|
|
|
|
|
|
|
ব্যাগ গুছিয়ে... |
হাঁসুলি বাঁকের টানে
এই সেই হাঁসুলি বাঁক যাকে নিয়ে তারাশঙ্করের বিখ্যাত ‘হাঁসুলি বাঁকের
উপকথা’। লাভপুরের মেন রোড থেকে দক্ষিণে নেমে গিয়েছে লালমাটির
রাস্তা, গাড়ি চলে হেলেদুলে।
লিখছেন অদিতি শাসমল |
|
মন্দির লাগোয়া একটি পুকুরও আছে। যদি দুর্গাপুজোর আশেপাশে গিয়ে পড়েন, দেখবেন সেটি শালুক ফুলে ঢেকে আছে। প্রতিষ্ঠা ফলক বলে মন্দিরটি ১৩০৮ বঙ্গাব্দে যাদবলাল বন্দ্যোপাধ্যায় তৈরি করেছিলেন। মন্দিরের অতিথিশালার কাজ প্রায় শেষ। ভবিষ্যতে লাভপুরে রাত্রিবাস করার জন্য উপযুক্ত ঠিকানা। মন্দির কমিটির সঙ্গে যোগাযোগ করে ব্যবস্থা করে নিতে পারবেন। পান্ডা নেই, তাই তাদের অত্যাচারও নেই। নির্বিঘ্নে পুজো দিতে পারেন আর ইচ্ছা থাকলে পেট পুরে ভোগও খেয়ে নিতে পারেন।
মন্দির ছেড়ে এগিয়ে গিয়ে একটি রাইস মিলের পাশের রাস্তা ধরে এগিয়ে গেলে পাবেন ছোটগল্পের মতো ছোট্ট লাভপুর স্টেশন।
|
|
আমেদপুর-কাটোয়া ন্যারোগেজ রেলপথে ছোট্ট রেলগাড়িটা এসে দাঁড়ায় এখানে। কিন্তু এই স্টেশনের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ সম্ভবত শতাব্দী-প্রাচীন বটগাছটি। বিশালাকার বৃক্ষটির অসংখ্য ঝুরি নেমে এসেছে, ছেয়ে ফেলেছে পুরো স্টেশনটিকে। তারাশঙ্করের সাহিত্যে একাধিক বার ঠাঁই পেয়েছে এই দৃশ্যপট।
স্টেশন ফেলে আর একটু এগিয়ে গিয়ে ডান দিকে রাস্তা চলে গিয়েছে তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্মস্থানের দিকে। প্রথমেই ডান পাশে পড়বে বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের বৈঠকখানা যা তারাশঙ্করের অনেক রচনার সাক্ষী। সেখান থেকে এগিয়ে গিয়ে বাঁয়ে ঘুরে চলে আসুন সেই ঘরে, যেখানে জন্মেছিলেন ওই সাহিত্যিক। দেওয়ালে ঝুলছে তাঁর শেষ বয়সে আঁকা ছবি, ন’বছর বয়সের রচনা, বংশলতিকা। বাইরে বন্দ্যোপাধ্যায়-পরিবারের মন্দিরের সারি আর দুর্গামন্দির। এখনও নিয়মিত পুজো হয় এখানে।
|
|
এ বার যেতে হবে রেললাইন পেরিয়ে, হাঁসুলি বাঁকের দিকে। এই সেই হাঁসুলি বাঁক যাকে নিয়ে তারাশঙ্করের বিখ্যাত ‘হাঁসুলি বাঁকের উপকথা’। লাভপুরের মেন রোড থেকে দক্ষিণে নেমে গিয়েছে লালমাটির রাস্তা, গাড়ি চলে হেলেদুলে। দু’পাশে তালগাছের সারি, ঘাসের জঙ্গল আর কাশফুলের ঝাড়। যেতে যেতে পথে পড়ে দু’টি গ্রাম, মাসতোলি আর পশ্চিম কাদিপুর। পথ শেষ হয় বাঁকের ধারে। কানে আসে শুধু জলের কুলকুল শব্দ, পাতা নড়ার শব্দ আর নানা চেনা-অচেনা পাখির ডাক। বক্রেশ্বর নদী একের পর এক বাঁক নিয়ে বয়ে চলেছে। কাশফুলের আড়াল থেকে কোপাই এসে মিশেছে তার সঙ্গে। তার পরে দু’জনে আবার হারিয়ে গিয়েছে কাশের বনে। ‘হাঁটুজল’ থাকে বছরের বেশির ভাগ সময়েই, পার হয়ে যায় গরু, বাছুর, মানুষ। শুধু বর্ষাতেই যত হাঁকডাক। সময় থাকলে অপেক্ষা করে যেতে পারেন সূর্যাস্ত পর্যন্ত, বাঁকের ওপর সূয্যিমামার পাটে যাওয়া দেখতে দেখতে মনে হবে, ‘আরও পেলাম, লাভের ওপর আরও একটু এক্সট্রা’।
চাইলে আরও আছে। বোলপুর-লাভপুর রাস্তায় পড়ে বিপ্রটিকুরি গ্রাম। চা-বিরতির জন্য দাঁড়িয়ে পড়ুন। আলুর চপ আর মুড়ি সহযোগে চা খাওয়া ছাড়াও দেখে নিতে পারবেন একগুচ্ছ মন্দির। এ রকম আরও কিছু মন্দির আছে পশ্চিম কাদিপুরে। আর হ্যাঁ, যেতে-আসতে পথে পড়বে ৫১ পীঠের আর এক পীঠ, কঙ্কালীতলা। তার গল্প তো শান্তিনিকেতন-বৃত্তান্তের সঙ্গে নিশ্চয়ই শুনেছেন অসংখ্য বার। সেখানেও এক বার মাথা ঠেকিয়ে
আসতে পারেন।
|
কখন যাবেন |
পুজোর পর থেকে পুরো শীতকাল সেরা সময়। |
কী ভাবে যাবেন |
ট্রেনে শান্তিনিকেতন। সেখান থেকে গাড়িতে। |
কোথায় থাকবেন |
শান্তিনিকেতনে অসংখ্য জায়গা। |
|
|
|
|
|
|
|