-পাঁচটা অফিসের একঘেয়ে কাজগুলো করতে হয় না। পার্লামেন্টে কথা বলতে গিয়ে স্ট্রেস হয় ঠিকই, কিন্তু বক্তব্য সম্পর্কে যদি খুব ভাল ভাবে ওয়াকিবহাল থাকি তখন কথা বলে স্পিকারের প্রশংসা পেয়েছি এমনও হয়েছে। তখন স্ট্রেস হাওয়া। আনন্দে ভরে যায় মন।
তা-ও মনে খুব চাপ থাকলে একান্ত প্রিয় বন্ধুর সঙ্গে কথা বলে মন হালকা করি।
নানা রকমের কাজ একসঙ্গে যে করতে পারি তার কারণ সুইচ অন সুইচ অফের নিয়মটায় ভাল অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছি। এক কথায় আমি খুব কুল। ছেলের সঙ্গে সময় কাটালে স্ট্রেস কাটে। কেবলমাত্র ওর সঙ্গে রাতটুকু কাটাব বলে পার্লামেন্টে অধিবেশন চলাকালীন এক দিন অন্তর দিল্লি-কলকাতা করি। |
টোটকা |
১) উচ্চাকাঙ্ক্ষী হলেও পা যেন মাটিতে থাকে। না হলে স্ট্রেস হবে। স্ট্রেস থেকে আসবে অবসাদ।
২) যদি স্ট্রেস হয় ভাবতে হবে জীবন একটাই। খারাপ সময় কেটে ভাল সময় আসবেই। সুতরাং খারাপ সময়টা চুপ থেকে কাটিয়ে দাও ভাই।
৩) যদি খুব স্ট্রেস হয় ডাক্তার দেখানো উচিত। সামান্য ওষুধবিষুধ খেলে ঠিক হয়ে যায়। |
|
|
|
|
বারাক ওবামা
(আমেরিকার প্রেসিডেন্ট)
স্ট্রেস মুক্ত হতে বারাক ওবামা ছুটি নিয়ে পরিবারের সঙ্গে বেড়াতে যান বিরল মনোরম দ্বীপে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল হাওয়াই দ্বীপ। আমেরিকার প্রেসিডেন্টের প্রিয় জায়গা। |
জে কে রাউলিং
(হ্যারি পটারের লেখিকা)
তীব্র মানসিক অবসাদের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছিল জে কে রাউলিংকে। তাঁর মতে স্ট্রেস কাটাবার মোক্ষম টোটকা হল গান, সৃজনশীল কাজ, যোগাসন। স্ট্রেস কাটাবার সব চেয়ে বড় উপায় হল হাসি। |
|
|
|
জনি ডেপ
(হলিউডের অভিনেতা)
ভীষণ স্ট্রেসে ও অনিশ্চয়তার মধ্যে কেটেছে তাঁর বয়ঃসন্ধিকাল। এখনও যখনই নিজেকে স্ট্রেস মুক্ত করতে চান, মন খুলে সারা গায়ে বিভিন্ন ট্যাটু করান। |
ম্যাডোনা
(গায়িকা)
স্ট্রেস মুক্ত হতে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করেন। |
|
|